ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ১১ জন কে কোথায় কেমন আছেন?

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১১ নভেম্বর ২০১৯

সেই ১১ জন কে কোথায় কেমন আছেন?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট ক্রিকেটের কুলীন পরিবারে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। বাংলাদেশের হয়ে সেই ১১ জনের অনেকে হারিয়ে গেছেন ক্রিকেট থেকে। কেউ আবার ব্যবসা করছেন। আবার কেউ নিজেকে ক্রিকেটেই জড়িয়ে রেখেছেন। আগামী ২২ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেই ১১ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তখনকার ভারতীয় দলের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। সেখানে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সৌরভের নেতৃত্বে সেই টেস্ট খেলা ভারতীয় দলের সব সদস্যদেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সেদিন অনেকেই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়বেন সেটা না বললেও চলে। তার আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেই ১১ জন, এখন কে কোথায় আছেন : * শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ইনিংস ওপেনিং করতে নেমেছিলেন তিনি। সে সময় বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশের সেরা ওপেনার এই বিদ্যুৎ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার বেশিদূর এগোয়নি। মাত্র ৩ টেস্টেই থেমে গেছে তাঁর ক্যারিয়ার। ২০০৪ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন তিনি। তারপর আর ক্রিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁর। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে কেবল টিভির ব্যবসা করেন তিনি। * মেহরাব হোসেন অপি : দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে তিনিও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছিলেন। কিন্তু সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারেননি। মাত্র ৯ টেস্ট খেলেই শেষ হয়ে যায় তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার। সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি ২০০৩ সালে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও এই অপি। তাঁকে টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করতে দেখা গেছে। * হাবিবুল বাশার সুমন : যখন খেলতেন তখন তাঁকে ডাকা হতো মিস্টার ফিফটি বলে। হাবিবুল বাশার ব্যাট হাতে নামলেই ফিফটি করে উঠে আসতেন। ফিফটিকে কেন সেঞ্চুরিতে রূপান্তরিত করতে পারেন না, তা নিয়ে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক টেস্ট খেলার পর সবচেয়ে বেশিবার সাদা পোশাক গায়ে জড়ানোর কীর্তি গড়েন সুমন। বাংলাদেশের জার্সিতে তিনিই প্রথম ৫০টি টেস্ট খেলার নজির গড়েছিলেন। ২৪টি ফিফটি আর তিনটি সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৩০২৬। বর্তমানে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক বিসিবির নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। * আমিনুল ইসলাম বুলবুল: অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। ১৪৫ রানের ইনিংসটি খেলে বুলবুল দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তখন। ১৩ টেস্ট খেলে তিনি অবসরে চলে যান ২০০২ সালে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। অবশ্য আইসিসির গেম ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর আগে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) হয়ে সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করেছেন। * আকরাম খান : বাংলাদেশের টেস্টপূর্ব যুগের সবচেয়ে বড় তারকার নাম ছিল আকরাম খান। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি আকরাম খানকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিল। টেস্ট খেলেছেন আটটি। ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন ২০০৩ সালে। এখন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। * আল শাহরিয়ার রোকন : সেই সময় দারুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি যিনি লেগ স্পিনটাও ভালো করতে পারতেন। অবশ্য রোকনের ক্যারিয়ারটা বেশি লম্বা হয়নি, খেলেছেন ১৫ টেস্টে। ২০০৩ সালে ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকে নিউজিল্যান্ডের নেপিয়ারে বসবাস করছেন তিনি। সেখানে ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয় ক্রিকেট কোচিংয়েও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। * নাঈমুর রহমান দুর্জয় : অভিষেক টেস্টেই ভারতের ছয় ছয়টি উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক। আট টেস্ট খেলেই থেমে গেছে দুর্জয়ের টেস্ট ক্যারিয়ার। ২০০২ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর এখনো ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে দুর্জয় ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের সভাপতি এবং বিসিবির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। * খালেদ মাসুদ পাইলট : সে সময়ে তাঁকে এশিয়ার সেরা উইকেটকিপার বলা হতো। তাঁর বিশ্বস্ত গ্লাভস দুটি কখনো ফাঁকি দিতে পারেনি। ৪৪ ম্যাচ খেলা পাইলট টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন ২০০৭ সালে। বর্তমানে ক্রিকেটের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকের কোচের দায়িত্বও সামলেছেন। তবে তাঁকে বেশি দেখা যায়, টেলিভিশনে খেলা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলোতে। * মোহাম্মদ রফিক : অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে খ্যাতি কুড়িয়েছেন মোহাম্মদ রফিক। নিজের সময়ের সেরা বোলার ছিলেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার সাদা পোশাকের ক্রিকেট ছেড়েছেন ২০০৮ সালে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। রফিক কিছুদিনের জন্য বিসিবির হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডের (এইচপি) বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। * হাসিবুল হোসেন শান্ত : মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসার আগে দ্রুতগতির বোলার ছিলেন শান্ত। তিনি ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন ২০০১ সালে। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে টেস্ট খেলেছেন বলে ক্যারিয়ার অতটা সমৃদ্ধ হয়নি। তিনি এখন বিসিবির বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক কমিটিরও সদস্য। * বিকাশ রঞ্জন দাস : মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলে ফেলেন তিনি। দারুণ সম্ভাবনাময় এই বাঁহাতি পেসার অকালেই হারিয়ে যান। তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার বলতে ওই এক টেস্টই। অবশ্য তাঁর অভিযোগ, বোর্ড ঠিকঠাক খোঁজখবর রাখলে হয়তো তাঁকে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে হতো না। ক্রিকেট ছাড়ার পর ধর্মান্তরিত হয়ে মাহমুদুল হাসান নাম ধারণ করেন। বর্তমানে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ঢাকার একটি শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
×