ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওরা এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে-

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

ওরা এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে-

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় কারও দুই পা বিছিন্ন হয়ে গেছে, কারও হাত ভেঙ্গে গেছে, কারও চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে। অনেকে অল্পের জন্য বেঁচে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের বেডে কষ্ট ও যন্ত্রণায় ওরা ছটফট করছে। এদের এক পরিবারের মাকে হারিয়ে ওরা এখন নিঃস্ব। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মির্জা মোঃ সাইফুদ্দিন সৈকত (২৭) নামের এক ট্রেন যাত্রী। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তিনি। দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হয়েছেন। তার ডান পা ভেঙ্গে গেছে। আঘাতে দুই চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে। আর একই দুর্ঘটনায় মুন্না মিয়া (২৫) মাথাসহ শরীর বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। দু’জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সৈকতকে ও সকালে মুন্না মিয়া ও সন্ধ্যার দিকে সোমা আক্তার সুমী নামে এক কলেজছাত্রীকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় সাইফুদ্দিন সৈকতকে। সৈকতের ছোট ভাই মোঃ সাকিব জানান, তাদের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। বেশ কিছুদিন ধরে সৈকত বেকার। সপ্তাহখানেক আগে সৈকত তার বাসা থেকে এক কাজে সিলেট গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি এখন হাসপাতালে। সাকিব জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে আসার পর তারা সৈকতের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখতে পান। তার চোখ দু’টিও ফুলে কালো হয়ে গেছে। হাসপাতালের বেডে শুয়েই দুর্ঘটনায় মুহূর্তের বর্ণনা দেন দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রী সৈকত। তিনি জানান, ট্রেনটি মন্দভাগ রেলস্টেশন এলাকায় আসা মাত্র সজোরে ধাক্কা খায়। তখন ভেবেছিলাম, কেউ বোমা মেরেছে! মনে হয়েছিল ট্রেনটি ৪ থেকে ৫ হাত ওপরে উঠে গিয়ে নিচে পড়েছে। আমার শরীর ওপরে উঠে গিয়ে নিচে আসনের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে আমার ডান পা ও চোখে আঘাত লাগে। এরপর আর কিছু মনে নেই। পরে দেখি হাসপাতালের বেডে আমি শুয়ে আছি। ব্যাথায় শরীর তুলতে পারছি না। এদিকে সকালে মুন্না মিয়া নামে আরেক ট্রেন যাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় মুন্না জানান, তার বাবা মৃত ওমর আলী। তাদের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মহুল সুনাম গ্রামে। একটি গ্রিলের দোকানে তিনি কাজ করেন। তিনি জানান, বন্ধুদের সঙ্গে উদয়ন ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন তিনি। পথে দুর্ঘটনার শিকার হলে প্রথমে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্বজনরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সন্ধ্যার দিকে সুমীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার সিটিস্ক্যান করানো হয়। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া জানান, আহত সৈকতের মাথা ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত রয়েছে। অন্যদিকে মুন্নার ডান পায়ে আঘাত রয়েছে। অপরদিকে সোমা নামে এক কলেজছাত্রী মাথা ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
×