ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুলবুল তান্ডবের পর কলাপাড়ার চাষীদের দরকার বীজ ও আর্থিক প্রণোদনার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

বুলবুল তান্ডবের পর কলাপাড়ার চাষীদের দরকার বীজ ও আর্থিক প্রণোদনার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ ১২ মাস সবজির আবাদ করেন কৃষক সুলতান গাজী। এবারও চারজন শ্রমিক নিয়ে একমাস খেটে দেড় একর জমিতে ফুলকপি, টমেটো, বেগুন ও মুলার আবাদ করেছিলেন। এখন সব শেষ। গাছগুলো মরে ঢলে পড়েছে। অর্ধেকটা পচে গেছে। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন সুলতান গাজী। জানালেন, কমপক্ষে তিনলাখ টাকার ফলন পেতেন। এখন সব শেষ। ২৪ শতক জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলেন কৃষক দুলাল চৌধুরী। বীজ, চাষাবাদ, সারসহ পারিশ্রমিক নিয়ে অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকার ফলন পাওয়ার আশা ছিল এ চাষীর। এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। চারাগাছ গুলো নেতিয়ে শুকিয়ে গেছে। পানি নেমে গেছে, কিন্তু গাছগুলো আর বাচবে না। একই দশা জহিরুল ইসলামের ৩০ শতক ক্ষেতের। ফুলকপি আর বেগুন চারা এখন মরে যাচ্ছে। বৃদ্ধ হোসেন চৌধুরীর ভাষ্য, ‘এ্যাতো গ্যাছে। শ্যাষ।’ জানালেন, সবজির ক্ষেত তৈরি করতে দৈনিক একজন মানুষের মজুরি দিতে হয়েছে ৬০০/৭০০ টাকা। বীজসহ সার ও কীটনাশক কেনা। পরিচর্যা করতে হয়েছে। এখন সব শেষ। কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামটির সকল সবজি চাষীর একই দশা। আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ করেছিলেন এসব চাষী। লাভের মুখ দেখার বদলে এখন সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ৩৬ শতক জমিতে বেগুনের আবাদ করেছিলেন একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। লকলক করে বেড়ে উঠেছিল গাছগুলো। ফল ধরেছিল। সবুজের সমারোহে ভরা ক্ষেতটি এখন বিধ্বস্ত দশায়। গাছগুলো মরে যাচ্ছে। জানালেন রাজ্জাক, ১০ গ্রাম বীজ ৬০০ টাকা করে সাত হাজার টাকার বীজ কিনতে হয়েছিল। দশ হাজার টাকার সার ও ওষুধ লেগেছে। আর ক্ষেত তৈরির খরচ তো আছেই। এখন এ কৃষক দু’চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। শহীদুল গাজীর মুলা, লালশাকের ২৪ শতকের ক্ষেতটি এখন বর্ণহীন। ঘুর্ণিঝড় বুলবুল তান্ডবে এসব চাষীর চরম সর্বনাশ হয়ে গেছে। আবুল কালামকে সবজি চাষী ছাড়া অন্য কোন পরিচয়ে কেউ চেনে না। তার ৩০ শতক জমির সবজির ক্ষেত শেষ হয়ে গেছে। জাকির হোসেনের ২৪ শতক জমির ফুলকপি, বেগুন সম্পুর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। গোটা কুমিরমারা গ্রামের অন্তত ৭০ চাষীর এভাবে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার সবজির আবাদ নষ্ট করে দেয় বুলবুল। শাক-সবজি বিক্রি করে কয়দিন পরে হাজার হাজার টাকা আয় করার কথা। এখন উল্টো লোকসানের ভারে সবাই কাহিল হয়ে পড়েছেন। নতুন করে ফের বীজসহ টাকা সংগ্রহ করে ক্ষেত তৈরি করার মত সক্ষমতা নেই অধিকাংশের। শুধু কুমিরমারা নয়। একই দশা এলেমপুর, মজিদপুর, আমিরাবাদ, ইসলামপুর, উমেদপুর, বাইনতলাসহ ছয়টি গ্রামের অন্তত ৩০০ সবজি চাষীর। এছাড়া অপর ১১ ইউনিয়নে আরও সাত শতাধিক সবজি চাষীর এমন সর্বনাশ হয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে কৃষকের সঙ্গে কথা না বললে বোঝার উপায় নেই এসব কৃষক কতোটা ক্ষতির শিকার হয়ে গেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যানুসারে, বুলবুলের তান্ডবে কলাপাড়ায় মোট এক হাজার দুই শ’ ৮৪ একর জমির শাক-সবজির ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৫ একর শাক-সবজির ক্ষেত সম্পুর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, চাষীদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
×