ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুদীপ্ত হত্যা ॥ আওয়ামী লীগ নেতা মাসুমের আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৩:১৬, ১২ নভেম্বর ২০১৯

সুদীপ্ত হত্যা ॥ আওয়ামী লীগ নেতা মাসুমের আত্মসমর্পণ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা দিদারুল আলম মাসুম বিচারিক আদালতে আত্মসর্মপণ করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চট্টগ্রামের আদালতে আত্মসর্মপণের পর বিচারক ওসমান গণির তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে মহানগর পুলিশের এডিসি (প্রসিকিউশন) কামরুজ্জামান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাসুমের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, “দিদারুল আলম মাসুম হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন নেন। পরে বাদিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আপিল বিভাগ সেই জামিন বাতিল করে। পাশাপাশি ১৩ নবেম্বর মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয় আদালত। “ওই আদেশ মেনে তিনি মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করেন। তার হার্টে তিনটি রিং পরানো আছে। তাই আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন করি। সে বিষয়ে আদালত কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।” মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে দিদারুল আলম মাসুম আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হলে অনুসারীরা সেখানে তার নামে স্লোগান দিতে শুরু করে। শুনানি শেষে আদালত থেকে মাসুমকে কারাগারে নিতে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়ও অনুসারীরা তার নামে স্লোগান দেয়। ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। এ ঘটনায় সুদীপ্তর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছিলেন, বিগত কয়েক দশক ধরে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা থাকলেও কয়েক বছর ধরে তার বিপরীতে একটি অংশ দাঁড়িয়েছে, যাদের একাংশের নেতৃত্বে আছেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম। এই মাসুমের অনুসারীরাই সুদীপ্তকে পিটিয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ করে আসছে নগর ছাত্রলীগের একাংশ। এই হত্যা মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া সবাই মাসুমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। আর মাসুম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার সময়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থক হিসেবে পরিচিতি হলেও ২০১৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর তিনি মেয়র আ জ ম নাছিরের বলয়ে চলে আসেন। মাঝে তিনি সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী আফসারুল আমীনের অনুসারী হিসেবে বলেও পরিচয় দিতেন। হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পিবিআইকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়। গত বছরের নবেম্বর মাসে পিবিআই মামলার তদন্ত কাজ শুরু করে। তদন্তে নেমে পিবিআই গ্রেফতার করে আরও কয়েকজনকে যাদের মধ্যে গত ১২ জুলাই মিজান নামে একজন জবানবন্দিতে ‘দিদারুল আলম মাসুমের নাম’ উল্লেখ করেছে বলে পুলিশের ভাষ্য। এর মধ্যে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ কবির মানিক গত ২২ জুলাই দিদারুল আলম মাসুমের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩১ জুলাই মাসুমের দুটি অস্ত্রের নিবন্ধন বাতিল করে আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়। ৩ আগস্ট বিকালে মাসুম নিজে গিয়ে তার নিবন্ধন বাতিল করা অস্ত্রগুলো খুলশী থানায় জমা দিয়েছিলেন। এর পরদিন ৪ আগস্ট ঢাকার বনানী থেকে মাসুমকে গ্রেফতার করে পিবিআই। ১৫ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ছাড়া পান মাসুম।
×