ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদত্যাগের বিষয়ে সংসদে কথা বলব ॥ রাঙ্গা

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

পদত্যাগের বিষয়ে সংসদে কথা বলব ॥ রাঙ্গা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বৈরশাসনবিরোধী গণআন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে করা কটূক্তি করায় সংসদ সদস্য হিসেবে পদত্যাগ প্রশ্নে জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, এ ব্যাপারে আমি সংসদে কথা বলব। তিনি বলেন, নূর হোসেনের মায়ের চোখের জল আমাকেও কাঁদিয়েছে। বুধবার গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে মহাজোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী রাঙ্গা এসব কথা বলেন। গত ১০ নবেম্বর জাতীয় পার্টির গণতন্ত্র দিবসের (শহীদ নূর হোসেন দিবস) আয়োজনে তিনি নব্বইয়ের গণআন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘মাদকাসক্ত’ আখ্যা দেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর ও ফেন্সিডিলখোর মন্তব্য করে রাঙ্গা বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেনইন মুহম্মদ এরশাদ স্বৈরাচার নয়। যদি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া সৈরাচার হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। তার এই বক্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা সমালোচার ঝড় ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও প্রতিবাদ জানান অনেকে। যদিও মঙ্গলবার দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করেন এরশাদের ভাগ্নে রাঙ্গা। তার বিতর্কিত মন্তব্যেল সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান দুই নেতা তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু রাঙ্গার পদত্যাগ দাবি করেছেন। তবে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ অবশ্য বলেছেন, রাঙ্গার বক্তব্য দলীয় নয়। ব্যক্তিগত। তার এরকম বক্তব্যের কোন দায় জাপা নেবে না। গণতন্ত্রের আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের আত্মদানের দিন ছিল রবিবার। প্রতি বছর এই দিনটিকে নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবারও যখন তাকে স্মরণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সেদিনই জাতীয় পার্টির এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গার বিতর্কিত এই বক্তব্য আসে। যা নিয়ে গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনে রিতোমতো তোলপাড় চলছে এখনও। নূর হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা রাঙ্গা বিরুদ্ধে মামলা করতেও প্রস্তুত, অন্যথায় তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। বুধবার রাঙ্গা বলেন, শহীদ নূর হোসেনের মায়ের চোখের জল আমাকেও কাঁদিয়েছে। নূর হোসেনকে নিয়ে করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগের যে দাবি উঠেছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদত্যাগের বিষয়ে সংসদে বলব। তিনি বলেন, ‘নূর হোসেনকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছি, তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। নূর হোসেনের মায়ের চোখের জল আমাকেও কাঁদিয়েছে। আমারও মা আছেন, আমারও পরিবার আছে। নূর হোসেন নিহত হয়েছেন, এ নিয়ে কোনো ভুল নেই। তাকে নিয়ে যে যে-ই রাজনীতি করি না কেন, নূর হোসেন নিহত হয়েছিলেন, এটাই বাস্তব। আমি নূর হোসেনের মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। কী এমন প্রেক্ষাপট দাঁড়াল যে নূর হোসেনকে নিয়ে আপনি এমন প্রশ্নে রাঙ্গা বলেন, নূর হোসেন দিবসে আমরা গণতন্ত্র দিবস পালন করি। এদিন পুরান ঢাকা থেকে নেতাকর্মীরা এসেছিলেন। আমাদের নেতাকর্মীদের দেখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘এরশাদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘স্বৈরাচারের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’। ‘আমরা তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাতেই আমাদের কর্মীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, মামলার শিকার হচ্ছেন। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। নূর হোসেনের বাড়িতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও গিয়েছিলেন। তিনি নূর হোসেনের মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এসেছেন। এরপরও কেন এমন স্লোগান দেয়া হয়?’ এরশাদকে গালি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ প্রশ্নে নূর হোসেনের দোষ কোথায়? অথচ আপনি নূর হোসেনকে গালি দিলেন! এটি কতটুকু শোভনীয়- এর জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘আবারও বলছি, নূর হোসেনের ব্যাপারে মন্তব্য করে আমি মর্মাহত। তাকে গালি দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এরপর তো আসলে কিছুই করার থাকে না। আপনারা বলুন, ক্ষমা চাওয়ার পর আর কী করতে পারি? আমার ভুল আমি সচেতনভাবে স্বীকার করছি। অনেকেই আপনার পদত্যাগ দাবি করছেন। সংসদেও আলোচনা হচ্ছে। পদত্যাগ করবেন কি-না? ‘পদত্যাগের বিষয়ে আমি সংসদে বলব’- বলেন মসিউর রহমান রাঙ্গা।
×