ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিনজিয়াংয়ে তুলা চাষে ‘জোরপূর্বক শ্রম’ নিয়ে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

শিনজিয়াংয়ে তুলা চাষে ‘জোরপূর্বক শ্রম’ নিয়ে উদ্বেগ

অনলাইন ডেস্ক ॥ ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ ওঠা চীনের শিনজিয়াং থেকে উৎপাদিত তুলার সরবরাহ নিয়ে নিরীক্ষার মুখে পড়েছেন বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতারা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তুলা উৎপাদক দেশ চীনের বেশিরভাগ তুলাই শিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে। চীনের এ অঞ্চলে বসবাস করা উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর ব্যাপক নির্যাতন এবং তাদেরকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর। নানান হাত ঘুরে পোশাক খাতের আন্তর্জাতিক অনেক ব্র্যান্ডের কাছেও শিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত তুলার কাপড়ই পৌছায় বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক অনুসন্ধানে ধারণা দেওয়া হয়েছে। জাপানি বিক্রেতা মুজি ও ইউনিক্লো সম্প্রতি তাদের কাপড়ের বিজ্ঞাপনে চীনের ওই অঞ্চলের উৎপাদিত তুলার গুণগান গেয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। শিনজিয়াংয়ের তুলা থেকে উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ চেইনের একেবারে শেষপ্রান্তে এইচ অ্যান্ড এম, এসপিরিট ও অ্যাডিডাসের মতো কোম্পানিগুলোও আছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে। “চীনের সঙ্গে যদি আপনার তুলার ব্যবসা থাকে, তাহলে আপনার সরবরাহ চেইনে জোরপূর্বক শ্রমের অস্তিত্ব নেই, এমনটা নিশ্চিত হতে পারবেন না আপনি। শিনজিয়াংয়ের শ্রম, সুনির্দিষ্টভাবে বললে যা জোরপূর্বক শ্রম, শিনজিয়াংয়ের সরবরাহ চেইনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত,” বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক নাথান রুসের। চীন উইঘুর ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে আটককেন্দ্রে রেখে মান্দারিন ভাষা শিখতে, প্রেসিডেন্ট শি শিনপিংয়ের প্রতি অনুগত থাকতে ও নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসের সমালোচনা কিংবা অবজ্ঞা করতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের। বেইজিং অবশ্য শুরু থেকেই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের লক্ষ্যে উইঘুর ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের এসব মানুষ ‘স্বেচ্ছা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে’ যোগ দিচ্ছেন, যা তাদের চাকরি পেতে ও চীনের মূল সমাজের অংশ হতে সহায়তা করছে। শিনজিয়াং অঞ্চলকে চীনের তুলা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র বলা হয়। বিশ্বের তুলা উৎপাদনের ২২ শতাংশই এশিয়ার প্রভাবশালী এ দেশটিতে হয় বলে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে গত বছর চীনের মোট উৎপাদিত তুলার ৮৪ শতাংশই শিনজিয়াং থেকে এসেছে বলেও জানানো হয়েছে। এ তথ্যই তুলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে চীন শিনজিয়াংয়ে ‘জোরপূর্বক শ্রম’কে ব্যবহার করছে কিনা সে সন্দেহ উসকে দেয়। মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রজেক্টের চেয়ারম্যান নুরি তারকেল জানান, চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত পণ্যের পেছনে জোরপূর্বক শ্রম আছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে এবং এ তথ্য ‘এড়িয়ে যাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে’। বেশিরভাগ পশ্চিমা পোশাক কোম্পানি সরাসরি শিনজিয়াং থেকে তুলা বা তা থেকে বানানো কাপড় নেয় না বলে জানিয়েছেন সিএসআইএস হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের পরিচালক আমি লেহর। “শিনজিয়াং থেকে বের হওয়ার পর ওই পণ্যগুলো অনেকগুলো পর্যায় পাড়ি দিয়ে তারপর বড় বড় ব্রান্ডগুলোর কাছে যায়,” বলেছেন তিনি। জাপানি দুই কোম্পানি মুজি ও ইউনিক্লো অবশ্য তাদের পণ্যে শিনজিয়াংয়ের তুলা ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞাপনও করেছে। সমালোচনার মুখে ইউনিক্লো পরে তাদের বিজ্ঞাপন থেকে শিনজিয়াংয়ের উল্লেখ বাদ দেয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে শিনজিয়াংয়ের আকসুতে অবস্থিত হাউফু ফ্যাশনের একটি কারখানায় শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করার কথা জানায়। হাউফুর সরবরাহ চেইনে এইচ অ্যান্ড এম, অ্যাডিডাস ও এসপিরিটের মতো ব্র্যান্ডের উপস্থিতির কথাও জানায় তারা। এ প্রসঙ্গে অ্যাডিডাস বিবিসিকে জানায়, হাউফুর সঙ্গে তাদের সরাসরি সংযোগ না থাকলেও তারা এ অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। এসপিরিট জানিয়েছে, তারা আগে হাউফু থেকে স্বল্প পরিমাণ পণ্য নিলেও এখন সরবরাহকারীদের সেখান থেকে পণ্য নিতে নিষেধ করে দিয়েছে। এইচ অ্যান্ড এম জানিয়েছে, জিনজিয়াংয়ের কোনো গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারের সঙ্গে তাদের ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই।
×