ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

* গ্রেফতার হয়নি ৩ পলাতক আসামি

অন্তঃসত্ত্বাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ॥ ৫ মাসেও দাখিল হয়নি অভিযোগপত্র

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

অন্তঃসত্ত্বাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ॥ ৫ মাসেও দাখিল হয়নি অভিযোগপত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরের নকলায় ডলি খানম (২২) নামে অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর মামলার দীর্ঘ ৫ মাস পরও আসামিদের বিরুদ্ধে দাখিল হয়নি অভিযোগপত্র। এছাড়া এখনও গ্রেফতার হয়নি নির্যাতিতা গৃহবধূর ভাসুর সেনাসদস্য নেছার উদ্দিন, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর রূপালী বেগম ও তার স্বামী আমিরুল ইসলাম নামে পলাতক ৩ আসামি। এ নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছে ওই গৃহবধূর পরিবার। তবে পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। জানা যায়, গত ১০ মে নকলা উপজেলার কায়দা গ্রামে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ওই অন্ত:স্বত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে বর্বরোচিত নির্যাতন এবং নির্যাতনে গৃহবধূর গর্ভের সন্তান নষ্টের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৩ জুন আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী শফিউল্লাহ। এরপর নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে তোলপাড় শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের দ্রুত পদক্ষেপে গত ১১ জুন এক সেনা সদস্যসহ ওই গৃহবধূর ৩ ভাসুর ও জাসহ ৯ জনকে স্ব-নামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা গ্রহণ করা হয়। গ্রেফতার হয় নাসিমা আক্তার নামে এক আসামি। সেইসাথে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ ও এসআই ওমর ফারুককে প্রত্যাহার করা হয়। ওইসময় ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিতা গৃহবধূর পাশে দাঁড়িয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আস্তে আস্তে পাল্টে যায় সেই পরিস্থিতি। অভিযোগ রয়েছে, আসামিরা প্রভাবশালীদের শেল্টারে চলে যায় এবং তাদের তদবিরে ওই গৃহবধূর চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল রিপোর্ট পজেটিভ থাকার পরও কেবল ময়মনসিংহের একটি রিপোর্ট পাল্টে ভিন্নতর ঘটনা দেখানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। এদিকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে গৃহবধূর ভাসুর আবু সালেহ (৫২), সলিমুল্লাহ (৪৪), জা লাখী আক্তার (৩৪) ও তাদের আত্মীয় তোফাজ্জল হোসেন (৫৫) ও ইসমাইল হোসেন (২০)সহ ৫ জন নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে কিছুদিন হাজত খাটার পর উচ্চ আদালত থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে অপর ৩ আসামি। গৃহবধূর স্বামী শফিউল্লাহ দীর্ঘদিন পরও মামলার পলাতক ৩ আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় এবং এখনও অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন। সেইসাথে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও ইন্ধনদাতা সেনাসদস্য নেছার উদ্দিনসহ অন্যরা মামলা থেকে তাদের নাম কাটানোর চেষ্টা করছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। কেবল তাই নয়, এখন তারা উল্টো তাকেই নানাভাবে হুমকীসহ ভিন্ন কায়দায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি ওই ঘটনায় দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। একই দাবি করেন নির্যাতিতা গৃহবধূ। এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম জানান, ওই ঘটনার তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। পুলিশ সুপার মহোদয়ের অনুমোদন পেলেই দ্রুত চার্জশীট দাখিল করা হবে। একই কথা জানান নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন শাহ।
×