ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

স্বাধীনতাউত্তর কিছু রক্তাক্ত স্মৃতি

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

স্বাধীনতাউত্তর কিছু রক্তাক্ত স্মৃতি

ঐতিহাসিক নয়, অনৈতিহাসিকও নয়; মহান স্বাধীনতাউত্তর প্রিয় বাংলাদেশের কিছু বেদনাবিধুর রক্তাক্ত স্মৃতি আজ এত বছর পরও মন ভারাক্রান্ত করে। দুশ্চিন্তার জন্ম দেয় যখন দেখি কালো শরীরের ওপর সাদা কাপড় জড়িয়ে পত্রিকার পাতায় ছবি ছেপে সততার সার্টিফিকেট নিচ্ছে এবং থিফ অব বাগদাদ শব্দাবলী মুছে তদস্থলে ফুলের মতো পবিত্র কথা বুকে-পিঠে সেঁটে রাজনীতির মধ্যগগনে অবস্থান করছেন কিছু চেনা মুখ, তখন সত্যি সত্যি খুব ভয় হয়। তাদের আচরণ দেখলে মনে হবে তারা মধ্যগগনেও স্বস্তি পাচ্ছেন না, যেভাবেই হোক উর্ধগগনে ওঠার দড়ি টানাচ্ছেন, তখন আরও বেশি শঙ্কা জাগে। চোখের সামনে জাতীয় বীরদের রক্তাক্ত দেহ, তবু দেখতেও পাইনি যে। দেখেছি চোখের সামনে দিয়ে শহীদের রক্তলাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে চলে যাচ্ছে রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের দল, দেখেছি খুনী মুশতাক, জিয়ার প্রেতাত্মার মিছিল, মিলিটারি ট্যাঙ্ক। যে ক’টি অভিশপ্ত রক্তপিশাচ মাস পেরিয়ে এসেছি :- * আগস্ট ১৯৭৫ * নবেম্বর ১৯৭৫ এই মাসগুলো বিভিন্ন সময় জাতির সামনে ভয়ঙ্কর রূপে হাজির হয়েছে। যা দেখে বাংলাদেশ বিস্মিত, স্তম্ভিত, শোককাতর হয়েছে। তবে অতিদ্রুত শোক কাটিয়ে ওঠে দাঁড়িয়েছে। হায়েনার দলকে প্রতিহত করে এগিয়ে গেছে, এগিয়ে চলেছে। প্রথমেই ১৯৭৫, ২০০৪ ও ২০০৫ সালের আগস্টে কি কি ঘটিয়েছিল, কারা অঘটন ঘটন পটীয়স-পটীয়সী কারা- * আগস্ট ১৯৭৫, ২০০৪, ২০০৫ বাঙালী জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগান্তক, সবচেয়ে বেদনাবিধুর মাস হলো আগস্ট। এ মাসের ১৫ তারিখ আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খুনীরা এতই নির্দয়-নিষ্ঠুর ছিল যে, তারা বঙ্গবন্ধুর সাথে তার প্রিয়তমা সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পরিবারের অন্যদেরও হত্যা করে। কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের সৎ, সফল, সাহসী রাষ্ট্রনেতার অন্যতম ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। আল্লাহর অশেষ কৃপায় শেখ হাসিনা বেঁচেছিলেন এবং দেশের হাল ধরায় আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়,অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় রোল মডেল। ১৫ আগস্ট সেই কালরাতে কেবল জাতির পিতা বা বঙ্গমাতাকে আমরা হারাইনি আরও হারিয়েছি বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা দম্পতির তিন ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ছাত্র-যুব সমাজের প্রিয় সাথী দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতের মূল ধারার পথপ্রদর্শক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও তার নবপরিণীতা স্ত্রী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামাল, দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা ইংল্যান্ডের সেন্ট-হার্স্টে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ আর্মি অফিসার লেঃ শেখ জামাল ও তার নবপরিণীতা স্ত্রী রোজী জামাল এবং সর্বকনিষ্ঠ আদরের শেখ রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়। শিশু রাসেল সবেমাত্র স্কুলে যেতে শুরু করেছে এবং অবসর পেলেই ব্যাট-বল হাতে রেহানা আপুকে নিয়ে লনে ক্রিকেট খেলছে কিংবা রিং পেটাতে পেটাতে লনের চারপাশে ঘুরছে। কখনওবা বোলিং করে রেহানা আপুকে বোল্ড আউট করে আনন্দে নাচছে। ১৫ আগস্ট রাতে সবার বুকে গুলি দেখে খুনীদের কাছে এসে বলছে ‘আমি মায়ের কাছে যাব, আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে চলো। আমাকে ছেড়ে দাও,আর কখনও ফিরে আসব না।’ হায়েনার দল তাকে নিয়ে গেল যেখানে তার মার রক্তাক্ত দেহ নিথর পড়ে আছে এবং তাকেও ব্রাশ ফায়ার করে মায়ের পাশে শুইয়ে দিল। ১৫ আগস্টের সেই রাতে খুনীর দল আরও হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ছোট ভাই শেখ নাসের,বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এলিট ফোর্স BLF বা মুজিব বাহিনীর শীর্ষ নেতা এবং স্বাধীনতা উত্তর যুব সমাজের আইকন, দৈনিক বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমসের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি তথা আমাদের মনিভাই ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজুমনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার পরিবারের আরও কয়েকজন, এমনকি ৪ বছরের নাতি অবুঝ শিশু সুকান্ত বাবুকে পর্যন্ত হত্যা করে। তারা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলকে। কেন একে একে সবাইকে হত্যা করা হলো? এটি একটি বড় প্রশ্ন। কেননা, আমরা দেখেছি আমাদের এই অঞ্চলেরই ভারতের মহাত্মা গান্ধী, শ্রীমতি ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী (ইন্দিরা গান্ধী), রাজীব গান্ধী, পাকিস্তানের লিয়াকত আলী খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো, বেনজীর ভুট্টো, মিয়ানমারের জেনারেল অং সান এবং ইন্দোনেশিয়ার ড. সুকর্ন, ফিলিপিন্সের একুইনো, চিলির ড. আলেন্দে, মিসরের আনোয়ার সাদাত, সৌদি আরবের কিং ফয়সাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি, রবার্ট কেনেডি, মার্টিন লুথার কিং, এমনই অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যদের গায়ে হাত দেয়া হয়নি, হত্যা করা হয়নি। বাংলাদেশে কেন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো? একটি পরিবারকে একেবারে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা হলো কেন? এর জবাব আজও মেলেনি? সেজন্যই দাবি উঠেছে ট্রুথ কমিশন করে পেছনের ষড়যন্ত্র এবং ষড়যন্ত্রকারীদের চেহারা উন্মোচনের। এটি প্রয়োজন এজন্য যে বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা গুলি চালিয়েছিল তাদের বিচার হয়েছে। পেছন থেকে যারা প্ল্যানিং করেছে, যারা অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যারা পেছনের কভারেজ দিয়েছে তারা সব বাংলাদেশের না দেশের বাইরের; এটি পরিষ্কার হওয়া দরকার। একটি ব্যাপার বোঝা যায় হত্যাকারীরা পরাজিত শক্তি অর্থাৎ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল। পাকিস্তান আর্মিকে বলা হতো বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী ও শক্তিধর আর্মি। সেই আর্মিকে পরাজিত করল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত এবং নিরস্ত্র একটি জনগোষ্ঠী, যারা পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক আক্রান্ত হবার পর নিরস্ত্র থেকে সশস্ত্র রূপ ধারণ করে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জীবনের মায়া ত্যাগ করে এবং ৩০ লাখ শহীদের জীবন এবং ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের জীবন ও সম্মান উৎসর্গ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এটি পরাজিত শক্তির জন্য চরম অপমানের। কারণ কোন রকম শর্ত ছাড়াই পাকিস্তানের ৯৩ হাজার আর্মি অফিসার ও জোয়ান হাঁটু গেড়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। এতে পাকিস্তান বা তাদের মিত্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যতটা আহত হয়েছিল তার চেয়ে বেশি আহত-অপমানিত হয়েছে তাদের ক্রীতদাস বাংলা ভাষী, দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও তাদের রাজনৈতিক দল মুসলিম লিগ, জামায়াত, নেজামে ইসলামী। এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা পরাজিত শক্তির এজেন্ট। পাকিস্তান এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী শক্তির দুই এজেন্ট:- * পলিটিক্যাল এজেন্ট - খন্দকার মুশতাক আহমদ * মিলিটারি এজেন্ট - জেনারেল জিয়াউর রহমান এরা যুদ্ধের ভেতর ভারতের মাটিতে বসে যুদ্ধ না করে পুরো সময়টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। সঙ্গে দুটি শয়তানও জোগাড় করেছিল-সিভিল আমলা মাহবুবুল আলম চাষী এবং সাংবাদিক তাহের উদ্দিন ঠাকুর। এদের পেছনে আর কারা কারা ছিল ট্রুথ কমিশন করা গেলে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। এখনই সময় এজন্য যে, প্রত্যক্ষভাবে যারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে, যারা যুদ্ধ করেছে, যুদ্ধকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সমরনায়কদের অনেকেই আজ আর জীবিত নেই। তারপরও এখনও কেউ কেউ জীবিত আছেন, তারাও ৫/৭ বছর পর আর থাকবেন না। তখন কেবল দলিলের ওপর নির্ভর করতে হবে। প্রত্যক্ষদর্শী বা সরাসরি ইনভলবড কাউকে পাওয়া যাবে না? পাকিস্তান-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী, ঔপনিবেশিকবাদী শক্তির দুই প্রধান এজেন্ট খন্দকার মুশতাক আহমদ ও খুনী জেনারেল জিয়া গং প্রস্তাব দিয়েছিল: * অন্তত একটা লুজ কনফেডারেশন করা যায় কিনা? * মুজিবনগর সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কেবল তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানই করেননি, মোশতাককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। জেনারেল জিয়াকেও যুদ্ধ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাকে সেক্টর কমান্ডার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং বলা হয় এই দুই এজেন্টই হাউস কনফাইনমেন্ট এবং শেষদিন পর্যন্ত ওয়াচে ছিল। এমনকি ওই দুই এজেন্ট এমন কথাও বলেছিল বাংলাদেশ কনফেডারেশন মেনে নিলে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। বলেছিল: * তোমরা স্বাধীনতা চাও না বঙ্গবন্ধুকে চাও? * আমাদের যুদ্ধের নেতৃবৃন্দ জানিয়ে দিয়েছিলেন-আমরা স্বাধীনতাও চাই বঙ্গবন্ধুকেও চাই এবং আমরা শত্রুকে পরাজিত করে স্বাধীনতাকেও ছিনিয়ে আনব এবং বঙ্গবন্ধুকেও পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনব ইনশাল্লাহ! * পাকিস্তানের গডফাদার যুদ্ধকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার আমাদের বিজয়ের পর বলেছিল the emergence of Bangladesh is my personal defeat’। লক্ষ্য করার বিষয়, পাকিস্তানের পরাজয়টাকে কিসিঞ্জার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় হিসেবে মনে করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তার মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলছিল। ২ ও ৩ নবেম্বর ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে খুনীরা চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যাক। নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবে না, বরং তারা জানবে পাকিস্তানের ইতিহাস অর্থাৎ পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়নি। সেই লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশ বিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থী কিছু পদক্ষেপ নেয়: * জয় বাংলা স্লোগান দেয়া যাবে না * জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেয়া যাবে না * বলতে হবে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ? * ৭ নবেম্বর তো কিছু লোক ট্যাঙ্কে বসে পাকিস্তান জিন্দাবাদ? স্লোগান দিয়েছিল, তাদের কেউ চেনে না * বাংলাদেশ বেতার বলা যাবে না, বলতে হবে রেডিও বাংলাদেশ * সংবিধানের চার মূলনীতি কেটেছেঁটে পাকিস্তানীকরণ করা হলো * বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবির, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামীর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাদের রাজপথে নামানো হলো * নাগরিকত্ব হারা গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হলো * পাকিস্তানের পলাতক ও নাগরিকত্ব হারা জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দেশে ফিরিয়ে আনা হলো * রাজাকারদের গাড়িতে শহীদদের রক্তলাল জাতীয় পতাকা তুলে দেয়া হলো * বহু মত ও পথের নামে রাজাকারদের মিডিয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলো * অর্থাৎ বাঙালী জাতির দীর্ঘ সংগ্রাম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমরণ সংগ্রাম-ত্যাগ ভুলিয়ে দেবার অপচেষ্টা চালানো হলো ২ এবং ৩ নবেম্বর কি ঘটেছিল? ১৫ আগস্ট জাতির পিতা ও অন্যদের হত্যা করার পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বঙ্গভবনে কেন্দ্রীভূত করা হয়। খুনী ফারুক-রশীদ সবকিছু করছিল। বাংলাদেশের যুদ্ধাহত দেশপ্রেমিক সমর নায়ক জেনারেল খালেদ মোশাররফ এটা মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি তার দেশপ্রেমিক সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বঙ্গভবনে অভিযান চালান। তার লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র বাহিনীর চেন অব কমান্ড ফিরিয়ে এনে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারা নষ্টদের হাত থেকে রক্ষা করা। তিনি সফলভাবেই তা করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই খুনীরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের চার প্রধান নেতা তথা জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়: * সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী ও বিপ্লবী সরকারের উপরাষ্ট্রপ্রতি তথা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত supreme commander of arm forces অর্থাৎ supreme commander of war of liberation * তাজউদ্দীন আহমেদ মুজিবনগর অস্থায়ী ও বিপ্লবী সরকারের প্রধানমন্ত্রী * এম মনসুর আলী মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য * এ এইচ এম কামরুজ্জামান মুজিবনগর অস্থায়ী ও বিপ্লবী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য * এদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি- ১৫ আগস্ট থেকে ৩ নবেম্বর পর্যন্ত যত হত্যা হয়েছে, প্রধানত বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার করা যাবে না বলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বা দায়মুক্তি আইন জারি করা হয়, যা পরবর্তীতে খুনী জিয়া সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। * জিয়া খুনীদের বিদেশী দূতাবাসে কূটনৈতিক পদে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। এই লোকটি এতই ধূর্ত ছিল, যে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল তাহের তাকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্ত করেছিলেন তাদের দু’জনকেই জিয়া ঠান্ডা মাথায় খুন করেছিলেন। খালেদ মোশাররফকে ৬ নবেম্বর এবং কর্নেল তাহেরকে পরবর্তীতে গোপন ট্রায়ালে হত্যা করে। খালেদ মোশাররফের সাথে আরও দুই দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা -কর্নেল হায়দার বীরউত্তম এবং কর্নেল হুদা বীরবিক্রমকেও হত্যা করা হয়। জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল তাহের ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বীরউত্তম এবং দুজনই মুক্তিযুদ্ধে আহত হয়েছিলেন। * একটি প্রশ্ন, জিয়া নিজে নিজেকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী দেখিয়ে কলকাঠি নেড়েছিলেন কিনা? * ২১ আগস্ট ২০০৪ তারপরও যখন দেখা গেল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামানো যাচ্ছে না তখন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হলো। আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও তাঁর একটি কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলো এবং কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও ৩ শতাধিক আহত হলো। গ্রেনেডের স্পিøন্টার শরীরে নিয়ে ঢাকায় প্রথম নির্বাচিত মেয়র মুহম্মদ হানিফ, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এরই মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন, অনেকে আজো গ্রেনেডের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। এবং পরের বছর ২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। Thanks to almighty Allah, The Rabbul Aalamin and most merciful যে তিনি ঐ সময় বিদেশে পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবং জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা, Contemporary world-এর সবচেয়ে সাহসী, সৎ, চৌকস প্রধানমন্ত্রীকে দেশের হাল ধরতে দিয়েছিলেন বলে, তাঁর নেতৃত্বে আমরা আবার মূল ধারায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পেয়েছি এবং এগিয়ে চলেছি। ঢাকা- ১৫ নবেঃ ২০১৯ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও এমপি সদস্য, মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটি [email protected]
×