ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেতু আছে সড়ক নেই ॥ দুর্ভোগে এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

 সেতু আছে সড়ক নেই ॥ দুর্ভোগে এলাকাবাসী

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের একটি অবহেলিত গ্রাম ভীমপুর। শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। এই প্রত্যন্ত এলাকায় একটি রাস্তা থাকলেও তা বছরের অর্ধেক সময় থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমে কালিপুর, সুনলিয়া, হাতাস, প্রতাপদহ ও শশিধরপুরসহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের প্রতিনিয়তই চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় তাদের একমাত্র ভরসা। ভীমপুর থেকে বিল মুনছুর পার হয়ে হাতাস গ্রাম। দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। যেখানে সড়কের সংযোগ ছাড়াই রয়েছে চারটি ব্রিজ। বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজগুলো কোন কাজে আসে না। রাস্তা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে যা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। জানা গেছে, সদর উপজেলার শহরের আরজি-নওগাঁ শাহী মসজিদ থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার রাস্তা। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার রাস্তা পাকা করা হয়েছে। আবার দুবলহাটি বাজার থেকে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত বাকি আছে ছয় কিলোমিটার। দুবলহাটি বাজার থেকে হাঁসাইগাড়ী বিলের মধ্য দিয়ে কাটখৈর বাজার হয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত যে পাকা সড়ক রয়েছে তার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। অপরদিকে, দুবলহাটি বাজার থেকে প্রতাপদহ, শশিধরপুর, কালিপুর, চোয়ারপাড়া, হাতাস, মধ্যহাতাস ও সুনলিয়া গ্রাম হয়ে বারোমাসা (বিল মুনছুর) বিলের মধ্য দিয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হলে প্রায় নয় কিলোমিটার সাশ্রয় হবে। এগুলো সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। এসব গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে ঠিক সময় নিতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রামের মানুষদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। বর্ষার সময়ে এ গ্রামগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে এক একটি দ্বীপ। এ ছয় কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হলে সদর উপজেলাসহ জেলার মান্দা উপজেলার ও মহাদেবপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে। একই সড়কের ভীমপুর গ্রাম থেকে বারোমাসা বিল পার হয়ে হাতাস গ্রামের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। যেখানে সড়কের সংযোগ ছাড়াই রয়েছে চারটি ব্রিজ। বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজগুলো কোন কাজে আসে না। বছরে চার মাস রাস্তা পানির নিচে ডুবে থাকে। এই রাস্তা না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের মাঠের ন্যায্য ফসল পাওয়া থেকেও অনেকটাই বঞ্চিত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্যার সময় গ্রামগুলোর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। ব্রিজ আছে কিন্তু রাস্তা নাই। রাস্তা হলে অনেক উপকার হতো। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে দ্রুত বোরো ধান সংগ্রহ করা যেত। এমনকি ফসলের চাষ ও পরিচর্যাও করা যেত সহজেই। শুধু যাতায়াত বিড়ম্বনার জন্য ফসল অনেকটা কম হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হলে বোরো চাষাবাদ করতে সহজ হয়। এমনকি আরও কয়েক শ’ টন ধান বেশি উৎপাদন হবে বলেও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা। রাস্তা হলে সহজেই ক্ষেতের জমিতে যাতায়াত করা এবং সময়, শ্রম ও ফসলহানির শঙ্কাও কমে যেত। আর ফসলের উৎপাদনও হতো দ্বিগুণ। নওগাঁ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইমতিয়াজ জাহিরুল হক বলেন, ওই রাস্তা সংস্কারে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসার পর রাস্তাটি সংস্কার করা হবে। নওগাঁ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ওই রাস্তাটি এলাকাবাসীর জন্য খুবই জরুরী। রাস্তা করা হলে বিশেষ করে কৃষি কাজের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। প্রতি বছরই কৃষকদের ফসল নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
×