ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাবিতে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মাথা ফাটাল দুই ছাত্রলীগ কর্মী

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

রাবিতে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মাথা ফাটাল দুই ছাত্রলীগ কর্মী

রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সোহরাব মিয়া নামের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেছে ছাত্রলীগের দুইকর্মী। মারধরে সোহরাবের মাথা ফেটেছে ও বাম হাতের দুই জায়গা ভেঙ্গে গেছে। শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে এ ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদ ও জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষার্থীরা লাগাতার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেয়। উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পেটানোর কারণ জানা যায়নি। মারধরে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মীরা হলো- আসিফ ও হুমায়ুন কবির নাহিদ। এরা দু’জনেই জোহা হল শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা যায়। মারধরের পর থেকেই পলাতক রয়েছে এই দুই ছাত্রলীগ কর্মী। এদিকে আহত অবস্থায় সোহরাব বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে মতিহার থানা পুলিশ জানায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও সহপাঠীরা জানায়, ছাত্রলীগ কর্মী হুমায়ুন কবির নাহিদ ও আসিফের নেতৃত্বে সোহরাবসহ ফিন্যান্স বিভাগের কয়েক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জোহা হলের ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা দু’জন মিলে সোহরাবকে রড দিয়ে তার মাথা ও হাতে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে সোহরাব রক্তাক্ত হলে তারা মারধর বন্ধ করে। পরে সোহরাবের বন্ধুরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ও পরে রামেকে ভর্তি করে। সোহরাবের সহপাঠীরা জানান, তার বাম হাতের কনুইয়ের ওপর ও নিচে দুই জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। ডাক্তার জানিয়েছে মাথার তিন জায়গায় মোট ১৫ সেলাই দেয়া হয়েছে। তার মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আপাতত এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে তার সিটিস্ক্যান করানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহপাঠী জানান, গত কয়েকদিন থেকেই আসিক লাক সোহরাব নানানভাবে অত্যাচার করে আসছে। দু’দিন আগেও আসিফ লাক সোহরাবকে ডেকে নিয়ে চড় থাপ্পর মেরেছিল। এদিকে মারধরের ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত আসিফ ও নাহিদ হল ছেড়ে বেরিয়ে যান। তাদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। তাদের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মীর ছাত্রত্ব বাতিল ও গ্রেফতারসহ ৩ দফা দাবি জানায়। এ সময় রাস্তার দুইপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে উপ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টোরিয়াল বডিসহ শিক্ষকরা কয়েক দফা চেষ্টা করেন। পরে ফিন্যান্স বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আবু সাদেক মোঃ কামরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ^াস দিলে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে দেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। জড়িতদের আজকের মধ্যেই গ্রেফতার করা হবে। তবে ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আবরার হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আমাদের সহপাঠীকে হলে ডেকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেফতার চাই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে আমরা লাগাতার ধর্মঘট করব। জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×