ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেতিবাচক রফতানি প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরাও দোষী ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৬ নভেম্বর ২০১৯

নেতিবাচক রফতানি প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরাও দোষী ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক ॥ তৈরি পোশাক শিল্পে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমার জন্য ‘আন্ডার কাট’ মূল্যের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরাও দোষী বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বুধবার (৬ নবেম্বর) সচিবালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে পোশাক শিল্পের বিদ্যমান সমস্যাদি নিয়ে আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। পোশাক খাতে নেতিবাচক রফতানি প্রবৃদ্ধি গত আগস্টে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সেপ্টেম্বর চার দশমিক ৭০ শতাংশ ও অক্টোবরে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। এনআরবির চেয়ারম্যান ও অর্থসচিব সমস্যাগুলোর বিষয়ে শুনেছেন। সে সমস্যাগুলো সমাধানে তারা কাজ করবে। আমাদের রেডিমেট গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে যে নেগেটিভ গ্রোথ (নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি) সেটা কীভাবে, সেটার গ্রোথ যাতে বাড়ে সেজন্য নেতৃবৃন্দ সাজেশন দিয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা কাজ করবেন। কিছু সমস্যা আমাদের হয় ক্লিয়ারেন্সের জন্য, জাহাজীকরণের জন্য অনেক সময় লাগে, বন্দরে দীর্ঘসময় থাকে। এছাড়াও অনেক কারণ রয়েছে। এসব ব্যাপারে কথা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তবে চূড়ান্ত কথা সবগুলোই কনসিডারেশনে নিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করে আমরা ব্যবস্থা নেব। মূলত আলোচনা হয়েছে রেডিমেট গার্মেন্টসের গত তিনমাসে যে নেগেটিভ গ্রোথ সেটি কীভাবে ফিরে আসতে পারি।’ গত ৩ মাস ধরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কথা বলেছেন। কতদিনের মধ্যে তা পজিটিভ হতে পারে-এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা কম্পিটেটিভ বায়ারদের ইচ্ছা, আমরা নিজেরা প্রাইসের কারণে কম্পিটেটিভনেস (প্রতিযোগিতা) হারাচ্ছি। সেটার জন্য সবদিকে চেষ্টা করতে হবে। ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে যে সাহায্যগুলো চেয়েছে সেগুলো কনসিডারেশনে নিলে কম্পিটেটিভনেস বাড়বে বলে আমরা মনে করি।’ রফতানি কমার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের কোনো সমস্যা আছে কি না কিংবা বাজারে আর কোনো ইস্যু আছে কি না-এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘একটা সমস্যা ব্যবসায়ীদের আছে, সেটা বলি, সেটা ব্যবসায়ীদের দোষ। তারা নিজেরা নিজেরা আন্ডার কাট (দাম কমিয়ে) করে প্রাইসটা এমন অবস্থায় নিচ্ছে যে দামও পাচ্ছে না। প্রাইসের ওপর এর ইফেক্ট পড়ছে, এটা সত্যি কথা। সেই জিনিসটা আমরা বরাবরই বলছি, অনেক দিন ধরেই বলছি। আমি নিজেও ব্যবসায়ী, এই ব্যাপারে আমরা জানি।’ ‘অনেক সময় দেখা যায়, কাজ পাওয়ার জন্য প্রাইসটা তারা (ব্যবসায়ীরা) কমিয়ে দিচ্ছে। এটার ইফেক্ট পড়ছে টোটাল রফতানির অ্যামাউন্টের ওপর। সেটার চেয়েও বড় কথা আমাদের কম্পিটেটিভনেস বাড়ানোর জন্য পাশাপাশি সুবিধাগুলো দরকার’, বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৭-১০ লেগে যায় একটা মাল ক্লিয়ার করতে, কোনো বায়ার যদি দেখে শিডিউল টাইম থেকে আমাদের ২০-২৫ দিন বেশি লাগছে, সে তো পরবর্তীতে আর আমাকে দেবে না। এসব কারণে অনেক ফ্যাক্টরিকে বিমানে মাল পাঠাতে হয়। একবারে মাল পাঠাতে সে বছরের সব প্রফিট চলে যাবে। সময়ের ব্যাপার, সরকার বিবেচনায় নেবেন। ফ্যাক্টরিগুলোর কাছে আবেদন আমরা নিজেরা আন্ডার কাট না করে আমাদের ব্র্যান্ডটা একটু ভালো করা দরকার।’ মন্ত্রী মনে করেন, বাজারে গ্লোবাল পরিচিতি বাড়ানো দরকার। কোয়ালিটির ব্যাপারে অ্যাওয়ারনেস বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আশাবাদী। সামনের দিনগুলোতে হয়তো ইমপ্রুভ করবে। কিন্তু কবে নাগাদ করবে সেটা বলা মুশকিল। স্থানীয় পর্যায়ে পোশাক রফতানির মূল্য সংযোজনের ওপর (রফতানি মূল্যের ২৫ শতাংশ) ডলার প্রতি অতিরিক্ত পাঁচ টাকা বিনিময় হার দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডলারের মূল্যের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ডলারের যে প্রাইস আছে সেটা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সেটার ব্যাপারে কী করা যায় আমাদের ব্যাংকগুলোর ডলার কেনা এবং বিক্রির মধ্যে পার্থক্য রয়েছেন, সেটাও আমাদের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তুলে ধরেছেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ইন্টারেস্ট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে গেছে, স্পেশালি প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে। গতকাল একনেক মিটিংয়ে বিশাল আলোচনা হয়েছে যে, এত ইন্টারেস্ট দিয়ে পারা যায় না। সেক্ষেত্রে আলোচনা হয়েছে, কেমন করে সেটা কমানো যায়। ১২ থেকে ১৪ শতাংশ হারে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ইন্টারেস্ট নেয়। সেটা কীভাবে কমানো যায়।’ ‘আরেকটা জিনিস আলোচনা হয়েছে, রেভিনিউ কালেকশন দরকার দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সাজেস্ট করেছেন, ট্যাক্স যেটা তোলা হয় এর পরিধি যেন বাড়ানো যায়। যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ যাদের সামর্থ্য আছে ট্যাক্স দেয়ার তাদের আওতায় আনা। সেটাকে কাভার করলে রেগুলার যারা ট্যাক্স দেয় তাদের ওপর হয়তো চাপ কিছুটা কমবে। এসব ব্যাপারে কথা হয়েছে।’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থসচিব বলেছেন, তিনি ইমিডিয়েটলি কয়েকটি ব্যাপার দেখবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে। অন্যান্য বিষয়গুলোর বিষয়েও এনবিআর চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন। একটা সাজেশন তিনি দিয়েছেন, এসব ছোটখাটো সমস্যা যখনই আসবে আপনারা আমার কাছে আসেন, অন দ্য স্পট সেগুলো সমাধান করে দেব।’ কোনো প্রকার শর্তবিহীন এক শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তা সকল পোশাক রফতানিকারকদের দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগদ সহায়তার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘যেটুকু নগদ সহায়তা পাচ্ছি তাতে কিছু ট্যাক্সেশনের ব্যাপার এসেছে। সেটার বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান অত্যন্ত সিমপেথিটিক, তিনি বলেছেন, সেটা ঠিক করটা ট্যাক্স এসেছে সেটা থেকে কমাবে বলে ভাবটাব দেখে আমার মনে হয়েছে।’ সভায় অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকসহ পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী নেতা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×