ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙার বিরুদ্ধে মামলা করবেন শহীদ নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১১ নভেম্বর ২০১৯

রাঙার বিরুদ্ধে মামলা করবেন শহীদ নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’, ফেনসিডিলখোর’ বলায় জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি। অন্যথায় পরিবারের পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও জানানো হয়েছে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাঙ্গার বক্তব্যের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে নূর হোসেনের পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। পরিবারের লোকজন বলেন, নূর হোসেনকে মাদকাসক্ত বলায় ১৯৯০ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে অপমান করেছেন রাঙা। এদিকে নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এসব কর্মসূচী থেকে বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাহার করে রাঙাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচীতে মরিয়ম বিবি বলেন, নূর হোসেন আমার একার ছেলে না, সে জনগণের ছেলে। সে জনগণের ছেলেকে নেশাখোর বলছে। সে যদি নেশাখোর হতো, তাহলে দেশের জন্য জান দিতে পারতো না। আমি জনগণের কাছে বিচার চাই, আল্লাহর কাছে বিচার চাই। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলে বুকে-পিঠে লেখে রাজপথে নামলো দেশের জন্য, জনগণের জন্য। কীসের জন্য নামলো? ও কি পাগল ছিল, ওর কি জ্ঞান, বিচার ছিল না? আজ ৩০ বছর পরে ওরে নেশাখোর বলা হলো। আমি এ বিচারের দায়ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম। জনগণের কাছে তাকে (মসিউর রহমান রাঙ্গা) ক্ষমা চাইতে হবে। রাঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে মরিয়ম বলেন, আমি আমার ছেলেকে বলেছি, মামলা করা উচিত। আমি মামলা করতে রাজি আছি। অবস্থান কর্মসূচীতে নূর হোসেনের ভাই আলী হোসেন বলেন, আমার ভাইকে দেশের জনগণ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা জানায়। সে নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’, ‘ফেনসিডিলখোর’ বলা হলো কেন? ৩৩ বছর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাদের বাসায় গিয়ে আমার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে এসেছিলেন। তিনি সংসদেও ক্ষমা চেয়েছিলেন। আমরা তো ক্ষমা করেই দিয়েছিলাম, কেন ৩৩ বছর পর আবার সে পুরোনো ক্ষতে আঘাত করা হলো? সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাই বলেন, তখন কি দেশে ইয়াবা ছিল? ফেনসিডিল ছিল? আলী হোসেন বলেন, নূর হোসেন দেশের জন্য, জনগণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিল। সে জনগণের কাছেই আমরা বিচার চাই। মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবারের সবাই এখনও বসি নাই। পরিবারের অন্য মুরুব্বিরা বসে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। অবস্থান কর্মসূচীতে আরও উপস্থিত ছিলেন- নূর হোসেনের ভাই দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, বোন শাহানা বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। রবিবার জাপার মহানগর উত্তর শাখার আয়োজনে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাঙ্গা বলেন, নূর হোসেন কে ছিল। সে একটা ‘ইয়াবাখোর’, ‘ফেনসিডিলখোর’ ছিলেন। তাকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আজকে নাচানাচি করে। এর পর থেকেই দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রাঙ্গার বিচার চায় সাধারণ জনগণ। তবে এ বিষয়ে রাঙ্গা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও মন্তব্য বা বিবৃতি দেননি। আলী হোসেন বলেন, দেশের জন্য প্রতিবাদ করায় তাকে যদি গাঁজাখোর, ইয়াবাখোর ও ফেনসিডিলখোর বলা হয়, তাহলে দেশের মানুষ কীভাবে প্রতিবাদ করবে? এ ধরনের কথা বললে তো কখনও ভালো মানুষ প্রতিবাদ করতে আসবে না। তখন দেশে স্বৈরাচার দেশে ভর করেছিল। ওই সময় আন্দোলন করে তাকে হঠানো হয়েছে। ওই সময় অনেক লোক মারা গেছে। এই শহীদদের এখন অপমান করা হলো। গণতন্ত্রের আন্দোলনে যারা মারা গেছে, তাদের এত ছোট করছেন কেন?’ আলী হোসেন বলেন, এদেশের জনগণ রাঙ্গার বিচার করে দিতে পারে। জনগণের প্রতি আহ্বান জানাবো, রাঙ্গাকে বয়কট করা হোক। তার এমপি পদ কেড়ে নেয়া হোক। রাঙ্গাকে উল্টো নেশাখোর মন্তব্য করে আলী হোসেন বলেন, ‘কালকে তিনি কথা যখন বলেন, তখন তিনি নিজেই তো নেশাখোর, কেমন চোখগুলো বেরিয়ে যাচ্ছিল। একটা আইনি ব্যবস্থা নিতে হলে সময় দরকার। তবে তিনি তো আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানানোর পাশাপাশি রাঙ্গা জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী চলবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
×