ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক

দ্রুত ঋণের অর্থ ছাড়ে চীনের সহায়তা চায় বিদ্যুত বিভাগ

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

  দ্রুত ঋণের অর্থ ছাড়ে চীনের সহায়তা  চায় বিদ্যুত বিভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঋণের অর্থ ছাড়ে চীনের সহায়তা চেয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় বিদ্যুত খাতে বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন। এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও চীনের সঙ্গে কোন প্রকল্পের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। আবার ঋণ চুক্তি হলেও অর্থ ছাড় হয়নি এমন প্রকল্পও রয়েছে। ফলে এসব প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার ঢাকার এক হোটেলে চীনা একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে ঋণের অর্থ ছাড়ে দেশটির সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসি চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে এক দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ঋণ চুক্তি করেছে। অন্যদিকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) চীনা বিনিয়োগে এক দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প রয়েছে। ঋণ প্রদানের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট হলেও এখনও চূড়ান্ত চুক্তি করেনি এক্সিম ব্যাংক। বিদ্যুতের সঞ্চালন এবং বিতরণ আধুনিকায়নের দুই প্রকল্প বাস্তবায়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখন ঋণের অর্থ প্রাপ্তিকে সব থেকে বড় জটিলতা মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনা বিনিয়োগে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অপেক্ষাকৃত সময় বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। এতে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কাও করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে ঋণের সঙ্গে বিনিয়োগ রয়েছে এমন প্রকল্পে চীন যত দ্রুত অর্থ ছাড় করছে। অন্যদিকে নিজেদের বিনিয়োগ নেই এমন প্রকল্পে ঋণের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার ইউনান প্রদেশের সেক্রেটারি চেন হাও-এর নেতৃত্বে বাংলদেশ সফরে আসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে চীন বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতের সঙ্গে জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া চেন হাও বলেন, চীন বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। তিনি ভবিষ্যতে জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। চেন হাও বলেন, চীন ভবিষ্যতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে চায় বাংলাদেশে। বৈঠকে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুত খাতের বড় দুই প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ডিপিডিসির প্রকল্পটির জন্য ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। অন্যদিকে পিজিসিরি প্রকল্পের জন্য এখনও ঋণ চুক্তি দ্রুত সই করার ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, চীন এবং বাংলাদেশের সহায়তা বৃদ্ধিতে ঘন ঘন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন করা উচিত। তিনি ইউনান প্রদেশের শহর কুনমিং বাংলাদেশের নিকটবর্তী হওয়ায় উভয় দেশের জন্য বাণিজ্য কেন্দ্র হতে পারে। বৈঠকে বংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার আরও চার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, চীনা ইসিএ ফাইন্যান্সিং (ঠিকাদারের মাধ্যমে অর্থায়ন সংস্থান) করে বাংলাদেশ পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, চীন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প রয়েছে ছয়টি, চীনা বাংলাদেশ সরকারী পর্যায়ে অর্থায়নে আরও বাস্তবায়ন হচ্ছে সাতটি প্রকল্প। আর চীনা ঠিকাদাররা কাজ করছেন বিদ্যুত বিভাগের ৩১ প্রকল্পে। চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসার সময় ২০১৬ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি ঋণ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তবে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকায় প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় যেসব ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ চীন ঐক্যমতে পৌঁছেছিল এর মধ্যে শুধু পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থ ছাড় করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। অন্যগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ চেষ্টা করেও কোন সুরাহা করতে পারেনি। চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ডিপিডিসির ঋণ চুক্তিটি সই হলেও পিজিসিবির ঋণ চুক্তি ঝুলে রয়েছে। পিজিসিবি চীনের অর্থায়নে ১০০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ৩৩০ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনসহ সাবস্টেশন নির্মাণসহ ১৪ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পিজিসিবি। অন্যদিকে, ডিপিডিসি ১৩২/৩৩/ ১১ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন, ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন নির্মাণ এবং ১৩২/৩৩ কেভি ও ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশনের সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণ করবে। চীনা অর্থায়নে ডিপিডিসি ২১৮ সার্কিট কিলোমিটার ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, ২৩৩ সার্কিট কিলোমিটার ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন, ৫৮২ সার্কিট কিলোমিটার বিতরণ নেটওয়ার্ক, ১১৫ সার্কিট কিলোমিটার ১১/০.৪ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। এছাড়া তারা বিল্ডিং, আধুনিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
×