ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুলবুলের তাণ্ডবে বিশালকায় গাছ উপড়ে পড়ল বসত ঘরে

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

বুলবুলের তাণ্ডবে বিশালকায় গাছ উপড়ে পড়ল বসত ঘরে

মিজানুর রহমান, সুন্দরবনের গাবুরা থেকে ফিরে ॥ এবারের ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি ছিল ভিন্ন ধরনের। পানি থেকে স্থলভাগে উঠে আসা এই বুলবুলের তা-ব ছিল প্রায় ১৫ ফুট ওপরে। যে কারণে উপকূল জুড়ে থাকা বিশালকায় গাছগুলো উপড়ে গেছে। বেশিরভাগ গাছ শিকড়সহ উপড়ে পড়েছে। মনে হয় যেন ঘূর্ণিপাকে তুলে ফেলা হয়েছে বিশালকায় গাছগুলো। এসব গাছ পড়েছে রাস্তায় আর ছোট ছোট আধাপাকা বসত ঘরের ওপর। আর এতেই ব্যাপকহারে বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। আর তাই প্রাণহানি থেকে বেঁচে যাওয়া উপকূলবাসী নতুন দাবি তুলেছেন। ‘ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ,’ একইসঙ্গে চাই আরও কিছু নতুন সাইক্লোন শেল্টার ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বিধ্বস্ত উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি এলাকার বিধ্বস্ত জনপদে মঙ্গলবার সরেজমিন গেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এই দাবি তুলে ধরেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবি আইলা, ফণী ও বুলবুলের আঘাতে জরাজীর্ণ কয়েক শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। বুলবুলের আঘাতে জলোচ্ছ্বাসে এলাকা প্লাবিত না হলেও জরাজীর্ণ বাঁধ ভেঙ্গে যে কোন সময় তলিয়ে যেতে পারে জনপদের কয়েক শ’ গ্রাম। আর এই আশঙ্কায় এলাকাবাসী এবার ত্রাণের পরিবর্তে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের দাবি তুলেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার নবাগত বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গতরা এসব দাবি তুলে ধরেন। এ সময় তার সঙ্গে আর উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালসহ উপজেলার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। বুলবুলের আঘাতের দুইদিন পরে সুন্দরবন বেষ্টিত দ্বীপ গাবুরা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে জনপদের চারদিকে বিধ্বস্ত ঘরবাড়িগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বুলবুলের ঘূর্ণিতে গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৮০ ভাগ কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্গাবাটি, দাঁতিনাখালি ও চৌদ্দরশি বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে । ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পল্লীবিদ্যুতের ১৩শ’ কিলোমিটার বিদ্যুত লাইন । গত ৪ দিন ধরে উপকূলীয় এলাকা বিদ্যুতবিহীন হয়ে আছে। ঝড়ে জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য ঘের ভেসে গেছে ৫ হাজার ৭শ’ ১৯টি। গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, কাশিমারিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত একর চিংড়ি ঘের, আমনধান ও রবি শস্যের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। শ্যামনগরে পল্লীবিদ্যুত সমিতির সাব-জোনাল কর্মকর্তা (এজিএম-কম) মধুসূধন রায় জানান, উপজেলায় ১ হাজার ৩শ’ কিলোমিটার বিদ্যুত লাইনের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত। বনবিভাগ কোবাতক স্টেশন কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জানান, ঝড়ের তা-বে অফিস সংলগ্ন নদীতে স্থাপিত পন্টুন ভেসে গেছে। কৈখালী, কদমতলা, পুষ্পকাঠি, দোবেকী, লতাবেকি ও বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন অফিসে স্থাপিত বনরক্ষীদের জন্য ব্যবহৃত ঘরের চাল উড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা এলাকায় আসার খবরে ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ জুড়ে অপেক্ষায় থাকে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ। বাড়ি নির্মাণ সহযোগিতা নিশ্চিত করতে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার এ সময় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিতিা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হয় সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তা সরকারের কাছে পাঠানো হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, উপকূলবর্তী এলাকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি এ সময় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাঁতিনাখালী এলাকার ১০০ জন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
×