ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন শুরু

কোন চাপেই সরকার সরে আসবে না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

কোন চাপেই সরকার সরে আসবে না ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবহন মালিক শ্রমিকসহ কোন চাপেই নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের পথ থেকে সরকার সরে আসবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একইসঙ্গে এই আইন প্রয়োগে যেন অযথা বাড়াবাড়ি না হয় সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। তিনি যখন সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিং করছিলেন তখন বিভিন্ন জেলা থেকে খবর আসছিল সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন করায় আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত অন্তত ১০ জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। আরও অনেক জায়গায় পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেয়া হচ্ছে। ট্রাক চালকরা ধর্মঘটের ঘোষণা দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, এক নবেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হলেও সোমবার (১৮ নবেম্বর) থেকে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ আইন কাউকে শাস্তি দিতে নয়, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং দুর্ঘটনা কমাতে ব্যবহার করা হবে। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে সব মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এ আইন বাস্তবায়নে বিভিন্ন মহল আরও সময় চাচ্ছিল, তাদের সময় দেয়া হলো না কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ আইন আরও দেরিতে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ এসেছিল। সেই চাপ বিবেচনা করেই এই ১৫-১৬ দিন বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে আর সময় দেয়া যাবে না। আগের চেয়ে কঠোর সাজা রেখে করা নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি কাগজে-কলমে গত এক নবেম্বর থেকে কার্যকর হলেও আইন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে দুই সপ্তাহ সময় নেয়া হয়। রবিবার সেই সময় শেষ হওয়ার পর ওবায়দুল কাদের আইনটি কার্যকর হওয়ার কথা জানান। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন ধরনের চাপ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যত চাপই থাকুক আইনটি বাস্তবায়ন করতেই হবে, এটি পার্লামেন্টের আইন, বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়কের নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলার স্বার্থে সংশ্লিষ্টদের আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ করে তিনি বলেন, কোন প্রকার ধর্মঘট-বন্ধ এসব থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আইন প্রয়োগের সময় অযথা যেন বাড়াবাড়ি না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি সেটা জানি, তাদের সঙ্গে আমাদের সচিব আলোচনা করেছেন, আমিও কথা বলেছি, দেখেন না কি হয়। তাই বলে আইন প্রয়োগ না করে সরে যাব এটি কি আপনারা চান? আপনারাও আমাকে সহযোগিতা করুন, তারা তো চাপ দেবেই। তিনি বলেন, গতকাল (রবিবার) থেকে মাঠ পর্যায়ে (আইনটি) কার্যকর করা শুরু হয়েছে। সচেতনতার জন্য প্রথমে সাতদিন, পরে আরও সাতদিন সময় দিয়েছি। অনেকের আবেদন ছিল, অনুরোধ করেছেন আরও বাড়ানোর জন্য। কোন অবস্থাতেই বাড়াতে রাজি হইনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, এতদিন আগে আইনটি হয়েছে, বাস্তবায়ন না হলে জনস্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। প্রথম পর্যায়ে আইনটি সহনীয়ভাবে কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে আইনটি সংযুক্ত করে যে বিষয়টি অসম্পূর্ণ ছিল গতকাল গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, আজ থেকে মোবাইল কোর্ট কার্যকর হচ্ছে। আইন প্রয়োগে যাতে কোন অসুবিধা না হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অযথা হয়রানি কিংবা বাড়াবাড়ি বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উর্ধতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। সহনীয় মাত্রা মানে বাড়াবাড়ি যেন না করে এটাই বলছি। পার্কিং সুবিধা নেই বা পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, রিক্সাচালকদের লাইসেন্স নেই-এসব ছাড়া আইনটি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে কাদের বলেন, এ আইন শুধুমাত্র ঢাকার জন্য নয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য তাদের অন্যদিকে মনোযোগ ছিল। তারা শীঘ্রই মিটিং করবে, আমি নিজেই মিটিং ডেকেছি। আইনটি বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহন আইনটি আগের তুলনায় কঠোর করা হয়েছে। আইনটি কঠোর করার উদ্দেশ্য শাস্তি দেয়া নয়, সকলের কল্যাণে সড়ককে নিরাপদ করা দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা। আইনটিতে একটি নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে তা হলো চালকদের জন্য পয়েন্ট সিস্টেম, উন্নত বিশ্বের মতো আইন অমান্য করলে চালকদের পয়েন্ট কর্তন করা হবে। পরিবহন মালিকদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে, অভিযুক্ত যিনিই হোন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আইনটি বাস্তবায়নে বিআরটিএ অতিরিক্ত সময় কাজ করছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন ডায়নামিক চেয়ারম্যান এসেছে, বিআরটিএতে ভিড় লেগেই আছে। বিআরটিএতে জনবলও বাড়ছে, এটি একটা চ্যালেঞ্জ। সকলে সহযোগিতা করলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারব। ভারতের সঙ্গে কোন চুক্তি হয়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়ে ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশে বিএনপির দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এমওইউ (মোমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) ও চুক্তির মধ্যে কী পার্থক্য, এটা তারা বোঝে না। তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে অনেক বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ ব্যক্তি আছেন। আমি অবাক হয়ে যাই, এমওইউ ও চুক্তির মধ্যে কী পার্থক্য, এটা তারা বোঝেন না। চুক্তি ও এমওইউ এক কথা না। এখানে কোন চুক্তি হয়নি। এমওইউ হয়েছে চারটি আর তিনটি ওপেনিং। বিএনপিকে বলুন, তারা এমওইউ ও চুক্তির মধ্যে পার্থক্যটা কেন বোঝে না? এটা জেনেও কি না জানার ভান করছে? এমওইউকে কেন চুক্তি বলছে, এটা আমার প্রশ্ন। আর এখানে নাথিং সিক্রেট, এভিরিথিং ইজ ওপেন সিক্রেট। এমওইউ’তে যা কিছু আছে, কোনটাতেই সিক্রেসি কিছু নেই। আর এটা কোন চুক্তি না। জি কে শামীম আমার এখানে ঢুকতে পারেনি চলমান শুদ্ধি অভিযান নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, শুদ্ধি অভিযান যে থামেনি প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলে দিয়েছেন, এটা আমার বলা লাগবে না। তিনি বলেছেন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চলতে থাকবে। সড়ক খাতে জি কে শামীমের মতো প্রভাবশালী কেউ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জি কে শামীম আমার এখানে ঢুকতে পারেনি। এ ধরনের কেউ আমার এখানে ঢুকতে পারে! আমার এখানে যারা কাজ করে, আপনারা ভাল করে জানেন। একটা বিদেশী কোম্পানিকে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করেছি ঘুষ দেয়ার কারণে। আমার সচিবকে চায়ের প্যাকেটে করে ঘুষ দিতে এসেছিল, সেজন্য ওই কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছি আমাদের এখানে কোন কাজ দেয়া হয়নি। কাদের বলেন, আমাদের এখানে মূলত কাজগুলো করে আর্মি, মোনেম কোম্পানি, রেজা কনস্ট্রাকশন। কিন্তু, কোন কন্ট্রাক্টর আমার অফিসে কখনও আলাপ করেনি। তারা কোন আলাপ করলে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে করে। বিভিন্ন অপকর্ম করে দল থেকে বহিষ্কৃত ‘শটগান সোহেল’ দেশে এসেছে, মিরপুরের শাহাদত মিল্কি হত্যার আসামি ঢাকা আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেখি না, আসুক। একজন (শটগান সোহেল) তো এসে গেছে, মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি তুলছে, ফেসবুকে ভাইরাল করছে, আপনার সঙ্গে হয়ত তুলতে পারেনি- এর জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার মনে হয় না সে ধরনের স্কোপ আছে। পুলিশ নিশ্চয়ই বিষয়টা খতিয়ে দেখছে। সে ধরনের কিছু হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে কারও বিষয়ে কোন শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। কারণ, প্রাইম মিনিস্টার ইজ ভেরি সিরিয়াস এ্যাবাউট ইট। টার্গেট এ্যাটিভ করার জন্য যত ধরনের স্যাক্রিফাইস প্রয়োজন, আমরা করব। এখানে প্রাইম মিনিস্টার তার আত্মীয়দেরও রেহাই দেননি, এটা তো আপনাদের বুঝতে হবে।
×