ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ষ প্রতিকারের সুপারিশ হয় বাস্তবায়ন হয় না ষ জনবল সঙ্কট চরমে

স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাই সমাধান

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাই সমাধান

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ২০১০ সালে নরসিংদীতে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলি ও ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যান ১২ যাত্রী। ২০১৬ সালে ভুল সিগন্যালে নরসিংদীর আরশীনগরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস কমিউটার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে মারা যান ২ যাত্রী। দুটি বড় বড় ট্রেন দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলওয়েকে বেশকিছু সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাস্তবতা হলো সুপারিশের বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। সুপারিশে কমিটির তৎকালীন প্রধান বলেন, রেলওয়ে এখনও তার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেনি। ফলে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া ভারতসহ উন্নত দেশগুলোতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন চললেও আমাদের দেশে প্রযুক্তিগত ব্যবহার বাড়ছে না। অথচ রেল সংশ্লিষ্টরা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে একের পর এক বিদেশে প্রশিক্ষণ নিলেও তা রেল যোগাযোগ খাতে দৃশ্যামান হচ্ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, নরসিংদীতে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে তদন্ত করে আমরা কিছু সুপারিশ করেছিলাম। সেখানে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে অথবা চালকরা সিগন্যাল অমান্য করলে ট্রেনকে থামানো সম্ভব হয় এ রকম প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি যতটুকু জানি এ বিষয়ে আর কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।’ তিনি বলেন, অন্যান্য দুর্ঘটনায়ও যেসব প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তা রেল বিভাগের বাইরে কারও জানার সুযোগ নেই বললেই চলে। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ীদের দেয়া হয়েছে এক অথবা দুই বছরের বেতন বৃদ্ধি বন্ধসহ লঘুদ-। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার ব্রহ্মণবাড়িয়া। এতে ১৬ জন নিহত ও শতাধিত আহতের ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনার তিনদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস বেলা আড়াইটার দিকে দুর্ঘটনায় পড়ে বলে পশ্চিম রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আটটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ট্রেনে আগুন ধরে যায়। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিটি ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় নিরাপদ যোগাযোগ হিসেবে পরিচিত রেলপথ থেকে যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। ফলে রেলে লোকসান বাড়বে। রেলপথ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাসিব মোহাম্মদ আহসান বলেন, নরসিংদিতে ট্রেন দুর্ঘটনা তদন্তের পর পরবর্তীতে এ রকম ঘটনা রোধে বুয়েট যা সুপারিশ করেছিল সে অনুযায়ী রেলওয়ে কাজ করলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হতো। হয়তো একসময় বন্ধই হয়ে যেতে পারত এ রকম ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রয়োজন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলপথ ডিজিটালের কথা মুখে বললেও রেলওয়ের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণ আর কীভাবে প্রকল্প বাগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়েই বেশি ব্যস্ত। দুর্ঘটনা কমাতে রেলপথ স্বয়ংক্রিয় করার কোন বিকল্প নেই। রেলপথ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাসিব মোহাম্মদ আহসান বলেন, একটা রেল কখন কোথায় থাকবে এর পুরো ইনফরমেশটা একটা সেন্ট্রেল কন্ট্রোলে থাকবে। রেলওয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবীর হোসেন বলেন, অনেক ড্রাইভার এবং গার্ড সতেজ আছে। নতুন করে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। উন্নত দেশগুলো অনেক এগিয়েছে। তাদের ওখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন চলে। আমাদের দেশের কর্মকর্তারা সেখানে যান। শুধু প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু আমাদের দেশের জন্য তা কোন কাজে আসে না। সুপারিশ বাস্তবায়ন নেই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ের কাজে নিয়োজিতদের অবহেলা আর যাত্রীদের অসচেতনতায় ট্রেন দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনা ঘটলেই তদন্ত কমিটি হয়, তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে দেয়া সুপারিশের কোন কিছুই বাস্তবায়ন হয় না। সমাধান হয় না ত্রুটি-বিচ্যুতির। ফলে অভিন্ন সমস্যায় ট্রেন দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। জানা গেছে, রেলওয়ের প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের সাময়িক বরখাস্ত কিংবা তিরস্কারের মধ্যেই শাস্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। গত ২০ বছরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৫৭০টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার অধিকাংশই ঘটেছে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে। এ ছাড়া সিগন্যাল ও লাইনের ত্রুটি, চালকের ভুল ও যাত্রী অসাবধানতায়ও বিপুলসংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পরও সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকায় অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি রেল বিভাগ। টঙ্গী থেকে গে-ারিয়া পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার রেললাইন যেন মৃত্যুফাঁদ। মগবাজার, বনানী, কুড়িল রেলক্রসিং পারাপারে অসতর্ক পথচারী মারা যাওয়ার সর্বাধিক ঘটনা ঘটে বলেও রেলওয়ে সূত্র জানায়। রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) তথ্যে জানা যায়, ২০১৫ সালে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৯২ জন। অপমৃত্যু (ইউডি) মামলাসহ মোট মামলা হয়েছে ২৮৫টি। ২০১৬ সালে রেল দুর্ঘটনায় মারা যান ৩০৫ জন। গত এপ্রিলের আগের ১৫ মাসে মারা গেছে ২৭৮ জন। শুধু গে-ারিয়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ঢাকা সিটিতে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৯৩ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং, অপরিকল্পিত সংযোগ সড়ক এবং সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি রেলে দুর্ঘটনার পেছনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর অব্যবস্থাপনাও দায়ী। গত বছরের ১১ আগস্ট শায়েস্তাগঞ্জ-রশিদপুর সেকশনে বি-স্পেশাল-২ নামের ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। মূলত লাইন সম্প্রসারণের ফলে ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে রেলের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। ২০ আগস্ট দুর্ঘটনায় পড়ে আখাউড়া সেকশনের ৯৫১ নম্বর ট্রেন। দীর্ঘদিন ধরে ট্র্যাক মেরামত না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণ পায় রেলের পরিবহন বিভাগ। এছাড়া ১১ আগস্ট নাথেরপেটুয়া-সোনাইমুড়ী সেকশনে ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে ৮৮ নম্বর ডেমু ট্রেনের। মূলত অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া টঙ্গী স্টেশনের কাছে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় আতঙ্কিত লোকজনের লাফালাফিতে অন্তত চারজন নিহত ও ২০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান বলেন, রেল এখনও নিরাপদ বাহন হিসেবে জনপ্রিয়। বেশকিছু উন্নয়ন কর্মকা- শেষ হলেও ইঞ্জিন কোচ সঙ্কটের পাশাপাশি লুপ ও শাখা লাইনগুলোর নাজুক অবস্থার কারণে প্রকৃত সেবা দিতে পারছে না রেলওয়ে। বর্তমানে দীর্ঘদিনের পুরনো রেললাইনগুলো পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলওয়ের সেবার মান আরও বাড়বে, কমেবে দুর্ঘটনাও। ট্রেন একাই চলে গত মাসে চালক ছাড়াই ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহীতে যায় ‘পাবনা এক্সপ্রেস।’ ওই ঘটনায় দায়ী চালক, সহকারী চালক, ট্রেনের পরিচালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর চালকদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি সামনে আসে। ওই ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক দুজনই পাকশী রেলওয়ে শ্রমিক লীগের বড় নেতা। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত চালকরা দায়িত্বে ফাঁকি দেন বেশি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না রেলের স্থানীয় বিভাগগুলো। আবার কাউকে শাস্তি দিলে চালক সঙ্কটের কারণে কিছুদিন পর তাকে ফিরিয়ে আনতে হয়। ২০০৮ সালে কমলাপুর স্টেশনে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন চালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। চালক সঙ্কটের কারণে আট মাস পর তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়। জনবল সঙ্কট ও যান্ত্রিক ত্রুটি ॥ রেলে লোকোমাস্টার (চালক) পদ রয়েছে এক হাজার ৭৪২টি। এর প্রায় ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬১৬টিই শূন্য রয়েছে। ৩৮৮টি সহকারী লোকোমাস্টার (সহকারী চালক) পদের মধ্যে ১৭০টি শূন্য। গত পাঁচ বছরের হিসাবে দেখা গেছে রেল দুর্ঘটনার ৭২ ভাগই ঘটেছে ভুলের কারণে। রেলের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঙ্কটের কারণে চালকদের অতিরিক্ত সময় ট্রেন চালাতে হচ্ছে। ফলে কেউ অপরাধ করলেও তাকে শাস্তি দেয়া যায় না। চালকদের থেকে মানসম্মত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রেন পরিচালনায় সরাসরি সংশ্নিষ্ট স্টেশন মাস্টার পদেও রয়েছে ঘাটতি। এক হাজার ২০৫ পদের ৪৪৯টি শূন্য রয়েছে। এক হাজার ৪৪৫ পদের মধ্যে ১৫৪টি এবং পোর্টারের ৫৪৭ পদের ২৩৮টি শূন্য। বড় ধরনের জনবল ঘাটতির কারণে ট্রেন পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। রেলে বর্তমানে ১৬ হাজারের মতো পদ শূন্য রয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বলেছেন, শূন্য পদ পূরণে রেলকে তাগিদ দিয়েছে কমিটি। দ্রুত নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৮৫-২০০৪ সাল পর্যন্ত রেলে নিয়োগ বন্ধ ছিল। ওই সময়ে ১০ হাজার কর্মীকে অকাল অবসরে পাঠানো হয়। গত ১০ বছরে ১০ হাজার পদ পূরণ করা হয়েছে। আরও চার হাজার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। রেলমন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে যেহেতু টেকনিক্যাল বিভাগ, সে কারণে রাতারাতি এখানে লোক পাওয়া কঠিন। ফলে ট্রেনের চালক যারা অবসরে যাচ্ছেন, তাদেরও চুক্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, ট্রেনের চালকের সঙ্কট থাকায় তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিষয়টিও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখবে বলে তিনি মনে করেন। বুয়েটের এ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শামসুল আলম দুর্ঘটনার পেছনে ট্রেনের চালকসহ রেলওয়েতে লোকবলের ঘাটতিকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলছিলেন, মন্দবাগ ঘটনার পেছনে চালক এখানে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল কিনা, সেটাও একটা বিষয়। চালক অতিরিক্ত পরিশ্রমে বা বাড়তি চাপে ছিল কিনা, সেটা তদন্ত কমিটির খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, রেলওয়েতে এখন অবকাঠামো এবং ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এই বিভাগ অবহেলিত ছিল। জনবলের ঘাটতি কিন্তু ছিল। সে কারণে চালকদের বাড়তি চাপ বহন করতে হতে পারে। এই বিষয়টি বড় কারণ হতে পারে। রেলের সাবেক মহাপরিচালক একেএম রেজাউল করিম মনে করেন, একেকটি দুর্ঘটনার কারণ একেক রকম। কেউ ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব। দশ বছরে তিন হাজার দুর্ঘটনা রেলের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে রেলে দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় তিন হাজার। এসবের বেশিরভাগই হয়েছে চালক সঙ্কট এবং ভুলের কারণে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে তিন হাজার ৪৮৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে প্রাণ গেছে ৪০০ জনের। ২০১৪ সাল থেকে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৭২ ভাগ ঘটেছে মানুষের ভুলে। যাকে রেল কর্তৃপক্ষ ‘হিউম্যান এরর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২৬ ভাগ ঘটেছে যান্ত্রিক ত্রুটিতে। এই এক দশকে রেলে মুখোমুখি সংঘর্ষ, অপেক্ষমাণ ট্রেনে ধাক্কা, চলন্ত ট্রেন থেকে ইঞ্জিন বা বগি খুলে যাওয়া, সংকেত অমান্য করা এবং লাইনচ্যুতির ঘটনাই বেশি। লাইনচ্যুত হওয়া ছাড়া বাকি দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে মানুষের ভুলে। গত সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগ স্টেশনের দুর্ঘটনার জন্যও ভুলকেই দায়ী বলে মনে করছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা, হচ্ছে তূর্ণা নিশীথার চালকের ভুলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা জানা যাবে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে। রেলের সাবেক মহাপরিচালক আবু তাহের বলেছেন, ট্রেন পরিচালনায় অনেকে যুক্ত থাকেন। দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকেই সতর্ক থাকতে হয়। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত হয়। কিছু সুপারিশও করা হয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে। এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন না হলে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। গত ১০ বছরে ট্রেনে তিন শতাধিক দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, আমরা সবাই জানি প্রতিটি দুর্ঘটনার সুপারিশ দেয়া হয়। তারপর বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ দেখি না। তাছাড়া যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কোন তথ্য সরবরাহ করা হয় না। এমনকি নিজেদের বৈঠকেও এ সংক্রান্ত কোন এজেন্ডা থাকে না। ফলে প্রতিটি তদন্ত প্রতিবেদন তিমিরে চলে যায়। মাঠপর্যায়ে কোন পরিবর্তন হয় না।
×