ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২০ ছবি লাখ টাকায় কিনে নেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি

পঙ্গু ইব্রাহিম মুখ দিয়ে ছবি আঁকে

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

পঙ্গু ইব্রাহিম মুখ দিয়ে ছবি আঁকে

মুখ দিয়ে ছবি এঁকে নজির সৃষ্টি করছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের চককেশব বালুবাজার গ্রামের যুবক এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। হুইল চেয়ারে বসা দুই পা পুরোপুরি অবশ। তবে মাথা ও মুখ খুব ব্যস্ত। মুখে তুলি। ঘাড় ঘুরিয়ে বার বার রং নিচ্ছেন আর ছবি আঁকছেন। হুইল চেয়ারের সঙ্গে বিশেষ উপায়ে লাগানো ক্যানভাসে গরু, গাছ, পাখি, মানুষসহ বিভিন্ন ছবি আঁকছেন এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। তবে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোন রকমে চলছে তার সংসার। স্থানীরা জানায়, দুই পা সচল ছিল তার। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। কাজ করতেন দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে। গত ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারণে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে পড়ে হারিয়েছেন দুই হাত, আর পঙ্গু হয়েছে তার পা। এতে তার সব ওলট-পালট হয়ে গেল। লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ঘটল দূর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়ে ফেলেন তার দুটি হাত। চিকিৎসার খরচ পল্লীবিদ্যুত নিলেও নেয়নি তার ভবিষ্যত জীবনের দায়িত্ব। তাই নিজ চেষ্টায় তিনি ছবি আঁকা শিখে নিজের কর্মকে সবার কাছে তুলে ধরেছেন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ আট বছর। এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমের হাত নেই, পঙ্গু হয়েছে দুই পা। তবে কি হয়েছে তাতে। তবুও মুখ দিয়ে এঁকে চলেছেন এক মনে বিভিন্ন রকমের ছবি। মুখ দিয়ে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম বলেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় সবার কাছে শুনেছেন, লাভলী নামে একজন মুখ দিয়ে ছবি আঁকতেন। লাভলীর সঙ্গে তার কখনও দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনেই উৎসাহ বাড়ে তার। তিনি বলেন, প্রথম দিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথা ঘুরত। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারতেন। বেশি ভাল লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। তবে বর্তমানে বেশিক্ষণ ছবি আঁকতে পারেন না। একটানা ছবি আঁকলে গায়ে জ্বর আসে। শরীরের সার্বিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভাল নেই। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে বসে মুখের সাহায্যে পেন্সিল ও রং তুলি দিয়ে ছবি আঁকেন। উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের চককেশব বালুবাজার নিজ গ্রামে এক বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বসবাস করছেন মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। গত চার বছর যাবত তিনি তার বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতার কারণে নিজ বাড়ি চককেশব বালুবাজারে আছেন। তিনি ভালবাসেন গ্রাম বাংলা ও প্রকৃতির ছবি আঁকতে। নিজ বাড়িতে থেকে তার মুখ দিয়ে অঙ্কনকৃত ছবি প্রদর্শনী অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই তিনি যদি সুযোগ পান তবে তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চান। তিনি বেশ গর্ব নিয়ে জানালেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় তার আঁকা ছবি দিয়ে অনেক প্রদর্শনী হয়েছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল নিয়মিত। তাদের মাধ্যমেই ছবিগুলো আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। ছবির দাম নিয়ে দেন দরবার তেমন একটা করা হয় না। বেশির ভাগ সময়ই একেকজন খুশি হয়ে যা দেন, তাই নেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি তার কাছ থেকে ২০টি ছবি নিয়ে এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন সে কথাও জানালেন তিনি। বর্তমানে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোন রকমে চলছে তার সংসার। মান্দার পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান বলেন, মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড এবং তার মায়ের জন্য বিধবা ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা না থাকায় ইব্রাহিমের প্রতিভাকে সে বিকশিত করতে সক্ষম হচ্ছে না। যদি বড় পর্যায়ে কখনও তার প্রতিভাকে দেখানোর সুযোগ পান তবে তিনি একদিন দেশের সম্পদ হয়ে উঠবেন। মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, দুই হাত নেই তবুও তিনি মুখের সাহায্যে এঁকে চলেছেন বিভিন্ন রকমের ছবি। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×