ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিরিজ জয়ের আশা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ৯ নভেম্বর ২০১৯

সিরিজ জয়ের আশা বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম টি২০ ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তে ৮ উইকেটে হেরে সিরিজে ১-১ সমতা আসে। এখন রবিবার নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে দল জিতবে তারাই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেবে। এই ম্যাচটি জিতে সিরিজ জয়ের আশা করছে বাংলাদেশ। শুক্রবার রাজকোট ছেড়ে নাগপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়ার আগে সিরিজ জয়ের আশার কথাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেসার শফিউল ইসলাম। প্রথম টি২০তে ভাল বোলিং করেন। ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন। দলও জিতে। দ্বিতীয় টি২০তে ২ ওভার বোলিং করে কোন উইকেট না নিয়ে ২৩ রান দেন। দলও ম্যাচটিতে হারে। এবার তৃতীয় টি২০তে নিজেও ভাল কিছু করতে চান। দলও জিতবে। জিতে সিরিজ জয় করবে। সেই আশাও করছেন। তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই এখনও (সিরিজ জয়ের) সুযোগ আছে। আমরা যদি ভাল ক্রিকেট খেলি, প্রথম ম্যাচটা যেরকম খেলেছি তেমন যদি খেলতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা সিরিজ জিততে পারব। প্রথম টি২০তে অসাধারণ খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তে সেই ধারাবাহিকতা থাকেনি। এক ওভারেই দুই উইকেট নেয়া যুজবেন্দ্র চাহালের ঘূর্ণি বলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এলোমেলো হয়ে যান। একটিও হাফ সেঞ্চুরির দেখা মিলেনি। এরপর বাংলাদেশ বোলাররা রোহিত শর্মাকেই (৮৫ রান) ঠেকাতে পারেননি। একাই ম্যাচ জেতান। শফিউল মনে করছেন, ‘এই ম্যাচে (দ্বিতীয় টি২০) কিছু ছোট ছোট ভুল ছিল। যদি আমরা সামনের ম্যাচে এই ভুলগুলো যদি না করি, অবশ্যই আমাদের সিরিজ জেতা সম্ভব। আশাকরি, আমরা দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়াব। আমরা সিরিজ জেতার জন্যই খেলব।’ ভারত দল যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে ভারত ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আর বাংলাদেশ দল যেভাবে দ্বিতীয় টি২০ হেরেছে তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা যেতে পারে। কিন্তু অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তা মনে করছেন না। তিনি বলেছেন, আত্মবিশ্বাস একইরকম থাকবে। রিয়াদ জানান, ‘আমার মনে হয় না আমাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হবে। আমার মনে হয় প্রথম ম্যাচে দেখিয়েছি আমরা জিততে পারি। এই আত্মবিশ্বাস সবার ধরে রাখতে হবে, যেন আমরা সিরিজটা জিততে পারি।’ প্রথম টি২০তে দিল্লীতে ভারতকে ১৪৮ রানেই আটকে রাখতে পারে বাংলাদেশ। তাতে ১৫৪ রান করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি২০তে একই রান করে বাংলাদেশ। ১৫৩ রান করে। এই রান করেও জিততে পারেনি টাইগাররা। ভারত ১৫৪ রান করে জিতেছে। যেভাবে জিতেছে ভারত বাংলাদেশ বোলারদের পাত্তাই দেয়নি। প্রথম টি২০তে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব (২/২২), শফিউল ইসলাম (২/৩৬), আফিফ হোসেন ধ্রুব (১/১১) অসাধারণ বোলিং করে ভারত ব্যাটসম্যানদের বেশিদূর এগিয়ে যেতে দেননি। ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহীম (৬০*), সৌম্য সরকার (৩৯), নাঈম শেখ (২৬) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৫*) অসাধারণ ব্যাটিং করেন। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তে ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হন। শুরুতে লিটন কুমার দাস (২৯), নাঈম শেখ (৩৬) সুন্দর ব্যাটিং করলেও পরে ১৩তম ওভারে গিয়ে মুশফিক (৪) ও সৌম্যকে (৩০) যে চাহাল আউট করে দেন, সেখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। শেষে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ (৩০) ব্যাটিং ঝলক দেখান। কিন্তু তাতে বড় স্কোর গড়া যায়নি। এরপর বোলাররাও কিছুই করতে পারেননি। বিপ্লব আবারও ২ উইকেট নেন। রোহিত, শিখর ধাওয়ানকে আউট করেন। কিন্তু রোহিত আউট হওয়ার আগেই যে ব্যাটিং তা-ব দেখান, ৪৩ বলে ৮৫ রান করে ফেলেন; সেখানেই আসলে জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। প্রথম উইকেট ফেলতেই ১১৮ রান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। মাহমুদুল্লাহ রান কম হওয়াকেই দুষেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উইকেট ছিল ব্যাটিং সহায়ক। আমাদের আরও ২৫-৩০ রান বেশি করা উচিত ছিল।’ সঙ্গে অনেক বেশি ডট বল নিয়েও জানিয়েছেন, ‘৩৮টি ডট বলের যে ব্যাপার, আমার মনে হয় একটি টি২০তে যদি ৪০টির ওপরে ডট বল থাকে তাহলে আপনার ম্যাচ জেতার সুযোগ কম থাকে। সেখানে আমরা ৩৮টি ডট বল খেলেছি। হয়তো ঠিক আছে, তবে উন্নতি করার অবশ্যই সুযোগ থাকবে।’ অধিনায়ক লেগ স্পিনার বিপ্লবের বোলিংয়ের প্রশংসা করেন। বলেন, ‘ও খুব ভাল বোলিং করেছে। প্রথম ম্যাচে যেভাবে বল করেছে (দ্বিতীয় টি২০তেও) সেভাবে অনেক সাহস নিয়ে বোলিং করেছে। এই সিরিজ শুরুর আগে আমি ওকে বলেছিলাম, ‘এই ধরনের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি ভাল করতে পার তাহলে তোমার আত্মবিশ্বাসের লেভেলটা অনেক ভাল হবে।’ কারণ আমরা সবাই জানি, ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ অনেক শক্তিশালী। আমার মনে হয় ওর আত্মবিশ্বাসের লেভেলটা ভাল। ঠিক জায়গায় আছে, এটা যদি পরের ম্যাচে ধরে রাখতে পারে আমাদের কয়েকটা উইকেট এনে দিতে পারে, তাহলে আমাদের জন্য ভাল।’ লিটন দ্বিতীয় টি২০তে দুইবার আউট হওয়া থেকে বেঁচেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। আফিফ কিংবা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। এই তিনজনের কাছ থেকে ভাল কিছু চান অধিনায়ক। লিটনকে নিয়ে রিয়াদ বলেন, ‘লিটন সবসময় এমন আক্রমণাত্মক খেলে থাকে। আমরা জানি ও খুবই ভাল এবং প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। হয়তো ওর দিনে ও একাই টেনে নিয়ে যাবে। ওই দিনটা সামনের ম্যাচেই আমরা পাব আশাকরি।’ দ্বিতীয় টি২০তে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে আফিফ ৬ ও মোসাদ্দেক শেষ মুহূর্তে ধীরগতির ব্যাটিং করে ৯ বলে অপরাজিত ৭ রান করেন। আফিফ আর মোসাদ্দেককে নিয়ে রিয়াদ জানান, ‘আমি ওদের কোন দোষ দিব না। কারণ আফিফ যে ধরনের খেলা খেলে থাকে, সেটাই চেষ্টা করছিল। হয়তো সংযোগ করতে পারেনি। ওদের দুইজনের প্রতিই আমার আস্থা আছে। আমি মনে করি, আমাদের পুরো দলেরই আস্থা আছে যে, ওরা হয়তো পরবর্তী ম্যাচে শেষ করতে পারবে।’ শেষ ম্যাচে সবাই জ্বলে উঠবেন, সেই আশা করা হচ্ছে। আর জ্বলে উঠলেই তো সিরিজ জয়ের আশা পূরণ হয়ে যেতে পারে।
×