ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছোট্ট জান্নাতির ঘাড়ে সংসারের বোঝা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

 ছোট্ট জান্নাতির ঘাড়ে সংসারের বোঝা

দেখলেই অবাক লাগে। যেন গল্পের কোন অংশ, শুনছিলাম। ছয় বছরের জুনায়েদ। চটপট বলল ছোট ওয়ানে পড়ে। আর বোন জান্নাতি ক্লাস ফোরে পড়ছে। এরই মধ্যে বাবা আলমগীর হোসেনকে নিয়ে তিনজনের সংসারের রান্না, খাওয়া-দাওয়া সব করছে জান্নাতি। অতটুকু মেয়ে প্রতিবন্ধী বাবা আর ছোট্ট ভাইকে নিয়ে সংসারের সবকিছু সামলে নিচ্ছে। আবার পড়ছে। ভাবতেও অবাক লাগে। এভাবে আরও দুই বছর আগেই সংসারের সকল কাজ গৃহিণীর মতো করে যাচ্ছে জান্নাতি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাতের একদিন পরে কলাপাড়ার সবচেয়ে বিপদাপন্ন জনপদ রাবনাবাদ পাড়ের চারিপাড়ায় যাচ্ছিলাম। চেনা জনপদের রাস্তা গত সাত বছরে ভেঙ্গে মিশে গেছে বিলের সঙ্গে। এখন ইটবিছানো রাস্তাটি অচল। মানুষ চলাচল করছে ছোট্ট ডিঙি নৌকায় করে। সিডরে বিধ্বস্ত সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় এসব জনপদের বেহল দশা হয়েছে। জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত ভাসছে। বুলবুল তো বাড়িঘরও ভাসিয়েছে। ছোট্ট জান্নাতি ও জুনায়েদ জানালো ঝড় বুলবুলের কবল থেকে নিজেদের রক্ষায় নাওয়াপাড়া গ্রামের জীর্ণ ঘরটিতে বাবাকে রেখে ওরা গিয়েছিল মেরাউপাড়া এক কাকার বাড়িতে। একত্রে নৌকায় ওঠার পরে ঝটপটে জুনায়েদ উঠেই নৌকার বৈঠা ধরে বসল। যেন ঝড়-ঝঞ্ঝার সঙ্গে যুদ্ধাংদেহী মনোবল নিয়ে বেড়ে ওঠা। জুনায়েদ শোনাল তার মা শাহীনুর তার অপর দুই বোনকে নিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করছে। প্রায় ছয় মাস কেউ বাড়িতে আসেনি। প্রশ্ন ছিল জান্নাতির কাছে, কি কি রান্না করতে পারে। ঝটপট জুনায়েদের উত্তর; মাছ, ভাত, ইলিশ মাছ, ডাল, শাক-সবজি সব রান্না করতে পারে (জান্নাতি)। ছোট্ট দুই ভাই-বোনের সঙ্গে জানতে জানতে যেন অবাক হচ্ছি। হতবাক বনে গেছি। হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন ধোয়া, রান্নাবান্নার সব কাজ সেরে জলদি স্কুলে ছোটা। জান্নাতি জানায়, তার বাবা ভাল ছিল। সুস্থ ছিল। মাছ ধরতেন রাক্ষুসে রাবনাবাদ নদীতে। হঠাৎ একদিন ঠাডায় (বজ্রপাতে) গুরুতর আহত হয়। বাম হাত বরাবর কোমর পর্যন্ত অবস হয়ে যায়। এরপরে কাজকর্মে অচল হয়ে যায়। এখন অনেকটা সুস্থ। আবার কাজ করছেন; যতটুকু পারেন। রাক্ষুসে রাবনাবাদ পাড়ের এ মানুষগুলো যেন ছোট্ট থেকেই যুদ্ধের মনোভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে তার বাস্তব উদাহরণ এই খুদে দুই ভাই-বোন। যে বয়সে বাবা-মায়ের কোলজুড়ে থাকা। তাঁদের কোলের বোঝা হওয়ার কথা। কিংবা আদর-সোহাগে দিন কাটানোর কথা। সে বয়সে পুরো সংসারের ভার বইছে এ জান্নাতি। রাবনাবাদকে যেন বলছে এরা লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্য মোদের জীবন গড়া। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×