ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কটিতে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না

প্রকাশিত: ০১:৩১, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কটিতে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কতো নয় যেন মৃত্যুকুপ। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানী। যানবাহনের সংখ্যাধিক্য, বেপরোয়া যান চলাচল, অদক্ষ চালক, ওভারটেকিং, যত্রতত্র ট্রাক পার্কিং, ধান-খড় শুকানো, গবাদিপশু ছেড়ে দেয়া, পাথর-বালির স্তুপ করে রাখাসহ ট্রাকটর, মোটরবাইক, ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা ও ভটভটির দৌরাত্মের কারণে ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানী ছাড়াও আহত হচ্ছেন যাত্রীসহ পথচারী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে মানুষজনদের চলতে হচ্ছে। দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তে যাচ্ছেন যে যার গন্তব্যে। এই মহাসড়কটি এতোই ঝুঁকিপুর্ণ মনে হওয়ায় মহাসড়কের দু‘পাশে গাছের সংগে আল্লাহু-রাসুল্লাহসহ বিভিন্ন দোয়া-দরুদ সংবলিত প্লেকার্র্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। যা পাঠ করতে করতে মানুষজন নিরাপদ গন্তব্যে যেতে পারেন। পঞ্চগড় শহর থেকে বাংলাবান্ধার দুরত্ব ৫৭ কিলোমিটার। এই ৫৭ কিলোমিটার সড়কের ওপর রয়েছে ছোট-বড় মিলে বেশ কয়েকটি হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়াও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হওয়ায় মহাসড়কটি এখন ব্যাস্ততম একটি মহাসড়ক। এই মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রতিদিন পাথর ও অন্যান্য পণ্যবোঝাই ৩/৪শ‘ ট্রাক, বাস, কোচ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, ভটভটি, ট্রাকটরসহ অসংখ্য মোটরসাইকেল চলাচল করে। যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেপরোয়া গতির যান চলাচলের কারণে প্রায়শই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বেপরোয়া গতির যানবাহন চলাচল, অধক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে বাস-ট্রাক চালানো ছাড়াও মহাসড়কের ওপর দিয়ে তিন চাকার ছোট যান চালানোকেই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, মহাসড়কে একের পর এক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও যেন দেখার কেউ নেই। ভজনপুর এলাকার কলেজছাত্র মামুন বলেন, দুর্ঘটনার পরই শুরু হয় প্রশাসনের দৌড়ঝাঁপ। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু পরবর্তিতে ওই কমিটির রিপোর্ট যেমন আলোর মুখ দেখে না ঠিক তেমনি রিপোর্ট সম্পর্কে কেউ প্রশ্নও করে না। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে এই মহাসড়কে যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, মানুষজন আহত-নিহত হয়েছে তার একটি দুর্ঘটনারও বিচার হয়নি। মামলা হয়েছে আবার সেসব মামলার মিমাংসাও করা হয়েছে। মাইক্রোবাস মালিক সমিতির নেতা কাদের বলেন, ব্যাটারীচালিত রিক্সাভ্যান, অটোরিক্সা মহাসড়কে চলাচল করার কারণে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এসব তিন চাকার যান চালকদের কোন প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা ডানে-বাম না দেখে মাঝ পথে গাড়ি ঘুরিয়ে দেন। এতে দ্রুতগতির বড় যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কে এ বছরের জানুয়ারি থেকে নবেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বেসরকারী হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। আহত হয়েছে দুই শতাধিকেরও বেশি মানুষ। তবে, সরকারী পরিসংখ্যানে ১৩ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু নবেম্বর মাসেই ৮ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এরমধ্যে ৮ নবেম্বর সদর উপজেলার আমতলী নামক স্থানে বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংর্ঘষে ৭ জন নিহত হয়েছে। এক সপ্তাহ না যেতেই ৬ নবেম্বর একই উপজেলার অমরখানা নামক স্থানে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেছে এক স্কুল ছাত্রের। গত বছরের ২৬ অক্টোবর রাতে এই মহাসড়কের দশমাইল বাজার নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিশুসহ ১১ জন নিহত হন। নিহত সকলেই বাসযাত্রী। জেমকন লিঃ নামে বৈদ্যুতিক খুটিবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে। থানায় রিতিমত মামলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। কিন্তু এতোগুলো প্রাণ অকালে ঝরে গেলেও আজ অবধি ট্রাক চালকের বিচার হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে স্থানীয় প্রশাসনের নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরও এই মহাসড়কটিতে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না।
×