ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাগালের বাইরে পেঁয়াজের দাম

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

নাগালের বাইরে পেঁয়াজের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকায়। বাজার খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা অতি দামের পেঁয়াজ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। বেশিরভাগ পরিবারে অর্ধেকে নেমে এসেছে পেঁয়াজের ব্যবহার। যেসব তরকারি পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করা যায়, তা এই মসলাবাদেই রান্না করছেন গৃহিনীরা। অনেক গৃহকর্তাও দৈনন্দিন বাজার খরচ কমাতে তরকারিতে পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন। এদিকে, পেঁয়াজের বাজার সামাল দিতে খুব দ্রুত মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ দেশে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী দু’একদিনের মধ্যে আমদানিকৃত ৬০ হাজার মে. টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৪টি মনিটরিং টিম মাঠে রয়েছে। মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ন্যূনতম লাভে বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকৃত বড় লটের পেঁয়াজ দেশে আসলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এছাড়া চলতি মাসের শেষ নাগাদ বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু হবে। ওই পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম এমনিতে কমে যাবে। তিনি বলেন, মসলা জাতীয় এই পণ্যটি এবার সকলকে ভুগিয়েছে। এবারের শিক্ষা নিয়ে পেঁয়াজ উৎপাদন, মজুদ ও বিপণনের বিষয়টি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি দাম হয়েছে পেঁয়াজের। গত বছর পেঁয়াজের ন্যায্যদামের দাবিতে কৃষকরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রকৃত দাম না পেয়ে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হউন। অনেক চাষী পেঁয়াজের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কিন্তু এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখলে শুরুতে কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। বেশি লাভে ওই পেঁয়াজ এখন বিক্রি করছে স্থানীয় ফড়িয়া, দালাল এবং মজুদদাররা। প্রকৃতপক্ষে কৃষক পেঁয়াজের এই মুনাফা পায়নি। ফলে পেঁয়াজের আবাদ কম হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এর কোন বিকল্প আর সামনে নেই। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পেঁয়াজসহ সব ধরনের মসলা উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এদিকে, পেঁয়াজের দাম বেশি বেড়ে যাওয়ায় দেশের সাধারণ ও নি¤œবিত্তের মানুষ এই পণ্যটির ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। মাছ ও মাংস বাদে বেশিরভাগ তরিতরকারি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না হচ্ছে। মূলত পেঁঁয়াজের দাম বৃদ্ধি দৈনন্দিন বাজার খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন পেঁয়াজ সংগ্রহে। এ প্রসঙ্গে ঢাকার মুগদা পাড়ার বাসিন্দা আফরোজা আকতার জনকণ্ঠকে বলেন, তার পরিবারে পেঁয়াজ খাওয়ার পরিমাণ কমানো হয়েছে। দাম বাড়ার আগে বেশিরভাগ সবজি ও মাছ বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা হতো। দো-পিঁয়াজো রান্না হতো প্রতি সপ্তায়, কিন্তু দাম বাড়ার কারণে এখন পেঁয়াজসহ অন্যান্য মসলা খাওয়ার পরিমাণ কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজ তরকারিতে স্বাদ বাড়ায়, কিন্তু না দিলেও খাওয়া চলে। এখন যেহেতু দাম বেশি তাই ব্যবহার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, শুধু রাজধানী নয়-দেশের সব জেলার মানুষ এখন পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কটে আছে। পেঁয়াজের উর্ধমুখী দামে ভোক্তারা নাজেহাল। মূলত গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দেশে দাম বেড়ে যায়। সেই থেকে দাম বাড়ছেই। সম্প্রতি মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে ৫ হাজার মে. টন পেঁয়াজ আমদানি হলে দেশে কিছুটা দামে ভাটা পড়ে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আগে ১১৫-১৩০ টাকায় নেমে আসে পেঁয়াজের দাম। কিন্তু ওই ঝড়ের পর দেশে আরেক দফা পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। বর্তমান জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, পাইকারি বাজারে দাম চড়া। আর এ কারণে খুচরা বাজারেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভোক্তাদের বেশি দামে পেঁয়াজ খেতে হবে। পেঁয়াজের দাম কমাতে টিসিবি ট্রাকসেলে ৪৫ টাকায় বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু সেখানে দীর্ঘলাইন ধরে পেঁয়াজ কিনছেস সাধারণ ভোক্তারা।
×