ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের স্বাদই পেল না ৩ বছরের শিশু ছোঁয়া মনি

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

জীবনের স্বাদই পেল না ৩ বছরের শিশু ছোঁয়া মনি

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ নিষ্পাপ শিশুর নিথর লাশ পড়ে আছে হাসপাতালের হিমঘরে। মুখের হাসিটুকুও ফুরোয়নি। হাতে পায়ে লাল রঙের নেইল পলিস। খুবই যতœ করে দেয়া। বেড়াতে যাবে বলে কথা! পরিপাটি পোশাক-আশাকে খুবই সুন্দর পরিপাটি করে সাজা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে শিশুটির লাশ। সবার নজর সেদিকে। সবাই দেখছে আর অঝোরে চোখের জল ফেলছে। ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটির পিতা-মাতা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। শুধু শিশুটির বেলায় নয়, ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহত সবারই এমন অবস্থা। সোমবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কসবার মন্দবাগ স্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে যে ষোলোজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, তাদেরই একজন এই শিশুটি। তিন বছরের শিশু ছোঁয়া মনি বুঝতেই পারল না, জীবনের কি মানে। তার বাবা সোহেল মিয়া চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। মা নাজমা বেগমসহ তিন সদস্যের এই পরিবারটি সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল বেড়াতে। দুর্ঘটনায় কেড়ে নেয় শিশুটির প্রাণ। তাদের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং বড় বাজার এলাকায়। মৃত্যুর পর শিশুটির লাশ রাখা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে আর মা-বাবাকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরে হবিগঞ্জ এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যেই নিষ্পাপ শিশুটির খবর ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে। যা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। তাকে একনজর দেখার জন্য হাসপাতালের মর্গে ভিড় করেছেন শত শত মানুষ। হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা বাদশা মিয়া বলেন, জীবনে অনেক লাশ কাটা-ছেঁড়া করেছি। কিন্তু এমন একটি শিশুকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে দেখেনি। মনের মধ্যে খুবই কষ্ট পেয়েছি। শিশুটির পিঠে ও মাথায় মারাত্মক আঘাত লেগেছে। আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা দুর্ঘটনায় যাদের অবহেলা রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এদিকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা যেন এখন মৃত্যুপুরী। পুরো এলাকাজুড়ে গগনবিদারী আর্তনাদ। সেখানকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে আছে। ট্রেন দুর্ঘটনার পর সেখানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। তাদের কেউ হতাহতদের সরিয়ে নেয়ার কাজ করছিলেন। আবার কেউ নিতান্তই উৎসুক হিসেবে ঘটনা দেখছিলেন। সেখানে ভিড় করেছিলেন শত শত স্বজন। তারা আহাজারি করতে করতে স্বজনদের খুঁজছিলেন। ছুটছিলেন হাসপাতালে হাসপাতালে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা ও আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের দেখতে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও এলাকার মোঃ শাহাদত। সেখানে এসে নিজের চাচা মজিবুর রহমান (৫০) ও চাচি কুলসুম বেগমের (৪৩) লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার গগনবিদারী আর্তনাদে আশপাশের সবাই কাঁদছিল। চাচা-চাচির নিথর দেহ কসবা উপজেলার বায়েক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বারান্দায় রাখা হয়েছে। শাহাদত জানান, মন্দবাগ এলাকায় ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন। মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে বায়েক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পাই চাচা-চাচির লাশ। চাচা মজিবুর রহমান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যবসা করতেন। উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে তিনি ও তার স্ত্রী চাঁদপুরে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাদের ছেলে ফোন দিয়েছে খবর জানতে।
×