ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলবাসীর বিপদ

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৯ নভেম্বর ২০১৯

 উপকূলবাসীর বিপদ

পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এই একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ু অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এই পরিবর্তন আমাদের এই গ্রহ ও মানব সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি। পৃথিবীতে জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার প্রধান কারণ কার্বন নিঃসরণ। আঠারো ’শো শতকের শিল্প বিপ্লবের পরে থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অবস্থা এতটা চরমে পৌঁছেছে যে এখন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যদি অর্জন করা সম্ভব হয়ও, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও আরও কিছু অবশ্যম্ভাবী দুর্যোগ এড়ানো খুব শীঘ্রই সম্ভব হবে না। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ২০৫০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ সমুদ্রের লোনা পানির ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। এরপর থেকে তা স্থায়ী মহাদুর্যোগে রূপ নেবে। আর শতাব্দী শেষে ক্ষতির শিকার মানুষের সংখ্যা সাত কোটিতে পৌঁছাবে। ধ্বংস হবে পরিবেশ, প্রকৃতি, ফসল ও সব সম্পদ। এমন আশঙ্কার কথা বিভিন্ন ফোরাম থেকে বিভিন্ন সময়ে উচ্চারিত হয়ে আসছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ঘটলে সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ওজন স্তরকে ধ্বংস করে দেয়। এই ওজন স্তর সূর্যের উত্তাপ ও ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। তাই যত বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে, পৃথিবীর উষ্ণতা তত বাড়ছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বিশাল পরিমাণ বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং এতে স্থল ও জলজ বাস্তুসংস্থানে বিপর্যয় ঘটছে। স্বাভাবিক কারণেই মেরিটাইম শিল্পে ও সামুদ্রিক পরিবেশে এই জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং ভবিষ্যতে সামুদ্রিক পরিবেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। নৌপরিবহন রুট, গভীর সমুদ্র, সমুদ্র পৃষ্ঠ, উপকূলীয় অঞ্চল, লেগুন, ম্যানগ্রোভ অঞ্চল, সমুদ্র তলদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বাস্তুসংস্থান, বন্দর সবকিছুই সামুদ্রিক পরিবেশের অন্তর্গত। এখন এই অবস্থায় সরকার ও উপকূলবাসীর কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়ার সুযোগগুলোকে পরীক্ষা করে দেখা এবং ভবিষ্যতের জন্য পথ বের করা। এজন্য প্রথমেই আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে সোচ্চার হতে হবে। দেশের ভেতরেও বিভিন্ন কর্মসূচী নিতে হবে। নদীর নাব্য বাড়াতে হবে, বিল-জলাশয় খনন করতে হবে। বনাঞ্চল বাড়ানো এবং উপকূলে সবুজ বেষ্টনীর পরিসীমা বাড়ানো জরুরী। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। কর্মসূচী বাস্তবায়নে আন্তরিকতার বিকল্প নেই। নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের মতো জেলার বাসিন্দাদের বিপদ বাড়বে। তাদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়বে। সে জন্য কৃষি ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে এখন থেকেই প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। এখনই সচেতন না হলে দেশের উপকূলীয় এলাকার ধ্বংস অনিবার্য। তাই সবাই সচেতন হয়ে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা ধরনের অবকাঠামো গড়ে তুলছে। তবে এ ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব উন্নত রাষ্ট্রগুলোর। তাদের উচিত হবে দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা দেয়া। সেজন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে।
×