অনলাইন ডেস্ক ॥ বিশ্বে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণস্থল ইতালির ভেনিস নগরী প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অড্রিয়াটিক সাগরের শতাধিক ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই শহরের একাংশ মঙ্গলবার রাতের জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতার জোয়ারে ভেসেছে এই নগরী।
নগর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ফুট ২ ইঞ্চি জোয়ারে (১৮৭ সেন্টিমিটার) তলিয়ে যায় ভেনিস। এর চেয়ে বেশি জোয়ার হয়েছিল ১৯৬৬ সালে, ১৯৪ সেন্টিমিটার।
এই জোয়ারে ভেনিসের ঐতিহাসিক ব্যাসিলিকা, শহরের প্রাণকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকা এবং সরু গলিপথ পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাতের ফুটেজে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে প্রবল জলধারা সিটি সেন্টার দিয়ে বয়ে যেতে দেখা গেছে।
ভেনেতো অঞ্চলের গভর্নর লুকা জাইয়া এই অবস্থাকে ‘মহাপ্রলয়তুল্য বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ভেনিসের মেয়র লুইগি ব্রুগনারো বলেছেন, এটা ভেনিসের বুকে ‘স্থায়ী চিহ্ন’ রেখে যাবে।
“আমরা সরকারকে আমাদের সহায়তা করতে অনুরোধ জানিয়েছি। এর ক্ষয়ক্ষতি হবে অনেক বেশি। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। এখন সরকারকে অবশ্যই শুনতে হবে।”
মেয়র বলেছেন, ভেনিসকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা দেবেন এবং সরকারের প্রতি জরুরি অবস্থা জারির আহ্বান জানিয়েছেন।
এতে ক্ষতি সামলে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান সহজ হবে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে ভেনিসের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক বন্যা লক্ষ করা গেছে, আছড়ে পড়া একের পর এক ঢেউয়ের মধ্যে লোকজনকে বিভিন্ন রাস্তায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে ভেনিসের নিম্নাঞ্চলের সেইন্ট মার্কস স্কয়ারও আছে। সেখানে এক মিটারের বেশি পানি উঠে যায়।
এই স্কয়ার সংলগ্ন সেইন্ট মার্কস ব্যাসিলিকাতেও (ক্যাথলিকদের অন্যতম তীর্থস্থান) বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গত এক হাজার ২০০ বছরের মধ্যে এ নিয়ে ছয়বার এই ক্যাথেড্রালটি বন্যার কবলে পড়ল, যার মধ্যে গত ২০ বছরেই চারবার প্লাবিত হয়েছে বলে সেইন্ট মার্কস কাউন্সিলের সদস্য পিয়েরপাওলো কাম্পোস্ত্রিনি জানিয়েছেন।
বন্যায় শহরটির অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি ছবিতে ক্যাফে ও রেস্তোরাঁর বাইরে বন্যার পানিতে চেয়ার ও টেবিল ভাসতে দেখা গেছে।
তিনটি ওয়াটারবাসও ডুবে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ কমাতে বিভিন্ন দোকানে কর্মীরা মজুদ রাখা পণ্য সরিয়ে নিতে কাজ করছেন।
শহরটিকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে ২০০৩ সাল থেকে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ব্যয়বৃদ্ধি ও নানান কেলেঙ্কারিতে সেটি এখনো শেষ হয়নি।
মঙ্গলবার ইউরোপের এ দেশটিতে তুমুল বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।