সাজু আহমেদ ॥ চট্টগ্রামের নাট্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষ সংগঠন নান্দীমুখ। বিগত তিন দশক ধরে সংস্কৃতি চর্চায় বিশেষ অবদান রেখেছে প্রথিতযশা এই সংগঠনটি। দীর্ঘ এই পথচলায় তাদের বিভিন্ন নাট্য বিষয়ক কর্মকাণ্ড দেশে-বিদেশে বহুল প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের নন্দিত এই নাট্য সংগঠনটি তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী বিশেষ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। ধারাবাহিক অনুষ্ঠানমালার প্রথম উদ্যোগ হিসেবে বিশ্ব নাটকের সঙ্গে বাংলা নাটকের যোগসূত্র স্থাপন এবং নতুন দর্শক তৈরির লক্ষ্যে ‘নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব-২০১৯’ আয়োজন করেছে। অজ বৃহস্পতিবার থেকে এ উৎসব শুরু হচ্ছে। আয়োজক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আজ এই উৎসব শুরু হয়ে চলবে আগামী ২২ নবেম্বর পর্যন্ত।
চট্টগ্রামের নান্দীমুখ নাট্যদলের এই আন্তর্জাতিক উৎসবে ভারত, ইরান, স্পেন ও বাংলাদেশের আট দল তাদের নন্দিত ও প্রশংসিত নাট্য প্রযোজনা মঞ্চস্থ করবে। নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি ‘বাংলা রাজনৈতিক থিয়েটার ও উৎপল দত্ত’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো দেশের চার প্রতিশ্রতিশীল নাট্য নির্দেশককে সম্মাননা দেবে নান্দীমুখ।
আজ বিকেল ৫-৩০ মিনিটে উৎসবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ লিয়াকত আলী লাকী। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যব্যক্তিত্ব ও বিশ্ব আইটিআইয়ের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতীয় দূতাবাস চট্টগ্রামের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি ও নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নান্দীমুখের দলীয় প্রধান অভিজিৎ সেনগুপ্ত।
আজ উৎসবের প্রথমদিন আয়োজক সংগঠক নান্দীমুখ মঞ্চস্থ করবে মাইমোড্রামা ‘আমার আমি’। আগামীকাল সকাল ১০টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কলকাতার ভাবনা থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক অভিক ভট্টাচার্য ও ড. কুন্তল বড়ুয়া। আগামী ১৬ নবেম্বর তির্যক নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করবে ‘রোমিও জুলিয়েট’, ১৭ নবেম্বর ভারতের আমতা পরিচয় মঞ্চস্থ করবে ‘সাবিত্রীবাঈ ফুলে’, ১৮ নবেম্বর ভারতের প্রান্তিক মঞ্চস্থ করবে ‘গওহরজান’, ১৯ নবেম্বর স্পেনের মুন প্যালেস মঞ্চস্থ করবে ‘ডিলেমাস উইথ মাই ফ্লামেনকো টেইলকোট’, ২০ নবেম্বর ভারতের চাকদহ নাট্যজন মঞ্চস্থ করবে ‘বিল্বমঙ্গল’।
২১ নবেম্বর ইরানের ক্রেজি বডি গ্রুপ মঞ্চস্থ করবে ‘মিস্ট্রিয়াস গিফট’, ২২ নবেম্বর ভারতের জ্যোতি ডোগরা গ্রুপ পরিবেশন করবে ‘ব্ল্যাক হোল’। উৎসবের শেষ দিন দেশের ৪ নাট্য নির্দেশককে ‘নান্দীমুখ সম্মাননা-২০১৯’ প্রদান করা হবে। এ বছর সম্মাননা পাচ্ছেন নির্দেশক স্বপন ভট্টাচার্য, ত্রপা মজুমদার, অসীম দাশ ও মোসলেম উদ্দিন সিকদার। নান্দীমুখের দলীয় প্রধান অভিজিৎ সেনগুপ্ত নাট্যোৎসব প্রসঙ্গে বলেন, এর আগেও আমরা এক বছর পর পর আন্তর্জাতিক উৎসব করতাম। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও সেই আয়োজন করছি।
উৎসবে আমরা রাচ নির্দেশককে সম্মাননা দিচ্ছি। আমরা মনে করি সম্ভাবনাময় প্রতিশ্রুতিশীল নাট্যনির্দেশকদের সম্মান জানিয়ে তাদের উৎসাহিত করা এবং তাদের কাজতে স্বীকৃতি দেয়া একজন নাট্যকর্মী হিসেবে আমাদের দায়। সেই দায় থেকে আমরা এবার এই চার নির্দেশককে সম্মাননা দিতে যাচ্ছি।
আমাদের এই উৎসবের আরও একটি বিশেষ লক্ষ্য হলো বিশ্ব নাটকের সঙ্গে বাংলা নাটকের যোগসূত্র স্থাপন করা। পাশাপাশি বাংলা নাটকের নতুন দর্শক তৈরি করারও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আশা করি এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্যে কিছুটা হলেও পৌঁছাতে পারব। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় আমরা সফল হব বলে আমরা বিশ্বাস করি।
