ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেঁয়াজের সিন্ডিকেট প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে

প্রকাশিত: ০৩:০২, ৩ নভেম্বর ২০১৯

পেঁয়াজের সিন্ডিকেট প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে

অনলাইন ডেস্ক ॥ গত ১ জুলাই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মাত্র একদিনের (২ জুলাই) ব্যবধানে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি বেড়ে যায় ১৫ টাকা। এরপর থেকে নানা অজুহাতে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। বিক্রেতাদের অজুহাতের মধ্যে ছিলে আমদানি-খরচ বৃদ্ধি ও সরবরাহ কমে যাওয়া। গত চার মাসে মোট ২৪ বার পেঁয়াজের দাম ওঠা-নামা করেছে। পেঁয়াজের এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। তারা যে পরিমাণ অর্থ হাতিয়েছে, তা দিয়ে আরেকটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। আজ রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানিয়েছে কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটি নামে একটি সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, দেশের ১৮ কোটি ভোক্তা কিছু সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ১৩ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট শনাক্ত হয়েছে। চার মাস সময়ের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্তত পাঁচবার স্বীকার করেছেন যে, সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, তিনি এটা স্বীকার করলেও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যা ভোক্তাদের হতাশ, ব্যথিত ও ক্ষুদ্ধ করেছে। পলাশ মাহমুদ বলেন, চার মাসে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এসময়ের মধ্যে শুধু জুলাই মাসে সিন্ডিকেট ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আগস্টে ৪৯১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৮২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, অক্টোবরে ১৪০০ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। অর্থাৎ দিনে প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। গত চার মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০০ গুণ। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, এ সিন্ডিকেটের কারণে শুধু ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারে নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের বিষয়ে যে সুনাম তৈরি হয়েছে, এ সিন্ডিকেটের কারণে তা ম্লান হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসছ, যার ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ২৬ থেকে ৪২ টাকা, গড়ে ৩৪ টাকা। সে হিসাবে যে পরিমাণ বিদেশি পেঁয়াজ আসছে, তার বিক্রয় মূল্য ৫০ টাকার বেশি হওয়া অস্বাভাবিক। সম্প্রতি খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ক্ষেত্র বিশেষ সেটা ১৫০ টাকাও ছাড়িয়েছে কোথাও কোথাও। দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের এটাই সর্বোচ্চ দাম। এ কারণে নিত্যপণ্যটি এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় বাইরে চলে গেছে আর দরিদ্র মানুষের কাছে তা রীতিমতো দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এসময় সিন্ডিকেট থেকে ভোক্তাকে রক্ষা ও সরকারের সুনাম রক্ষায় চারটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মতো মূল্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা, দ্রুত সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করা, পেঁয়াজ ছাড়াও যেকোনো পণ্যে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হলে সরকার থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্য ঘোষণা করা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে অংশীজনদের নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরে একটি সেল গঠন ও সার্বক্ষণিক তদারকি করা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটির মিডিয়া সেলের প্রধান জয়কৃষ্ণ জয়, ঢাকা কালেকশন সেলের শরিফুল ইসলাম।
×