ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইপি ক্যামেরায় শিশু সন্তানকে গৃহকর্মীর নির্যাতনের দৃশ্যে তোলপাড়

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

আইপি ক্যামেরায় শিশু সন্তানকে গৃহকর্মীর নির্যাতনের দৃশ্যে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ক্যামেরায় দুই বছরের শিশু সন্তানকে গৃহকর্মী কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। মোবাইল ফোনে সন্তানকে নির্যাতনের দৃশ্য দেখে দ্রুত কর্মস্থল থেকে বাসায় গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করেন পিতা। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গৃহকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গৃহকর্মী নিজের ভুলের কথা স্বীকার করলেও শিশুকে নির্মম নির্যাতনের কোন কারণ ব্যাখ্যা করেননি। গত ১৪ নবেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহজাহানপুর থানাধীন মালিবাগ নিউ সার্কুলার রোডের ২৫০/১ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে শিশু নির্যাতনের আলোচিত ওই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাটি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফেসবুকে রীতিমতো ভাইরাল হয়। হৈচৈ পড়ে যায়। পরে শিশু আবদুল্লাহ আবতাই আয়াতের পিতা কম্পিউটার প্রকৌশলীা মোঃ আল আমিন সরকার বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গৃহকর্মী শাহিদাকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আবুল আনছার মামলাটি তদন্ত করছেন। শাহজাহানপুর থানার ওসি মোঃ শহীদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, শাহিদাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহিদা শিশুকে নির্মমভাবে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। তবে কি কারণে শিশুটির ওপর নির্যাতন করতেন, সে বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি। এ বিষয়ে মামলার বাদী আল আমিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, আমার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি। রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পাস করি। বর্তমানে বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া সেন্টারে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। আমার স্ত্রী মোছাঃ লুৎফুন্নেছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। সে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। স্ত্রীর বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে। ২০১৩ সালে আমাদের বিয়ে হয়। আমরা দু’জনই চাকরিজীবী। এজন্য আমাদের একমাত্র সন্তানকে দেখভাল করার জন্য একজন ভাল মহিলার খোঁজ করছিলাম। মাস দু’য়েক আগে আমার স্ত্রীর এলাকা থেকে শাহিদাকে আনি। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। এলাকায় ভদ্র হিসেবে সবাই জানে। আমরা তাকে চাচি বলে ডাকি। এক মাস মোটামুটি ভালভাবেই পার হয়। আমি সকালে অফিসে যাই। রাত দশটার দিকে ফিরি। মাঝে মধ্যেই স্ত্রী বলত শাহিদা চাচি আয়াতকে হয়ত মারধর করে। সে রকম আলামত পাওয়া যাচ্ছে। স্ত্রীর এমন কথায় আমি তেমন আমলে নিতাম না। চলতি মাসের প্রথম দিকে আমার স্ত্রী বাসায় আইপি ক্যামেরা লাগানোর জন্য চাপাচাপি শুরু করে। শেষ পর্যন্ত আমি চলতি মাসের ৭/৮ তারিখে বাসায় আইপি ক্যামেরা লাগাই। ক্যামেরার সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করি। যাতে যে কোন জায়গা থেকেই বাসার ভেতরে পরিস্থিতি দেখা যায়। গত ১৪ নবেম্বর অফিসে বসে মোবাইল ফোনে বাসার ভেতরের অবস্থা দেখার জন্য খুলি। দেখে আমি হতবাক। দেখা যায়, শাহিদা বাথরুম থেকে ঘরের ভেতর আমার ছেলেকে ছুঁড়ে ফেলে দিল। ফেলে দেয়ার পর পরই ওইটুকুন শিশুকে একের পর এক লাথি মারছিল। কাঁদতে কাঁদতে আমার ছেলে ফ্লোরে পড়ে যায়। এরপর ছেলে আমার কাঁদতে থাকে। শাহিদা চলে যায়। তখন আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল উড়াল দিয়ে বাসায় যাই। আমি দ্রুত বাসায় যাই। ছেলেকে উদ্ধার করি। আমি শাহিদাকে ছেলেকে মারধর করার বিষয়টি আমরা যে জানি, তা বুঝতে দেই না। কারণ শাহিদা ইতিপূর্বে কোনদিনই ঢাকায় থাকেনি। ঢাকার পথঘাট তার কিছুই চেনা জানা নেই। নির্যাতনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, হয়তো বাসা থেকে বেরিয়ে যেত। বেরিয়ে গেলে হারিয়ে যেত। তখন আবার আরেক ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এজন্য আমরা কিছুই না বলে পরদিন বিষয়টি শাহজাহানপুর থানাকে অবহিত করি। শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করি। মামলার একমাত্র আসামি করা হয় শাহিদাকে। পুলিশ শাহিদা গ্রেফতার করে ।
×