ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আবারও দুর্গম সাগর পথে মানব পাচার তৎপরতা

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

আবারও দুর্গম সাগর পথে মানব পাচার তৎপরতা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ আবার মানব পাচার। দালালরা আবার সক্রিয়। টেকনাফ টু মালয়েশিয়া। পাচার হচ্ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। নারী-পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে স্বেচ্ছায় পাচার হয়ে যেতে ওরা তৎপর। পাচারকারী চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গা। আবার পাচার কাজে জড়িত নৌকার মাঝিরাও রোহিঙ্গা। এ ঘটনা নিয়ে বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে, মানব পাচার ঘটনা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। আর এ কারণেই পাচারের অপতৎপরতা ধরা পড়ছে। তবে বিভিন্ন ফাঁক ফোকরে পাচার হয়ে যাওয়ার কিছু ঘটনা যে ঘটছে না তা হলফ করে বলার কোন অবকাশ নেই। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বোঝাই হয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জীবনবাজি রেখে পাচারকারীদের সহায়তায় গভীর সমুদ্র পথে এগিয়ে গেছে। পরবর্তীতে গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত ট্রলারে উঠে এদের কেউ পৌঁছেছে মালয়েশিয়ায়, কেউ থাইল্যান্ড, আবার কেউ সুদূর অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এ পৌঁছে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ট্রলার বা নৌকাডুবিতে প্রাণ গেছে অনেকের। এ ঘটনার পর সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মানব পাচার ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এরপরে চলে আসে বর্ষা মৌসুম, যে মৌসুমে সাগর থাকে উত্তাল। ওই সময়ে পাচার কাজ সম্পন্ন করা দুরূহ। তাই দালাল চক্রও থমকে থাকে। এখন বর্ষা মৌসুম শেষ। শুষ্ক মৌসুম চলছে। এ সুযোগে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে মানব পাচার। তৎপর রয়েছে পাচারকারী দলের সদস্যরা। এরই মধ্যে দফায় দফায় পাচার হওয়ার পথে অনেকে ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে নারীর সংখ্যাও খুব একটা কম নয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, কক্সবাজার জেলার একাধিক পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে গত দুই বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ রুট থেকে উদ্ধার হয়েছে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা। পরবর্তীতে মানব পাচারকারী চক্রের কয়েক সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণও হারিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা দালালরা আশ্রয় শিবিরকে টার্গেট করে বর্তমানে পুরোদমে সক্রিয় হয়েছে। এ কাজে পুরনো কিছু দালাল সহযোগিতা করছে। একইভাবে রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞ কিছু মাঝি। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে উখিয়া টেকনাফের ৩২ আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা খুব ভাল অবস্থানে রয়েছে। সরকারী আশ্রয়, এর সঙ্গে সরকারী, বেসরকারী ও বিদেশী সাহায্য সংস্থার সব ধরনের সহায়তায় এরা থাকার পরও অধিক আয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকে বিভিন্নভাবে বিদেশ পাড়ি জমানোর পথে রয়েছে। মালয়েশিয়া এর মধ্যে রয়েছে সর্বাগ্রে। সমুদ্র পথে পাড়ি জমিয়ে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন উপকূলে পৌঁছতে পারলেই এরা সেখানে বিভিন্নভাবে আশ্রয় পেয়ে যায়। এমন লোভে থেকে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারীরাও থেমে নেই। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে পৃথক দুটি অভিযানে মালয়েশিয়াগামী ১৩৩ রোহিঙ্গা নর-নারী উদ্ধার হয়েছে। সূত্র জানায়, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার খুব বেশি ইচ্ছার লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। এদের মনোভাবটা এমন যে, এরা এদেশে থেকে যাওয়ার তৎপরতায় থাকবে, সুযোগ পেলে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকবে। তন্মধ্যে টেকনাফ পয়েন্ট থেকে সাগর পথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া। আবার অনেকে মালয়েশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পাড়ি জমাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মানব পাচার, ইয়াবা কারবার, জঙ্গীপনা, চোরাচালান, অস্ত্রের ট্রেনিং ইত্যাদি নিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বহু সদস্য নানা অপরাধে জড়িত। ৩২ আশ্রয় ক্যাম্পে এদের ২৪ ঘণ্টা ধরে রাখা যাচ্ছে না। ক্যাম্প থেকে এরা ইচ্ছেমতো বাইরে আসা-যাওয়া করছে। রাতের বেলায় বেশকিছু ক্যাম্প সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে যায়। অপরদিকে, দিনের বেলা কিছু এনজিওর পরিচালিত হাসপাতালের ডাক্তারের প্রেসক্রিপসনে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে চলে যায়। এরপরে এদের অনেকে টেকনাফ পয়েন্ট এবং কক্সবাজারের সমিতিপাড়া, খুরুশকুল, টেকনাফ ও উখিয়ার সোনারপাড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পাচারকারী চক্রের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পথে পা বাড়িয়ে দেয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে মানব পাচারকারী মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরায় রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিনের অদূরে তাড়া করে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে মাঝিমাল্লাসহ ১২২ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে। এদের মধ্যে ১৫ শিশু, ৫৯ নারী ও ৪৮ পুরুষ রয়েছে। উদ্ধারের পর এরা জানিয়েছে, ক্যাম্প থেকে পালিয়ে সাগর পথে ওরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার টার্গেট করেছিল।
×