ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাগুরায় ইটভাটা স্থাপনে ৩ ফসলি জমি ও নদীতে প্রভাবশালীদের থাবা

প্রকাশিত: ০৭:২১, ২ নভেম্বর ২০১৯

মাগুরায় ইটভাটা স্থাপনে ৩ ফসলি জমি  ও নদীতে প্রভাবশালীদের থাবা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা ॥ মাগুরা জেলার ৪ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩ ফসলী জমি ও নদী ভরাট করে গড়ে উঠেছে অন্তত ৬০ টি ইটভাটা। এতে করে একদিকে কৃষি জমির পরিমান কমছে তেমনি পরিবেশ দুষনের শিকার হচ্ছে এলাকার মানুষ। অন্যদিকে ভেঙ্গে যাচ্ছে নদী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র মতে, মাগুরা সদর, মহম্মদপুর, শ্রীপুর ও শালিখা এ চার উপজেলায় ইট ভাটার সংখ্যা ৯০টি। এগুলোর মধ্যে অন্তত ৬০টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে তিন ফসলি জমি ও মধুমতি নদী দখল করে। সদর উপজেলার জগদল, লস্করপুর, চাদপুর, পারলা, আঠারোখাদা, কাশিনাথপুর, ছোটব্রিজ, ইটখোলা, আমুড়িয়া, ধলহারা, ইছাখাদা, মহম্মদপুরের তল্লাবাড়িয়া, ধোয়াইল,কানুটিয়া,শ্রীপুরের উপজেলা সদর, বাখেরা শালিখার আড়পাড়া,শতখালী,হরিশপুর,বুনাগাতিসহ বিভিন্ন মাঠে তিন ফসলি জমিতে অন্তত ৩০টি ইট ভাটা গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া,কুছুন্দি,পাতুড়িয়া এলাকার নদী দখল করে একই জায়গায় গড়ে উঠেছে অন্তত ৩০ টি ইটভাটা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব ইট ভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু ভাটাগুলোতে অবৈধভাবে ইট পোড়ানো বন্ধ হয় নি। ভাটা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি ভাটায় মৌসুমজুড়ে গড়ে ৫০ লাখ ইট পোড়ে। প্রতি ১ লাখ ইটে ৮০ টন থেকে ১০০ টন হিসাবে ৯০ টি ইটভাটায় যার জন্যে প্রয়োজন প্রায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানী কাঠের। টন প্রতি ২,৫০০ টাকা হিসাবে যার মুল্য অন্তত শত কোটি টাকার। যা সংগৃহিত হয় জেলার বিভিন্ন বন ও বাঁশ বাগান থেকে।ফসলী জমিতে নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে ওঠার বিষয়ে সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম, বাচ্চু মিয়া, গোলজার শেখ, মোহাম্মদ শেখসহ ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে জানান জানান, লস্করপুর মাঠে তাদের তিন ফসলি জমিতে ফাতেমা ব্রিকস নামে ইটভাটা করার জন্য ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে অনুমোদনের আবেদন করেছে সদরের ভিটাসাইর গ্রামের আওয়াল মোল্যা নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। অথচ তিন ফসলি জমির এ ফসলেই তাদের খাওয়া, লেখাপড়াসহ সাংসারিক সকল চাহিদা মেটায়। জোরপূর্বক নামমাত্র ইজারার মধ্যমে এসব জমি লিজ নিয়ে ইটভাটা করলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ দূষিত হবে। নদী দখল করে অবৈধ ইটভাটা গড়ে ওঠার বিষয়ে বাগবাড়িয়ার আবুল বরকতসহ অনেকে জানান, তাদের ঘনবসতিপুর্ন এলাকায় মধুমতি নদী দখল করে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে অন্তত ৩০ টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহর নদীর চর দখল করে এসব ভাটা গড়ে তুলেছেন। মাগুরা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, তিন ফসলি জমিতে কোন ইন্ডাস্ট্রি বা ইট ভাটা করা যাবে না। বিষয়টি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বরদের জানানো হয়েছে। তবু কেউ যদি এসব জমিতে ইটভাটা করে সেটি হবে আইনের পরিপন্থী’। মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন,‘ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন ফসলী জমিতে যাতে কোন ইটভাটা গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
×