ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মতিয়া চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা দিল পিকেএসএফ

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

মতিয়া চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা দিল পিকেএসএফ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কৃষকদের কল্যাণ ও দারিদ্র্য নিরসন এবং কৃষির উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘উন্নয়ন মেলা ২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মাননা স্মারক মতিয়া চৌধুরীর হাতে তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে একটি সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট এবং ৫০ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়। মতিয়া চৌধুরী তার প্রাপ্ত আজীবন সম্মাননা মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনকে উৎসর্গ করেন। এছাড়া প্রাপ্ত ৫০ হাজার টাকা নালিতাবাড়ি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে ২৫ হাজার টাকা এবং নকলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে ২৫ হাজার টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দারিদ্র্যবিমোচন, টেকসই উন্নয়ন ও মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদানের জন্য বেগম মতিয়া চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করতে পেরে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গর্বিত। সম্মাননা স্মারকে বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রসঙ্গে বলা হয়, তিনি ১৯৪২ সালের ৩০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজেকে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৭ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ সকল প্রগতিশীল ও ছাত্র অধিকার আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব প্রদান করে তিনি ‘অগ্নিকন্যা’ খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ১৯৬৪-৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নিরলসভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করে তিনি প্রতিবাদকর্মী হিসেবে এতদসংশ্লিষ্ট কর্মসূচী ও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ’৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৫ বার কারাবরণ করেন। [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা ও পরামর্শে বেগম মতিয়া চৌধুরীর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের কৃষি খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। কৃষি খাতের এ উন্নয়ন অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক বৃদ্ধিতে কার্যকরভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তিনি ১৯৯৬-০১ মেয়াদের জন্য বেগম মতিয়া চৌধুরীকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করেন। বেগম মতিয়া চৌধুরী দীর্ঘদিনের অবহেলিত কৃষি খাতকে একটি মজবুত ভিত্তি দেয়ার লক্ষ্যে কার্যকরী ও বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। যার ফলশ্রুতিতে সব কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ২০০১-০৮ সাল পর্যন্ত কৃষি খাত আবারও অবহেলিত হয় এবং পুনরায় দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেয়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বেগম মতিয়া চৌধুরী যথাক্রমে তৃতীয়বার ও চতুর্থবারে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয় ক্ষেত্রেই তাকে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। কৃষি খাতকে আজকের এ পর্যায়ে আনার জন্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এ দেশের জনগণ চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। তিনি কৃষকদের মাঝে গুণগত বীজ সরবরাহ, সারের মূল্য হ্রাস এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সময়মতো সার কৃষকদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। অতি সাবধানতা ও নিয়ন্ত্রিতভাবে হাইব্রিড ও জিএমও প্রযুক্তি গ্রহণপূর্বক কৃষি গবেষণাকে উৎসাহিত করে বহু উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করাও ছিল তার দায়িত্বপালনকালীন সময়ে বড় অবদান, যার সুফল আমরা এখন ভোগ করছি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ৩৬২.৭৯ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে স্বয়ংসপূর্ণতা অর্জন করে। এখন ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ স্থানে। পাশাপাশি সবজির আবাদি জমির হার বৃদ্ধিতে বিশে^ প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশে^ তৃতীয় স্থানে রয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সবজি রফতানি আয় বেড়েছে ৩৪% এবং কৃষিজাত খাদ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ৬০%। গত এক দশকে সবজি, ভুট্টা, গম ও আলু উৎপাদনের অভাবনীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
×