ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর মেলার প্রথম দিনেই বিপুল সাড়া ॥ প্রধানমন্ত্রীর রিটার্ন দাখিল

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

আয়কর মেলার প্রথম দিনেই বিপুল সাড়া ॥ প্রধানমন্ত্রীর রিটার্ন দাখিল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’-সেøাগানে শুরু হয়েছে আয়কর মেলা। প্রথম দিনেই আয়কর মেলায় করদাতাদের বিপুল সাড়া পাওয়া গেছে। মেলা উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রিটার্ন দাখিল করেন সাবেক অর্থসচিব সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়া সকাল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে করদাতারা বিভিন্ন বুথে লাইন ধরে ফরম নিয়ে রিটার্ন দাখিল করেন। ব্যাংকগুলো কমিশন চার্জ ছাড়াই সেবা দিচ্ছে গ্রাহকদের। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরেই মেলায় আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী করের তথ্য প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার আমার করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে আয়কর দিয়েছি ৯১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আমার প্রকৃত সম্পদ ৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ সময় স্ত্রী ও দুই মেয়ের করযোগ্য আয়, সম্পদের পরিমাণ ও কর পরিশোধের তথ্যও তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তিনি কর দিয়েছেন ৭১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। আমার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ৫০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আমার বড় মেয়ের করযোগ্য আয় ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তিনি কর দিয়েছেন ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তার সম্পদের পরিমাণ ৪১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর আমার ছোট মেয়ের করযোগ্য আয় ৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এতে সে কর দিয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তার সম্পদ ৬১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এনবিআর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিনিধির মাধ্যমে আয়কর দিয়েছেন। তিনি নিজে উপস্থিত নেই। আইন অনুযায়ী যার কর তিনি নিজে না জানালে তা প্রকাশ করা যায় না। এবার রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে সাতদিন, জেলা শহরগুলোয় চারদিন, ৪৮ উপজেলায় দুইদিন এবং ৮ উপজেলায় দিনব্যাপী আয়কর মেলার আয়োজন করেছে এনবিআর। সবমিলে দেশের ১২০ স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আয়কর মেলা। মেলা চলবে ২০ নবেম্বর পর্যন্ত। এবারের মেলায় প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেয়া যাচ্ছে। রকেট, ইউপে, বিকাশ, নগদ এবং শিওর ক্যাশ এনবিআরের ই-পেমেন্ট পোর্টালের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এদিকে, প্রতিবছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য আয়কর মেলায় কর বিবরণী থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য ব্যাংক ও বুথ রয়েছে। করদাতাকে শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে। মেলায় নতুন করদাতারা ইলেক্ট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে পারবেন। এছাড়া ই-পেমেন্টের জন্য পৃথক বুথ রয়েছে। এছাড়া অন্যান্যবারের সব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি এবার মেলায় মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য আলাদা বুথ রয়েছে। প্রসঙ্গত, গতবছর আয়কর মেলায় ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬ নাগরিক সেবা নেন। রিটার্ন জমা হয় চার লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩টি। আর কর আদায় হয় দুই হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৫ টাকা। নতুন নিবন্ধন নেন ৪৫ হাজার ৪৩৭ জন করদাতা। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের কর দিতে হবে। সরকার দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আয়কর আদায় করে। তাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে দেশের সার্বিক কল্যাণে আয়কর দিতে হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে আমাদের অবশ্যই অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজন অর্থের আর আয়করের মাধ্যমে সেই অর্থ জোগাড় করা হয়। আয়কর প্রদানের মাধ্যমে আমাদের ধর্মীয় দায়িত্বও পালিত হয়। কেননা আমাদের আয়ে রয়েছে পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার। রয়েছে তাদের অংশ দেয়ার বিষয় ধর্মীয় নির্দেশনা। তাই কর প্রদানের মাধ্যমে আমাদের সে দায়িত্বও পালিত হয়। এছাড়া সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়তে অবশ্যই আমরা সকলে কর প্রদান করব।
×