ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় রাজধানীকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে-চেয়ারম্যান রাজউক

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় রাজধানীকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে-চেয়ারম্যান রাজউক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় রাজধানীকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ। একইসাথে মহানগরকে শিশুবান্ধব করতে শিশুদের কাছ থেকে দেয়া সকল প্রস্তাব রাজউক প্রণয়নাধীন ড্যাপ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তাই তিনি শিশুদের তাদের প্রস্তাব বা মতমতগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার আহ্বান জানান। শনিবার রাজউকের সভাকক্ষে সংস্থাটি কতৃক প্রণয়নাধীন সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এ শিশুদের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য শিশুদের সাথে মত বিনিময় সভায় চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। শিশুবান্ধব আদর্শ নগরী গড়ে তুলতে ও শিশুদের চাহিদা ও স্বপ্নের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে রাজউক ও সেভ দ্য চিলড্রেন এর যৌথ উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম চারটি প্রস্তাব হচ্ছে নিকটতম দূরত্বে স্কুল স্থাপন, পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও পার্ক তৈরি করা,নগরে সবুজ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, নিরাপদ আবাসিক এলাকা নিশ্চিত করা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি সালমা এ শফি, বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (সিডিএমপি) এর প্রকল্প পরিচালক মো: আব্দুল কাইয়ুম,ড্যাপ এর প্রকল্প পরিচালক মো: আশরাফুল ইসলাম,সেভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি ডিরেক্টর সৈয়দ মতিউল আহসান উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজউকের চেয়ারম্যান বলেন, শিশুরা তাদের প্রস্তাবনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে খেলার মাঠের অভাবকে। তাই আমি রাজউকের সকল প্রকল্পের খালি খন্ড জমি গুলো কে কাউকে বরাদ্দ না দিয়ে সেগুলোকে বিনোদন বা অবকাশ যাপনের জন্য পার্ক কিংবা সবুজ চত্বর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। রাজউক চেয়ারম্যান শিশুদের মতামত নিয়ে শহরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এটা গুরুত্ব সহকারের প্রচারের জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে অনুরোধ জানান। ড. সুলতান বলেন, তোমরা (শিশুরা) নিজেরা সচেতন হলে তোমাদের বাড়ি গুলশানের মতো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করতে পরো। রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন করে সেই নকশা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি করতে বড়দের বাধ্য করতে তিনি শিশুদের অনুরোধ করেন। শিশুদের মোবাইল বা ট্যাবে সময় না কাটিয়ে বেশি বেশি পড়াশুনা করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন শুধু রাজউকের একার কাজ নয়, এর সাথে সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো সংস্থা জড়িত । পরিকল্পনামাফিক কাজ করে রাজধানী ঢাকা শহরের উন্নয়নে তাই সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ড্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা পরিকল্পনার সাথে জড়িত দেশের সেরা বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছি, দেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে এর সাথে সম্পৃক্ত করেছি। সুতরাং ভবিষ্যতে তাদের প্রণয়নকৃত ড্যাপ-এর মাধ্যমে আমরা একটি পরিকল্পিত ঢাকা শহর পাবো বলে আশা রাখি। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলো নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যান করেছেন। নদীগুলোর দূষণ রোধ করতে এবং নদীগুলোতে পরিষ্কার টলটলে ফিরিয়ে আনতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অভ প্ল্যানার্স এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি সালমা এ শফি বলেন,বড়দের সাথে শিশুরা পরিকল্পনা করলে শহরগুলো বাসযোগ্য হবে। জায়গা কম কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাস্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। অপর বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (সিডিএমপি) এর প্রকল্প পরিচালক মো: আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশের সব কিছূই রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে করা হচ্ছে। ফলে বিকেন্দ্রীকরণ না হলে পরিকল্পিত ঢাকা নগরী সম্ভব নয়। শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকা নয় নগরীর সকল পাড়া-মহল্লায় সব নাগরিক সুবিধা প্রদানের বিষয়টি পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে বলে তিনি জানান। সেভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি ডিরেক্টর সৈয়দ মতিউল আহসান বলেন, আমাদের দেশে গৃহিত মেগা প্রকল্পগুলো শিশুদের কথা ভেবে করা হয়না । পরিকল্পিত শহর গড়ার ক্ষেত্রে শিশুরা তাদের চাহিদা মোতাবেক কিছু প্রস্তাব দিয়েছে।শিশুরা সকলের মঙ্গল কামনা করে, তাই তারা যে শহরের স্বপ্ন দেখে সে শহর জনবান্ধব হবে। পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত ঢাকা গড়তে শিশুদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি রাজউককে ধন্যবাদ জানান। ড্যাপ এর প্রকল্প পরিচালক মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রণয়নাধীন ড্যাপ-কে উপযোগী ও বাস্তবসম্মত করতে আমরা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করেছি। শিশুরা কেমন ঢাকার স্বপ্ন দেখে তা জানতে আমরা এর আগে এ বছরের মে মাসে তাদের নিয়ে দিনব্যাপি কর্মশালার আয়োজন করেছি। সেখানে তারা তাদের মূল্যবান মতামত দিয়েছে। তাদের সেই মতামতসমূহকে চূড়ান্ত করার জন্যই আজকের এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাড়ির কাছাকাছি পায়ে হেঁটে যাবার মতো মানসম্মত স্কুলের অভাব অন্যতম একটি বড় সমস্যা বলে শিশুরা মতামত দিয়েছে। তাই নতুন ড্যাপ-এ আমরা স্কুল জোনিংয়ের প্রস্তাব রেখেছি। এর ফলে এলাকাভিত্তিক স্কুল-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য পরিকল্পনা জনাব মোঃ আজহারুল ইসলাম খান এবং রাজউক ও সেভ দ্য চিলড্রেন এর কর্মকর্তাবৃন্দ।
×