ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে কৌতূহল

প্রকাশিত: ১১:১০, ১০ নভেম্বর ২০১৯

ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে কৌতূহল

শংকুর কুমার দে ॥ ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। আর সব নামকরণই হয়েছে মেয়েদের নামে। যেমন রিটা, ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর, রেশমী, বিজলী। এবার ভয়ঙ্কর গতিতে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘বুলবুল’। এসব নাম রাখে কে ? মেয়েদের নামেই বা রাখা হয় কেন ? বুলবুল নামটা কার দেয়া? পরবর্তী ঝড়ের নাম কী হবে ? ‘বুলবুল’ ঝড়টির নাম দিয়েছে পাকিস্তান। এর আগের ভয়ঙ্কর ঝড় ‘ফনীর’ নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আট দেশ। এই আটটি দেশের মধ্যে আছে ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলে ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের নামের তালিকা আঞ্চলিক কমিটির কাছে পাঠায় ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি। এখন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি দিয়েছে পাকিস্তান। এর আগের সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণীর’ নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। ঘূর্ণিঝড় ফণী ছাড়াও উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দেয়া নামগুলো হলো- অনিল, অগ্নি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দেয়া হলো কীভাবে ? ১৯৪৫ সাল থেকে গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে শুরু হয় সাইক্লোন-টাইফুন ও হারিকেন তথা ঘূর্ণিঝড়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণ। এক সময় ঝড়গুলোকে নানা নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হতো। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো। ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। সে সময় আটটি দেশ মিলে ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। প্রথম আঘাত হানা মহাসেনের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর জন্য নির্বাচিত নামগুলো হলো ফাইলিন, হেলেন, লহর, মাদী, নানাউক, হুদহুদ, নিলুফার, প্রিয়া, কোমেন, চপলা, মেঘ, ভালি, কায়নতদ, নাদা, ভরদাহ, সামা, মোরা, অক্ষি, সাগর, বাজু, দায়ে, লুবান, তিতলি, দাস, ফেথাই, ফণী, বায়ু, হিকা, কায়ের, মহা, বুলবুল, সোবা ও আমপান। সেসব ঝড়ের নামের মধ্যে এখন বুলবুল ঝড়কে বাদ দিলে আর ৫টি নাম বাকি রয়েছে। এই পাঁচটি নাম থেকেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হবে। বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ ছাড়াও হারিকেন, সাইক্লোন, বা টাইফুন হিসেবে নামকরণ রয়েছে। প্রশ্ন হলো, কে বা কারা রাখে এসব নাম ? আটলান্টিক মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে এই প্রথা চালু হয়। যেসব ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৯ মাইল ছাড়িয়ে যেত, তাদের বিশেষ সম্মান জানাতে নামকরণ করা হতো। ঘণ্টায় হাওয়ার গতিবেগ ৭৪ মাইল ছাড়িয়ে গেলে করা হতো হারিকেন, সাইক্লোন, বা টাইফুন হিসেবে ভাগ। বর্তমান যুগে এই তিনটির একটি হলে তবেই কোন ঝড়কে নামকরণের সম্মান প্রদান করা হয়। ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের আনুষ্ঠানিক নামকরণ করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের আওতায় এগারোটি সতর্কতা কেন্দ্রের যে কোন একটি। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সব নাম জমা পড়ে এই সংস্থার আঞ্চলিক ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কমিটির কাছে। একবার নাম চূড়ান্ত হয়ে গেলে তা বদল করা যায় না, যদি ঝড়ের ফলে খুব বেশি মাত্রায় মৃত্যু অথবা সম্পত্তি বিনষ্ট হয় তাহলে খুব বেশি আলোচনায় আসে ঘূর্ণিঝড় প্রসঙ্গটি। পাকিস্তানের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে দেয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নামটি ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত মানুষজন। সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট উষ্ণম-লীয় ঝড়টি গত অক্টোবরের শেষে ভিয়েতনাম হয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। সেই ঘূর্ণিবায়ুর অবশিষ্টাংশই ইন্দোনেশিয়া পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে এসে আবার নিম্নচাপের রূপ নেয়। বার বার দিক বদলে নিম্নচাপটি আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে বুধবার রাতে তা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। তখন এর নাম দেয়া হয় বুলবুল।
×