ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনা স্বৈরাচার, নূর হোসেন ইয়াবাখোর : মশিউর রহমান রাঙা

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ১১ নভেম্বর ২০১৯

শেখ হাসিনা স্বৈরাচার, নূর হোসেন ইয়াবাখোর : মশিউর রহমান রাঙা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর ও ফেন্সিডিলখোর মন্তব্য করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেনইন মুহম্মদ এরশাদ স্বৈরাচার নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরাচার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের আত্মদানের দিন ছিল রবিবার। প্রতি বছর এই দিনটিকে নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবারও যখন তাকে স্মরণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সেদিনই জাতীয় পার্টির এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গার বিতর্কিত এই বক্তব্য আসে। যা নিয়ে গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনে রিতোমতো তোলপাড় চলছে। সামাসাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে প্রতিবাদের ঝড়। মহাজোট সরকারের সাবেক এই স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যের ২৪ ঘন্টা পরও জাপা পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। রবিবার ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গা বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাদকাসক্ত নূর হোসেনকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠান নিয়ে জাতীয় পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও তার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। ১৯৮৭ সালের সেই উত্তাল এরশাদবিরোধী আন্দোলনের দিনে নূর হোসেনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগই ছিল বলে ইঙ্গিত করেছেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে হটাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বামসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মিলিতভাবে ১৯৮৭ সালে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচী দিয়েছিল; সেদিন জিপিওর সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন পরিবহন শ্রমিক নূর হোসেন। বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে সেদিন মিছিলে নেমেছিলেন আওয়ামী লীগকর্মী নূর হোসেন। সেদিন তার আত্মদান এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দিয়েছিল নতুন মাত্রা। শামসুর রাহমানসহ কবিদের লেখনীর বিষয় হয়ে উঠেছিল তখন নূর হোসেন। জিপিওর সামনে যে স্থানটিতে নূর হোসেন মারা গিয়েছিলেন, সেই স্থানটির নাম হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার। জাতীয় পার্টি ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নূর হোসেন দিবন পালন হয়ে আসছে। ১৯৮৭ সালে আন্দোলন নতুন মাত্রা পাওয়ার পর তিন বছরের মাথায় গণঅভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হন এরশাদ। দুদিন পর তার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফেরে বাংলাদেশে। এরশাদ পতনের দিনটি অন্য রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রে ফেরার দিন হিসেবে পালন করলেও জাতীয় পার্টি দিনটি পালন করে ‘গণতন্ত্র দিবস হিসেবে’, এরশাদ দাবি করতেন, গণতন্ত্র ‘রক্ষার জন্য’ সেদিন ক্ষমতা ছেড়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে রাঙা বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অনেক কিছু করেছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রে শেষে পেরেক ঠুকেছিলেন। তখন তিনি দু’চারটি রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেটা কি গণতন্ত্র ছিল। নূর হোসেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নূর হোসেন কে? সে একটা এডিকটেড। সে একটা ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিল খোর। তাকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আজকের দিনে নাচানাচি করবে। পত্র পত্রিকা খুললে দেখবেন আজ নূর হোসেন দিবস। নানা আয়োজনের খবর বের হবে। আমি বলতে চাই এখন দেশে এমন কোন দিন নাই মানুষ মরছে না। কোপাকোপি, হত্যা, গুম খুনে মানুষ মারা যাচ্ছে। কতজনের আহাজারি আমরা প্রতিদিন শুনছি। এটা কি কোন নিয়ম হলো। তিনি বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ না। খালেদা জিয়া যদি স্বৈরাচার হয় তাহলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। জাতীয় পার্টি স্বৈরাচার হতে পারে না। অনুষ্ঠানে এরশাদের ভাই ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, নূর হোসেন ও ডা. মিলন (৯০ এর শহীদ শামসুল আলম মিলন) হত্যার ইস্যু তুলে দেশের মানুষকে বারবার বিভ্রান্ত করা হয়। আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অপবাদ দেয়া হয়। এর একটা সমাধান জরুরী হয়ে পড়েছে। নূর হোসেন এবং ডা. মিলনকে কারা হত্যা করেছে, কেন হত্যা করেছে এবং কীভাবে হত্যা করেছে, তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। জাপা ক্ষমতায় আসলে এই হত্যাকান্ডের বিচার করা হবে। রাঙ্গা বলেন, ১৯৮৬ সালের ১০ নবেম্বর এরশাদ যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, এখন আর সেই গণতন্ত্র নেই। দেশের গণতন্ত্র এখন নির্বাসনে। পতিত সামরিক শাসক এরশাদ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। তারপর মন্ত্রী হন জিএম কাদের। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন পরিবহন মালিকদের নেতা রাঙ্গা। এরশাদকেও করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে নুর হোসেন ও ডাক্তার মিলনসহ ষড়যন্ত্রমূলক সকল হত্যার বিচার করা হবে। জাতীয় পার্টি মহানগর উত্তর এর আয়োজনে “গণতন্ত্র দিবস” উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের আরো বলেন, এরশাদ ১৯৮৬ সালের ১০ নবেম্বর সামরিক শাসন তুলে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার পর থেকেই কাঠামোগত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। তবে, গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যহত হয়েছে বারবার। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিনই দুর্নীতি, গুম, খুন ও সন্ত্রাস অব্যাহত ভাবেই বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে দুষ্টে দমন আর শিষ্টের লালন। কিন্তু এখন উল্টে গেছে সব কিছু, এখন চলছে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন। গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা থাকলে দেশে ৫ কোটির বেশি বেকার থাকতে পারেনা। তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চালু করবো। তিনি বলেন, আমাদের নেতা এরশাদ সারাজীবন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ররু দিতে কাজ করেছেন। গণতন্ত্রের পথে অবিচল ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাঙ্গা বলেন, দেশের গণতন্ত্র এখন নির্বাসনে। যে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নুসরাতকে হত্যা করা হয়, বিশ্বজিৎ হত্যা হয়, একজন অধ্যক্ষকে ছাত্ররা পানিতে ফেলে দেয় আমরা সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাইনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থনে ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন লেভেলের কর্মীরাও স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দকে হুমকি-ধমকী দেয়। এখন সোনার ছেলেদের ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজীর ইতিহাস বের হচ্ছে। কিন্তু এতদিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সোনার ছেলেদের দেখেনি, তাদের দৃষ্টি ছিলো শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দিকে। তিনি বলেন, এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মাদকাসক্ত নুর হোসেনকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমপি-মন্ত্রীদের বাড়িতে ডাকাত ও খুনীদের আশ্রয়স্থল হয়েছিল বলেই রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার দেশকে বাঁচাতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দায়িত্ব অর্পন করেন। তিনি বলেন, এরশাদ ছিলেন গণতন্ত্রেরও ধারক-বাহক। গণতন্ত্র দিবসে আলোচনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান, এ্যাড. শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, ফখরুল আহসান শাহজাদা, একেএম আশরাফুজ্জামান খান। সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন আমানত, মোস্তাকুর রহমান, হেনা খান পন্নি প্রমুখ।
×