ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পায়ে ত্রুটি নিয়ে জন্ম হওয়া সফল যুবক

প্রকাশিত: ০১:১৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

পায়ে ত্রুটি নিয়ে জন্ম হওয়া সফল যুবক

অনলাইন ডেস্ক ॥ জন্ম থেকেই পায়ে ত্রুটি। ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত ভাল করে দৌঁড়াতেই পারত না। অবসর কাটত দাদির সঙ্গে। তার রান্নার গন্ধ গায়ে মেখে। দাদি রান্না করতেন। পাশে দুই পা ছড়িয়ে বসে থাকত কিশোর। দু’টি পায়েই ত্রুটি ঠিক করার জন্য থাকত ধাতব আবরণ। তাই পা ভাঁজ করতে পারত না সে। সে দিনের বালক আজ বিশ্বজয়ী রন্ধনশিল্পী। তার রান্নায় মুগ্ধ মোদি, ওবামা থেকে দলাই লামা। বিশ্ব দরবারে ভারতীয় রন্ধনকে তুলে ধরেছেন সেলেব্রিটি শেফ বিকাশ খান্না। পাঞ্জাবের অমৃতসরে বিকাশের জন্ম ১৯৭১-এর ১৪ নভেম্বর। তার বাবা, দবীন্দ্র খান্না এবং মা বিন্দু খান্না। ভাই নিশান্ত এবং বোন রাধিকার সঙ্গে বড় হওয়া। রন্ধনপটিয়সী দাদির কাছেই রান্নায় হাতেখড়ি বিকাশের। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নানারকমের রেসিপি তার হাতের মুঠোয়। রীতিমতো ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়া করে শুরু করলেন ব্যবসা। বিয়ে এবং অনুষ্ঠানের জন্য। ক্যাটারিংয়ের দায়িত্ব তার। কিছু টাকা জমতেই রাস্তার পাশে দোকান দিলেন বিকাশ। প্রথমে ছোলে বাটুরে, তারপর তন্দুরি। রান্না নিয়েই উচ্চশিক্ষা। প্রাথমিকভাবে মণিপালে, তারপর ২০০০ সালে চলে গেলেন যুক্তরাষ্ট্র। নেহাতই ভাগ্যপরীক্ষার জন্য। বিদেশ পাড়ির আগেই দেশের নামী হোটেলে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল বিকাশের। তবু তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। নিউইয়র্কে প্রথম কয়েকদিন আশ্রয়হীন ছিলেন বিকাশ। মাথার উপর ছাদ এবং দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পেতেন নিউইয়র্ক সিটি রেসকিউ মিশনে। তিন সপ্তাহ বিকাশ ছিলেন আশ্রয়হীনদের জন্য তৈরি ওই সংস্থায়। সেখানেও হাতের রান্নায় সবার মন জয় করলেন তিনি। প্রায় তিন সপ্তাহ পর বিকাশ কাজ পেলেন ওখানকার ভারতীয় রেস্তোরাঁ ‘সালাম বম্বে’-তে। এরপর নিউইয়র্কে বিকাশের নিজস্ব রেস্তোরাঁ ‘জুনুন’ পথ চলা শুরু করে। ততদিনে রন্ধনশিল্পের অন্যতম সেরা আন্তর্জাতিক খেতাব ‘মিশেলিন স্টার শেফ’ বিকাশের শিরোপায়। আজ ম্যানহ্যাটনের প্রথম সারির রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে অন্যতম বিকাশের ‘জুনুন’। দেশে ফিরে বিকাশ রান্নার পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন টেলিভিশন শো ‘মাস্টারশেফ ইন্ডিয়া’ সঞ্চালনা করে। ‘হোলি কিচেনস’ নামে তথ্যচিত্র সিরিজও প্রযোজনা করেছেন বিকাশ। তার পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘দ্য লাস্ট কালার’ প্রশংসিত হয়। ছবির বিষয়বস্তু ছিল কাশীতে বসবসকারী বাঙালি বিধবাদের জীবন। তার লেখা রান্নার বইও বেশ জনপ্রিয়। ভারত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজসেবায় জড়িত বিকাশ। নিউইয়র্কে নিজের ফেলে আসা দিন তিনি ভোলেননি। সেখানেও কাজ করেছেন দুঃস্থদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে। বিকাশের প্রিয় রং হলুদ। এটা তার কাছে সূর্যের রং, আবার রান্নায় অপরিহার্য, গুণসমৃদ্ধ একটি মশলার রং। রন্ধন শিল্পীর সাদা পোশাকে হলুদের দাগ বিকাশ খুব ভালবাসেন। শৈশবের স্মৃতি এখনও ঘিরে আছে বিকাশকে। মনে পড়ে, তিনি যখন রান্নায় নারিকেল দিয়েছিলেন, দাদি এসে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কি নতুন বাইক কিনেছেন? বাড়িতে নারিকেল এসেছে কেন! পাঞ্জাবি রান্নায় নারিকেলের ব্যবহার নেই বলে বৃদ্ধা জানতেনই না, নারিকেলে রান্নার স্বাদবৃদ্ধি হয়! এ রকমই আর একটি মজার স্মৃতি আছে দই নিয়ে। সেবার প্রথম বাড়িতে মিষ্টি দই বানিয়েছিলেন বিকাশ। পরিবারের পাশাপাশি অবাক হয়েছিল বন্ধুবান্ধবরাও। দই, আবার মিষ্টি! সবাই আকাশ থেকে পড়েছিলেন। এভাবেই রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বরাবর বাজিমাত করে এসেছেন বিকাশ। নিজের রেস্তোরাঁ, অন্য পাঁচতারা রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে বাজিমাত করা বিকাশ খান্নার পছন্দের জায়গা অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির। ভালবাসেন স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানায় সবার সঙ্গে বসে চাপাটি বানাতে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সপরিবারে যখন এসেছিলেন ভারত সফরে, তাদের সবাইকে স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানায় হাতে ধরে চাপাটি বেলতে শিখিয়েছিলেন বিকাশ। ৪৮ বছর বয়সি বিকাশ এখন সপরিবারে বছরের বেশিরভাগ সময় আমেরিকা থাকেন। তবে এখনও বিয়ে করেননি তিনি। শোনা গিয়েছিল, আর এক রন্ধনশিল্পী শিপ্রা খান্নার সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। রটেছিল তাদের বিয়ের গুঞ্জনও। কিন্তু তারপর তা রয়ে গিয়েছে গুজবের স্তরেই। জন্মের পর ডাক্তার বলেছিলেন, বিকাশ কোনওদিন হাঁটতে পারবেন না। শুনে তার মা বলেছিলেন, ‘সেটা আপনার মনে হতে পারে। কিন্তু আমার ছেলে একদিন আকাশে উড়বে।’ মায়ের কথা সত্যি বলে প্রমাণ করেছেন বিকাশ। সূত্র: আনন্দবাজার
×