ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় ব্রিজ আছে রাস্তা নেই

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

নওগাঁয় ব্রিজ আছে রাস্তা নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের একটি অবহেলিত গ্রাম ভীমপুর। শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৬কিলোমিটার। এই প্রত্যন্ত এলাকায় একটি রাস্তা থাকলেও তা বছরের অর্ধেক সময় থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমে কালিপুর, সুনলিয়া, হাতাস, প্রতাপদহ ও শশিধরপুরসহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের প্রতিনিয়তই চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় তাদের একমাত্র ভরসা। ভীমপুর থেকে বিল মুনছুর পার হয়ে হাতাস গ্রাম। দুরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। যেখানে সড়কের সংযোগ ছাড়াই রয়েছে ৪ টি ব্রিজ। বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজগুলো কোন কাজে আসেনা। রাস্তা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে যা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। জানা গেছে, সদর উপজেলার শহরের আরজি-নওগাঁ শাহী মসজিদ থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২কিলোমিটার রাস্তা। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৬কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। আবার দুবলহাটি বাজার থেকে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত বাঁকী আছে ৬কিলোমিটার। দুবলহাটি বাজার থেকে হাঁসাইগাড়ী বিলের মধ্য দিয়ে কাটখৈর বাজার হয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত যে পাকা সড়ক রয়েছে তার দুরত্ব প্রায় ১৫কিলোমিটার। অপরদিকে, দুবলহাটি বাজার থেকে প্রতাপদহ, শশিধরপুর, কালিপুর, চোয়ারপাড়া, হাতাস, মধ্যহাতাস ও সুনলিয়া গ্রাম হয়ে বারোমাসা (বিল মুনছুর) বিলের মাঝ দিয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হলে প্রায় ৯কিলোমিটার সাশ্রয় হবে। এ এলাকাগুলো সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। এসব গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে ঠিক সময় নিতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রামের মানুষদের চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। বর্ষার সময়ে এ গ্রামগুলো দুর থেকে দেখলে মনে হবে এক একটি দ্বীপ। এ ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হলে সদর উপজেলাসহ জেলার মান্দা উপজেলার ও মহাদেবপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে। একই সড়কের ভীমপুরগ্রাম থেকে বারোমাসা বিল পার হয়ে হাতাস গ্রামের দুরুত্ব প্রায় ১কিলোমিটার। যেখানে সড়কের সংযোগ ছাড়াই রয়েছে ৪টি ব্রিজ। বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজগুলো কোন কাজে আসে না। বছরে চার মাস রাস্তা পানির নিচে ডুবে থাকে। এই রাস্তা না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের মাঠের ন্যায্য ফসল পাওয়া থেকেও অনেকটাই বঞ্চিত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্যার সময় গ্রামগুলোর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। ব্রীজ আছে কিন্তু রাস্তা নাই। রাস্তা হলে অনেক উপকার হতো। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে দ্রুত বোরো ধান সংগ্রহ করা যেতো। এমনকি ফসলের চাষ ও পরিচর্যাও করা যেত সহজেই। শুধু যাতায়াত বিড়ম্বনার জন্য ফসল অনেকটা কম হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সংষ্কার করা হলে বোরো চাষাবাদ করতে সহজ হয়। এমনকি আরো কয়েক শ’ মেঃটন ধান বেশি উৎপাদন হবে বলেও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা। রাস্তা হলে সহজেই ক্ষেতের জমিতে যাতায়াত করা এবং সময়, শ্রম ও ফসলহানীর শঙ্কাও কমে যেত। আর ফসলের উৎপাদনও হতো দ্বিগুণ। নওগাঁ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইমতিয়াজ জাহিরুল হক বলেন, ওই রাস্তা সরস্কারে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৮কোটি টাকার একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসার পর রাস্তাটি সংস্কার করা হবে। নওগাঁ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ওই রাস্তাটি এলাকাবাসীর জন্য খুবই জরুরী। রাস্তা করা হলে বিশেষ করে কৃষি কাজের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। প্রতি বছরই কৃষকদের ফসল নিয়ে দূর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
×