ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভরা মৌসুমে আমদানি বন্ধের চিন্তা

কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য শুধু পেঁয়াজের কারণে ম্লান হতে পারে না ॥ মন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য শুধু পেঁয়াজের কারণে ম্লান হতে পারে না ॥ মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষকের ন্যায্যদাম পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে মসলা জাতীয় এই পণ্যের আমদানি বন্ধ রাখার চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক। মানুষের নাগালের বাইরে এখন পেঁয়াজ। এমন পরিস্থিতিতে এই তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী। এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তা কেবল পেঁয়াজের কারণে ম্লান হতে পারে না বলেও জানান তিনি। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক পণ্য বেশি উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক প্রযুক্তি নেই বলেও মত কৃষিমন্ত্রীর। রবিবার রাজধানীর আলাদা দুটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। হোটেল সোনারগাঁয়ে ফিনল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসা সম্প্রসারণ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে এক সেমিনারের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কৃষিমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, আমরা এবার পরিকল্পনা করেছি, পিক অব দ্য সিজনে, আমরা চিন্তা করছি, সিদ্ধান্ত হয়নি, আমরা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখব। যাতে আমাদের চাষীরা সঠিক মূল্য পায়। ইনশাল্লাহ আমরা এটা এবার করব। ইতোমধ্যে আমরা এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, ২০-২৫ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসে যাবে। আমার বিশ্বাস তখন দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। এর মধ্যে ভারতও তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছরও পেঁয়াজ আমাদের ভাল হয়েছিল। কিন্তু আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমাদের কৃষকরা পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারেনি। বিদেশ থেকে আমদানি করে আমরা এটা মেটাতে পারতাম। হঠাৎ এভাবে ভারত পেঁয়াজের ওপর রেস্ট্রিকশন দেবে, ব্যান্ড করবে রফতানি- এটা আমরা চিন্তাও করিনি। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা প্রশ্নে ড. রাজ্জাক বলেন, বাজার চলে চাহিদা ও জোগানের ওপর। মনিটরিং করে বাজার খুব একটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পুলিশ-র‌্যাব দিয়েও নয়। এর আগে ফিনল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় এফবিসিসিআই এবং ফিনপার্টনারশিপের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের এদেশে সরাসরি বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বাংলাদেশের সঙ্গে শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্বাস্থ্য, নবায়নযোগ্য এনার্জি, টেকসই বনায়ন ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ এবং যৌথ অংশীদারিত্বের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে ফিনল্যান্ড। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি বাংলাদেশের স্থিতিশীল ম্যাক্রো-ইকোনমিক প্রবৃদ্ধিসহ গত কয়েক দশকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রফতানির পরিমাণ ৩ কোটি ৯৫ লাখ এবং আমদানির পরিমাণ ২০ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক তিত্তা মায়া এবং এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজনু, সহ-সভাপতি নিজামুদ্দিন রাজেশ, সংগঠনের পরিচালকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। একই দিন বিকেলে শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান ‘উন্নয়ন মেলা-১৯’র এক সেমিনারে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি শুধু উৎপাদনে না, প্রক্রিয়াজাতকরণেও ব্যবহার করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশি মানুষ। এই মানুষদের জন্য টুথপেস্ট কোলগেট আসে ভারত থেকে। ভারত থেকে কেন এই টুথপেস্ট আসবে? বাংলাদেশে টুথপেস্ট করতে পারে না কোলগেট? তারা কেন এখানে কারখানা করে না, কেন বিনিয়োগ করবে না? মন্ত্রী বলেন, কৃষিনির্ভর এ রকম অনেক পণ্য মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসছে। প্রথমত, আমাদের মার্কেটের আকার বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি আহরণ করে প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতি গড়তে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি শুধু উৎপাদনে না, প্রক্রিয়াজাতকরণেও ব্যবহার করতে হবে। ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে জেলি বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি করছে। বাংলাদেশ সেটা কিভাবে করতে পারবে, সেখানে কৃষি মন্ত্রণালয়, এর সচিব ও মন্ত্রী হিসেবে তিনি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেখানে ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ষাটের দশকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন থেকেই ফুড টেকনোলজি বিভাগ দেখছি। কৃষিমন্ত্রীর প্রশ্ন, এ পর্যন্ত যারা ফুড টেকনোলজি থেকে বেরিয়ে এসেছেন, কয়টা খাবার তারা ফুড টেকনোলজির মাধ্যমে আমাদের জন্য করতে পেরেছেন? কয়টা আজ বাজারজাত হচ্ছে- যার কৃতিত্ব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যেতে পারে। সেমিনারে অংশ নেয়ার আগে উন্নয়নমেলা ঘুরে দেখেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যাওয়ার জন্য আমাদের আরও আধুনিক পণ্য তৈরি করতে হবে। শুধু গামছা বানিয়ে, চাঁদর বানিয়ে এই মানের চাঁদর-গামছা দিয়ে হবে না। আন্তর্জাতিকমানের চাঁদর, কার্পেট, বেডশীট বানাতে হবে। এগুলোর জন্য আমাদের উদ্যোগ দরকার। নিরাপদ খাদ্য, এটা আরেক বিষয়। দেশে শুঁটকি মাছ, কুচিয়া করা হচ্ছে এগুলো নিরাপদ কিনা? কিভাবে হচ্ছে? কৃষির বিভিন্ন পণ্য, এগুলো যদি নিরাপদ না হয়, স্বাস্থ্যসম্মত না হয়, তাহলে পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশ যেতে পারবে না। উৎপাদন প্রক্রিয়াজাত, বাজারজাতকরণের বিষয়ে আরও উদ্যোগ দরকার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুদ্দিন আব্দুল্লাহসহ অনেকে।
×