ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ চট্টগ্রামের পথে

ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে নেয়া হচ্ছে কূটনৈতিক উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৮ নভেম্বর ২০১৯

ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে নেয়া হচ্ছে কূটনৈতিক উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে পেঁঁয়াজ আনতে এবার কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ সিঙ্গাপুর পোর্ট হয়ে এখন চট্টগ্রামের পথে। সিঙ্গাপুর থেকে দ্রুত জাহাজ ছাড়করণে ওই দেশের পোর্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে সরকার। এছাড়া পেঁয়াজ সঙ্কট দূর করতে ভারতের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের সরকারী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহারে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। ইতোমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন ও দিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশন। জানা গেছে, বাংলাদেশের পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য উৎস ভারত। দেশটির নাসিক ও কর্নাটকের পেঁয়াজ এদেশের ভোক্তাদের কাছে অতি পরিচিত। স্বাদে, গন্ধে ও ঝাঁজে দেশী পেঁয়াজের কাছাকাছি হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় পেঁয়াজের আলাদা কদর রয়েছে। কিন্তু গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত নিজ প্রয়োজনে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে সেই সময় মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। বর্তমান প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও এই সময় মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক এবং চীন থেকে বেশকিছু পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানিতে যুক্ত হয়েছে এস আলম ও টিকে গ্রুপের মতো বড় প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এতেও পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মসলা জাতীয় এই পণ্যটির বড় উৎস প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। হঠাৎ তারা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে এমনটি হয়নি। তাদের নিজ প্রয়োজনীয় অনেক সময় রফতানিমূল্য বাড়িয়েছে, কিন্তু একেবারে বন্ধ করেনি। দুর্ভাগ্যজনক ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশে এখন পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরাও এর সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যেটা সরকারী অভিযানে বেরিয়ে আসছে। তিনি বলেন, দ্রুত যাতে ভারত তার রফতানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে কলকাতা বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন এবং দিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এ ব্যাপারে ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এর ফলে আগের এলসিকৃত পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এছাড়া চেন্নাই থেকেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ আনা সম্ভব। বাণিজ্য সচিব বলেন, নাসিক ও কর্নাটকের পেঁয়াজ আমাদের জন্য সহজলভ্য। কারণ এই পেঁয়াজ স্থলবন্দরের মাধ্যমে কম খরচে দেশে এনে বিক্রি করা যায়। এদিকে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৯-১০ বিলিয়ন ডলার। ভারত বরাবরই রফতানিকারক দেশ। ভোগ্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়। পেঁয়াজের বড় উৎস ভারত। এছাড়া দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ভারতের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান এদেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভারতের ভোজনবিলাসীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। সম্প্রতি কলকাতা সরকারের অনুরোধে ইলিশ রফতানি চালু করা হয়। এখন বাংলাদেশের ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, ভারত এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে শীঘ্রই পেঁয়াজ রফতানি চালু করবে। এতে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। জানা গেছে, আমদানির পাশাপাশি দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন। কৃষকদের ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য মসলা জাতীয় পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কারণ এসব পণ্যের বেশির ভাগ সারাবছর আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু উৎপাদন বাড়ানো হলে আর আমদানির তেমন প্রয়োজন হবে না। এর উদাহরণ হিসেবে অনেকে গরু ও মৎস্য উৎপাদনের কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে গরুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন আর ভারতের গরুর ওপর নির্ভর করতে হয় না। শুধু তাই নয়, খামারিরা এখন গরু আমদানি বন্ধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জোর আবেদন করেছে।
×