ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উৎপাদনে আসবে এক বছরের মধ্যে

পাবনায় নির্মাণ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

পাবনায় নির্মাণ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা থেকে ॥ দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনায়। ৬০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন (এনডব্লিউপিজিসিএল) কোম্পানি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চররামকান্তপুর মৌজার ২০৫ একর ইজারা নেয়া খাস জমি সৌরবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণে এনডব্লিউপিজিসিএল কে বুঝে দিয়েছে। শীঘ্রই বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের সব থেকে বড় সৌরবিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট। এনডব্লিউপিজিসিএল সূত্র জানায়, আগামী এক বছরের মধ্যে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। আগামী রবিবার পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহম্মদ ফিরোজ কবিরের উপস্থিতিতে জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। পাবনায় রূপপুরের পর সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে এ বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। আগামী বছর মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করলে তা পাবনার জন্য একটি বড় অর্জন হবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। সরেজমিন ওই এলকায় গিয়ে জানা যায়, সরকারী অকৃষি খাসজমি দীর্ঘদিন পড়ে ছিল। সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য দুই বছর ধরে এনডব্লিউপিজিসিএলের কর্মকর্তারা এখানে যাতায়াত করে। ইতোমধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সীমানা চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানান, এই জমিটি দীর্ঘদিন পড়ে ছিল। বালু মাটির কারণে এসব জমিতে কোন ফসল উৎপাদন হয় না। তাই এখানে সৌরবিদ্যুত প্রকল্প নির্মিত হলে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বাড়াসহ সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নত হবে বলে তিনি মনে করেন। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ আমিন জানান, পদ্মা নদী থেকে ৬০-৭০ বছর আগে এই চর জেগে উঠেছে। এখানে সাধারণ মানুষ অনেক ফসল ফলানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু পানি না থাকা এবং বালু মাটির জন্য কোন ফসল হয়নি। তিনি জানান, সরকারের এক নাম্বার খাস খতিয়ানে থাকা এই জমিতে উন্নয়ন প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ অনেক খুশি। তবে বিএনপিপন্থী একটি কুচক্রী মহল সরকারের এত বড় প্রকল্পের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক শ্রেণির ভূমিদস্যু পদ্মায় জেগে ওঠা চর দখল করে রেখেছে। তারা এসব চর সাধারণ মানুষের কাছে ইজারা দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আয় করছে। অনেকে স্থানীয়ভাবে সরকারের এই জমি বিক্রিও করছে। এসব জমি ভূমিদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করে সরকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে স্থানীয় মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে এলাকার সুধীজন মনে করছেন। স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, আশপাশের আট থেকে ১০টি মৌজার কয়েক হাজার একর সরকারী জমি দখল করে রেখেছে ভূমিদস্যুরা। এসব সরকারী জমি নিয়ে বাদানুবাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এই জমিতে সরকারী উন্নয়ন প্রকল্প নির্মাণের দাবি তুলেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এনডব্লিউপিজিসিএল সূত্র জানায়, ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য চারটি এলাকাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। জমির প্রাপ্যতা, সৌর রশ্মি, বায়ু প্রবাহ এবং গ্রিডের দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা এবং পায়রাকে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং পায়রাতে তিনটি বড় কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে এনডব্লিউপিজিসিএল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম জানান, শীঘ্রই ৬০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ শুরু করা হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। সরকার এখন নবায়নযোগ্য জ¦ালানি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে প্রাধান্য দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে সকল সরকারী কোম্পানিকে ১০ ভাগ হারে নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তারা কাজ করছেন।
×