ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিরিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে না যুদ্ধ

প্রকাশিত: ১২:০১, ৬ নভেম্বর ২০১৯

সিরিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে না যুদ্ধ

হে যুদ্ধ বিদায়- এই কথাটি হয়ত মধ্যপ্রাচ্যের ললাটে নেই। গত ৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যদের ইরাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ার পর ৯ অক্টোবর তুরস্ক সেই অঞ্চলে কর্দী বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। এর চারদিন পর কুর্দী মিলিশিয়া পিপলস্ প্রোটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজি) সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করে। চুক্তির বিষয়বস্তু হচ্ছে সিরীয় সেনাবাহিনী যদি তুর্কিদের হাত থেকে তাদের ভূখ- রক্ষার জন্য কুর্দী নিয়ন্ত্রণাধীন রোজাভা শহরে আসে সেক্ষেত্রে কুর্দীরা সিরীয়দের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে। সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে মার্কিন সৈন্যরা যে পথ ধরে চলে গেছে সেই একই পথ ধরে অল্প সময়ের মধ্যে সিরীয় বাহিনী ফিরে এসেছে। হাসাকা, কোবানি ও কামিশলির মতো শহরগুলোতে এখন সিরীয় পতাকা উড়ছে। দেশের সর্ববৃহৎ দুটি বাঁধের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনর্প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদ গত কয়েক বছরে যা পেরেছেন তার তুলনায় গত ক’দিনে উল্টর-পূর্বাঞ্চলে তাঁর চেয়ে ঢের বেশি ভূখ- নিজের পুনর্দখলে এনেছেন। সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ফলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আমেরিকার আপাতত কোন ভূমিকা থাকবে না উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রভূত লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। কারণ লড়াই চলবে সে দুটি পক্ষের মধ্যে সেই তুরস্ক ও সিরিয়া উভয়েই রাশিয়ার বন্ধু। দু’পক্ষের মধ্যে দুতিয়ালী করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে রাশিয়া। কিন্তু তুরস্কের এই হামলার উদ্দেশ্য কি? দেশটির বক্তব্য তারা আত্মরক্ষার্থে এটা করতে বাধ্য হয়েছে। ওয়াইপিজি কুর্দীস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২০০৫ সালে এরদোগান সরকারের সঙ্গে পিকেকের শান্তি চুক্তি ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে ওই সংগঠনটি তুরস্কের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি মারাত্মক আক্রমণ চালিয়েছে। ইসলামিক স্টেট বা আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্র ওয়াইপিজিকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে ও একত্রে কাজ করে। তুরস্ক এটাকে আমেরিকার বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখে। পাশ্চাত্যের বিমানবাহিনীর সমর্থনে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াইপিজি বেশ কার্যকর শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল যদিও ওই লড়াইয়ে কুর্দীরা প্রায় ১১ হাজার যোদ্ধাকে হারায়। এখন মার্কিন সৈন্য ও সাহায্যে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার সুযোগে তুরস্ক কুর্দী অধ্যুষিত সিরীয় অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। অবশ্য তারা এটাকে সন্ত্রাস দমন অভিযান বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য সীমান্তের দক্ষিণের ৩০ কিলোমিটার চওড়া এবং পূর্ব-পশ্চিমমুখে বিস্তৃত এলাকাকে বাফার অঞ্চল বানিয়ে কুর্দী যোদ্ধাদের বিতাড়িত করা। তুরস্ক এ অভিযানে নিজের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার এলাকায় আশ্রিত বাশার সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের ব্যবহার করেছে। এরা বেশকিছু কুর্দীকে হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধ করেছে। প্রেসিডেন্ট বাশারের সঙ্গে চুক্তির ফলে ওয়াইপিজি মিলিশিয়ারা এখন সিরীয় বাহিনীর কমান্ডের অধীনে থাকছে। কুর্দীদের বিশ্বাস রোজাভা এলাকায় সিরীয় বাহিনী ফিরে এলেও এলাকার একাংশ তারা আগের মতোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সেখানে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার থাকবে। কিন্তু সিরীয় বাহিনী কতদিন সেই সুযোগ দেবে সেটাই প্রশ্ন। নতুন পরিস্থিতিতে সিরিয়ার উল্টর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে বেশকিছু অতি কুখ্যাত আইএস বন্দী পালিয়ে যাওয়ায় আইএসের নতুন করে সংঘটিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনও বহু আইএস বন্দী সেখানে রয়ে গেছে। সাবেক আইএস খিলাফত থেকে ৭০ হাজারেরও বেশি বন্দীকে ধরে সিরিয়ার এই এলাকায় বিভিন্ন শিবিরে রাখা হয়েছে। কুর্দীরা তাদের পাহারা দিচ্ছে। তবে তুর্কী হামলা শুরু হওয়ার পর অবস্থা এলোমেলা হয়ে গেছে। আইএস সদস্যরা সুযোগ পেলেই পালাচ্ছে এবং পুনর্গঠিত হচ্ছে। এরূপ চলতে থাকলে ওই অঞ্চলে আইএস একপর্যায়ে সিরীয় বাহিনীর প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। আইএসের যে খ- খ- অংশ ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে এখনও লঘু মাত্রায় বিদ্রোহী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারাও নতুন করে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। তবে তুরস্কের দিক থেকে এই হামলার যুক্তি হচ্ছে তুর্কী-সিরীয় সীমান্তে এমন এক বাফার অঞ্চল সৃষ্টি করা যেখান থেকে কুর্দী মিলিশিয়াদের হটিয়ে দেয়া হবে এবং তুরস্কে আশ্রয় নেয়া সিরীয় উদ্বাস্তুদের সেখানে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ওই অঞ্চলে সংঘাতে লিপ্ত শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে চলেছে এবং সংঘাত এক নতুন মাত্রা ও চরিত্র লাভ করতে যাচ্ছে। সোজা কথা সিরিয়া অঞ্চলে শান্তি এক দূর অস্ত্র হয়ে আছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×