ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওয়াব ইউসুফ মার্কেট

ইজারা পাওয়ার আগেই কাঁচাবাজারের খাজনা আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ৯ নভেম্বর ২০১৯

ইজারা পাওয়ার আগেই কাঁচাবাজারের খাজনা আদায়ের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নয়াবাজার এলাকার নওয়াব ইউসুফ মার্কেটে কাঁচাবাজারের ইজারা পাওয়ার আগেই খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন জনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইজারায় সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও কর্পোরেশন এখনও তাকে কার্যাদেশ দেয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি বাজার থেকে খাজনা আদায় শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, খাজনার পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরান দাবি করেছেন, তাদের এখনও বাজার বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আর ডিএসসিসি’র কর্মকর্তা বলছেন, তাদের লোকেরাই এখনও খাজনা আদায় করছেন। সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ১০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ইউসুফ মার্কেটের ভেতরের কাঁচাবাজারটির ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও নির্ধারিত দর উঠত না। ফলে সিটি কর্পোরেশন বাধ্য হয়েই নিজেরা খাজনা আদায়ের মাধ্যমে বাজারটি পরিচালনা করে আসছিল। এ বছর ১২ সেপ্টেম্বর বাজারটি ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইজারার সরকার নির্ধারিত মূল্য ছিল এক কোটি ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫৪৫ টাকা। এর সিডিউল মূল্য ছিল ৩১ হাজার ৮০০ টাকা। এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন ইমরান হোসেন জন। এরই মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি তাকে কার্যাদেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মেয়রের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিএসসিসি থেকে ইজারার কার্যাদেশ না পেলেও ১ অক্টোবর থেকে ইমরান হোসেন তার লোক দিয়ে ওই বাজারের টোল আদায় শুরু করেছেন। ইমরানের হয়ে টোল আদায় করছেন তার চাচা কালিম। কর্পোরেশন ও বাজার সূত্রে জানা গেছে, ইজারাদার পাওয়া না গেলে সিটি কর্পোরেশন নিজেদের লোক দিয়েই বাজার থেকে টোল আদায় করার কথা। এজন্য কর্পোরেশন নিজস্ব কর্মীও নিয়োগ দেয়। অভিযোগ আছে, এক্ষেত্রে কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন লোক কাঁচাবাজারে গিয়ে টোল আদায় করেন না। ডিএসসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্থানীয় কোন ব্যক্তিকে মাসিক চুক্তিতে এ দায়িত্ব দেন। এরপর ওই ব্যক্তি ইচ্ছেমতো টোল আদায় করেন। এতে তিনিসহ কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লাভবান হন। সরেজমিনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নওয়াব ইউসুফ মার্কেটের কাঁচাবাজারে কর্পোরেশনের কোনও কর্মকর্তাকে টোল আদায় করতে দেখেননি তারা। কর্পোরেশনের লোকজনও এই বাজারে আসেন না। ব্যবসায়ীরা জানান, ইমরানের লোকজন টোল আদায় করছে। এ থেকে নির্ধারিত একটি অংশ কর্পোরেশনের তহবিলে জমা দেয়ার কথা। স্থানীয় দোকানিরা দাবি করেন, ইমরান টোলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। সবজি দোকান থেকে ৩০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, মাছের দোকান থেকে ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আশিকুল ইসলামের মাধ্যমে খাস আদায় করত কর্পোরেশন। এ বছর দরপত্রে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ার পর থেকেই তার লোকজন দিয়ে টোল আদায় শুরু করে। তবে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিএসসিসি ওই বাজার থেকে খাস আদায় করছে। আমরা শুনেছি, তারা টোলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য কার্যাদেশে বিভিন্ন দোকানের কাছ থেকে খাস আদায়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হবে।’ অভিযোগের বিষয়ে ইমরান হোসেন জন বলেন, ‘বিষয়টি সঠিক নয়। আমরা এখনও বাজার বুঝে পাইনি। বাজারে যেহেতু ইলিশ নেই, সেজন্য কর্পোরেশনকে বলেছি মাছ আসার পর যেন আমাদের বাজার বুঝিয়ে দেয়। কারণ, যে দর দিয়েছি সেজন্য প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা তুলতে হবে। ইলিশ না থাকলে সেই টাকা তোলা কঠিন।’ ইমরানের দাবি, তিনি বা তার কোন লোক বাজার থেকে টোল আদায় করছেন না। কর্পোরেশন নিজস্ব লোক দিয়েই টোল আদায় করছে। তিনি অভিযোগ করেন, যারা আগে বাজারটি পরিচালনা করত, তারাই সিন্ডিকেট করে অন্য কাউকে সিডিউল নিতে দিত না। এই বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ইমরান হোসেন সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাকেই ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে টাকা জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এখনও কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। আমরা আমাদের লোক দিয়েই খাস আদায় করছি।’
×