ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্যের প্রয়োজন আছে : মেনন

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২ নভেম্বর ২০১৯

ঐক্যের প্রয়োজন আছে : মেনন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, অনেকে আমাকে বলে, মন্ত্রিত্ব পাইনি বলে ক্ষোভ থেকে কথা বলছি। কিন্তু, আমি বলতে চাই, ওয়ার্কার্স পার্টির সেই সাহস ছিল বলেই ২০১২ সালে মন্ত্রিত্বের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছি। এরপর যখন বিএনপি-জামায়াত জোটের তান্ডব শুরু হয়েছে, তখন রাজনৈতিক প্রয়োজনে ওয়ার্কার্স পার্টি মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিল। এটা ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, কারও একক সিদ্ধান্ত নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন ও মন্ত্রীত্ব নেয়ায় নিজ দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে থাকা মেনন দীর্ঘ সময় পর দলের এই অবস্থান স্পষ্ট করেন। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওয়ার্কার্স পার্টির ১০ম কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যের এখনো প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করে মেনন বলেন, ওয়ার্কার্স পাটি জানে কীভাবে রাজনীতি করতে হয়, কীভাবে দেশ এগিয়ে নিতে হয়। অনেক বন্ধু আমাদের ছেড়ে গেছেন। কেউ মতাদর্শের কথা বলে সরে গেছেন, কেউ সরে গেছেন এনজিওর ফান্ড রক্ষা করতে। আবার কেউ আমাদের নৌকায় তুলে দিয়ে এখন বলছেন, নৌকা মানতে চাই না। মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে যখন দেশে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটেছিল, সেই বিশেষ বাস্তবতায় স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির সঙ্গে পার্টির ঐক্য গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। সেই বাস্তবতা এখনো শেষ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য এই ঐক্যের এখনো প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, আজও কেউ কেউ সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আমি তাদের বলতে চাই, ওয়ার্কার্স পার্টি বাংলাদেশে একমাত্র প্রাসঙ্গিক দল। ওয়ার্কার্স পার্টির পর কোনো প্রাসঙ্গিক বামপন্থি দল বাংলাদেশে নেই। আজ আমি না থাকলে ওয়ার্কার্স পার্টির কমরেডরাই এই লড়াই এগিয়ে নেবেন ও বিজয় অর্জন করবেন। সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে অনেক খেতাব কপালে জুটেছে। কখনো সাম্প্রদায়িকতার, কখনো নাস্তিকের, কখনো খেতাব জুটেছে আমি হঠকারী, বিচ্ছিন্নতাবাদী। কিন্তু, তারপরেও আমি লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। এখনো দেশে যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে, আমি যেহেতু ঢাকা-৮ আসনের এমপি, সেই আসন জুড়ে যখন ক্যাসিনো নিয়ে তোলপাড়, সেই ক্যাসিনোকা-ের সঙ্গে আমাকে জুড়ে দিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। আমি বলে দিতে চাই, আমার জীবনে সততার পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমি সৎ ছিলাম, আছি। দেশ আজ উন্নত হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্য বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। দেশের দুই শতাংশ মানুষ মোট সম্পদের ৩৩ শতাংশ দখল করে রেখেছে। বাংলাদেশের প্রতি চারজনের একজন অতিদরিদ্র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অনেকে মনে করেন, ওয়ার্কার্স পার্টি রাজনীতি বোঝে না। কিন্তু, ওয়ার্কার্স পার্টি কোনো ছাতার তলে থেকে রাজনীতি করে না, কারো কাঁধে হাত রেখে রাজনীতি করে না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে। আমরা ২১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেছি। এই কর্মসূচি হচ্ছে শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচী। এই ২১ দফা নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। নীতির প্রশ্নে দলের একাংশের বর্জনের মধ্যে শুরু হল রাশেদ খান মেনন নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির চারদিনব্যাপী দশম কংগ্রেস। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী এই বাম দলের কংগ্রেসে পরবর্তী নীতি-কৌশল যেমন ঠিক হবে, তেমনি নতুন নেতৃত্বও গঠিত হবে। এই কংগ্রেসের আগেই দলটিতে আরেকদফা দেখা দিয়েছে ভাঙন। দল ছেড়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস। আদর্শচ্যুতির অভিযোগ তুলে কংগ্রেস বর্জন করে আলাদা দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন আরও ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের সঙ্গে আছেন আরো অন্তত ২০জন কেন্দ্রীয় নেতা। এই পরিস্থিতির মধ্যে কংগ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বাদশা বলেন, আমরা কারও ঘাড়ে হাত রেখে রাজনীতি করব না। কারও ছায়াতলে আমরা রাজনীতি করব না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজস্ব সংগ্রাম ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে রাজনীতি করব। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল যে ২৩ দফা দাবির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল, তা কতটা সফল হয়েছে তা পর্যালোচনার সময় এসে গেছে বলেও মন্তব্য করেন বাদশা। তিনি বলেন, দুঃশাসনে মানুষের অনাস্থায় সাম্প্রদায়িক শক্তি অজগরের মতো বিকশিত হয়েছে। দক্ষিণপন্থি শক্তি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠছে। আজকে আরব বিশ্ব বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নিতে নানা ষড়যন্ত্র করেছে। নিজেদের সা¤্রাজ্যবাদের স্বার্থে তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদদ দিচ্ছে। তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে লুটেরাদের হাতে জনগণ জিম্মি হয়ে গেছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে, দুর্নীতি বেড়েছে। এ ২১ দফা হবে বৈষম্যহীন, জনগণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আদর্শের লড়াই। বিকল্প শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। যারা ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে গেছেন তারা ‘আত্মপ্রবঞ্চনার রাজনীতি করছেন’ বলেও মন্তব্য করেন বাদশা। তারা সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষায় নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এবারের কংগ্রেসে ৫৮টি জেলা থেকে সাড়ে ৭০০ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন বলে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা জানান। ২০০৮ সালের ৭ অগাস্ট দলটির নবম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, নূর আহমেদ বকুল, সুশান্ত দাস, হাজেরা সুলতানা, মাহমুদুল হাসান মানিক, কামরুল আহসান, ইনামুল হক ইমরান, ড. আমিনুল ইসলাম গোলাপ, সংসদ সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ প্রমুখ।
×