ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের এক দেশ দুই নীতি প্রথা হুমকির মুখে ॥ শি জিনপিং

সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে

হংকংয়ে চীনবিরোধী বিক্ষোভে চলমান সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। বুধবার পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ চলাকালে আহত এক বৃদ্ধ শুক্রবার মারা গেছেন। বর্তমানে লন্ডন সফররত হংকংয়ের চীনপন্থী আইনমন্ত্রী টেরেসা চ্যাংয়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবারের ওই হামলায় টেরেসা চ্যাং গুরুতর আহত হন। নিহত ৭০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলে জানা গেছে। বুধবার হংকংয়ের সীমান্তবর্তী শিউং সুই শহরে বিক্ষোভ চলাকালে একদল মুখোশ পরিহিত বিক্ষোভকারী নিহত বৃদ্ধার মাথায় একটি শক্ত বস্তু ছুড়ে মারে। খবর বিবিসি, এএফপি, আল জাজিরা ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, হংকংয়ে চলমান বিক্ষোভে চীনের এক দেশ দুই নীতি প্রথা হুমকির মুখে পড়েছে। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলন বক্তৃতার সময় তিনি এ কথা বলেন। ওদিকে লন্ডনে হংকংয়ের আইনমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়েছে বেজিং। শুক্রবার এক বিবৃতিতে চীন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টেরেসা চ্যাংয়ের ওপর হামলা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে চীন। এতে জড়িত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। হংকংয়ে গত পাঁচ মাস ধরে চীন বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভ প্রথমে শান্তিপূর্ণ থাকলেও ক্রমেই তা সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। তবে বিক্ষোভে এই প্রথম কোন মন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটল। বিক্ষোভে আহত বৃদ্ধের মারা যাওয়ার ঘটনায় হংকং পুলিশ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, বুধবার শিউং সুই শহরের বিক্ষোভের সময় উভয়পক্ষ ইটপাটকেল ছুড়ছিল। এ সময় একটি ইটের টুকরো এসে ওই বৃদ্ধের মাথায় লাগে। এরপর আহত বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার তিনি মারা যান। এই ধরনের কাপুরুষোচিত কর্মকা- থেকে সবাইকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে হংকংয়ের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মৃত্যু কোন কিছুর সমাধান নয়। মুখোশ পরে বিক্ষোভে অংশ নেয়াকে অত্যন্ত বিপজ্জনক পদক্ষেপ আখ্যা দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। হংকং কর্তৃপক্ষ সেখানকার আইনমন্ত্রীর ওপর হামলা বিষয়ে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, আইনমন্ত্রী টেরেসা চ্যাংকে খুনী আখ্যা দিয়ে একদল লোক তার ওপর হামলে পড়ে। এতে তার শরীর মারাত্মক জখম হয়। এরপর আহত টেরেসা চ্যাং বিষয়টি দ্রুত লন্ডন পুলিশকে আবহিত করেন এবং এতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানান। টেরেসা চ্যাংয়ের ওপর হামলা ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়ে, হংকংয়ের চীনপন্থী প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বলেছেন, কোন সভ্য সমাজে এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ বেমানান। আমি এতে জড়িতদের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। ওদিকে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং হংকং বিক্ষোভের সমালোচনা করে বলেছেন, হংকংয়ে চলমান সহিংস বিক্ষোভ চীনের এক দেশ দুই নীতি প্রথাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই এখন হংকংয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। এ সময় হংকং পুলিশের কর্মকা-ের ওপর দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন শি জিন পিং। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হংকং ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। ওই বছরই হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। এরপর থেকে চীনে এক দেশ দুই নীতি প্রথা চলে আসছে। হংকংয়ে ক্রমবর্ধমান সহিংস পরিস্থিতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারী উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মর্গান ওর্তেগাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগের সঙ্গে হংকং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ওর্তেগাস বলেন, ‘আমরা উভয়পক্ষের সহিংসতার কঠোর নিন্দা এবং এ সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আমরা পুলিশ ও বিক্ষোভকারী সকল পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। মূল ভূখ- চীন থেকে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক মুক্তির দাবি অর্জনের লক্ষ্যে হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়া টানা ২৫ সপ্তাহের ক্রমবর্ধমান সহিংস সমাবেশ অনেকটা অসহনীয় হয়ে ওঠেছে। চীন বরাবর হংকং বিক্ষোভের পেছনে বিদেশী শক্তির হাত রয়েছে বলে দাবি করছে। বেজিং মনে করে ওয়াশিংটন হংকং বিক্ষোভে মদদ দিচ্ছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বেজিংয়ের এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
×