স্টাফ রিপোর্টার ॥ কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না সৌদি থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের। আরও ১১৩ জনের একদল শ্রমিক ফেরত এসেছে বৃহস্পতিবার। রাত সাড়ে ১১টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি- ৮০৪ বিমানে দেশে ফেরেন তারা।
বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ সূত্র জানিয়েছে, এ নিয়ে নবেম্বরের প্রথম সাত দিনে মোট ৯৩০ জন দেশে ফিরলেন। তাদের মধ্যে ৫৩৪ জনকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় জরুরী সহায়তা দিয়েছে ব্র্যাক। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর গত দশ মাসে সৌদি আরব থেকে ২০ হাজার ৬৯২ বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন। বরাবরের মতো গতকালও ফেরত আসাদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে জরুরী সহায়তা প্রদান করা হয়। সৌদি থেকে দেশে ফেরাদের একজন কুষ্টিয়ার কামাল হোসেন জানান, সাত লাখ টাকা খরচ করে দেড় বছর আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তিনি। একটি দোকানে কাজও করতেন নিয়মিত। কাজ থেকে রুমে ফেরার সময় পুলিশ গ্রেফতার করলে কামাল ফোন দেন কফিলকে (নিয়োগ কর্তা)। কিন্তু কফিল কোন দায়িত্ব নেননি। ফলে তাকে দেশে ফিরে আসতে হলো।
বাবুল, জহির, রেজাউলসহ কয়েকজন যে কোম্পানিতে কাজ করতেন সে কোম্পানির পোশাক পরেই শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন। তাদের কয়েকজনের পায়ে স্যান্ডেলও ছিল না। তারা জানান, কাজ শেষে কর্মস্থল থেকে রুমে ফেরার সময় পুলিশ তাদের ধরে। বৈধ আকামা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ধরে কোম্পানির দেয়া কাপড়েই দেশে পাঠিয়ে দেয়।
কিশোরগঞ্জের আহসান জানান, অভাবের সংসারে দিনমজুর বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বিদেশে গিয়ে পরিবারে সচ্ছলতা আনবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে মাত্র চার মাস আগে সৌদি গিয়েছিলেন তিনি। বৈধ আকামাও ছিল। কিন্তু তাকে দেশে ফিরতে হলো শূন্য হাতে।
একই রকম তথ্য জানান বরিশালের শ্রাবণ, কিশোরগঞ্জের জালাল, কুমিল্লার রনি, গাইবান্ধার মোস্তফা, মুন্সীগঞ্জের হান্নানসহ অনেকে। এ সম্পর্কে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরিফুল হাসান জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার বাংলাদেশীকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ফিরলেন ৯৩৪ জন। যারা ফেরত এসেছেন তাদের বর্ণনা একই রকম। তারা সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। যারা কয়েক মাস আগে গিয়েছিলেন তাদের কেউই খরচের টাকা তুলতে পারেননি। এখন ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। এভাবে ব্যর্থ হয়ে যারা ফিরছেন তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।