ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিখ্যাতদের শেষ কথা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১ নভেম্বর ২০১৯

বিখ্যাতদের শেষ কথা

‘রেনেসাঁ মানব’খ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দ দ্য ভিঞ্চি। মোনালিসা, দ্য লাস্ট সাপার প্রভৃতি তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম। মৃত্যুর পূর্বে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি গ্রষ্টা এবং মানুষকে অসন্তুষ্ট করেছি। কারণ, আমার কাজ যতখানি চমৎকার হওয়া উচিত ছিল ততখানি হয়নি।’ চার্লি চ্যাপলিনকে কে না চেনে! পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেন্সার চ্যাপলিন জুনিয়র। তিনি ছিলেন একাধারে একজন অভিনেতা, পরিচালক ও সুরকার। চ্যাপলিনকে বড় পর্দার শ্রেষ্ঠ মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা বলা হয়। তার মৃত্যুশয্যায় একজন ধর্মগুরু যখন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার শেষে বলছিল, ‘সৃষ্টা তোমার আত্মাকে ক্ষমা করে দিক।’ তখন চ্যাপলিন বলেছিল, ‘কেন নয়? সবশেষে এটি তো তারই।’ কার্ল মার্কসকে যখন তার গৃহকর্মী জিজ্ঞেস করেছিল, তার শেষ কথা কী? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘শেষ বাক্য হলো বোকাদের জন্য, যারা যথেষ্ট বলতে পারেনি।’ জর্জ হ্যারিসনকে বাঙালীরা সবচেয়ে বেশি চেনে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজনের জন্য। হ্যারিসন ছিলেন জনপ্রিয় গায়ক ও গিটার বাদক। তিনি মৃত্যুর পূর্বে বলে যান, ‘একে অপরকে ভালবাস।’ আলোকময়তা বা এনলাইটেনমেন্টের দার্শনিকদের মধ্যে টমাস হবস ছিলেন অন্যতম। হবস তার মৃত্যুর পূর্বে বলেছিলেন, ‘আমি আমার সর্বশেষ যাত্রা সম্পন্ন করার দ্বারপ্রান্তে, আমি অন্ধকারের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছি।’ স্যার উইনস্টোন চার্চিল ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইংল্যান্ড এর প্রধানমন্ত্রী। দু’বারের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বযুদ্ধজয়ী রাষ্ট্রনায়ক হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুশয্যায় তার শেষ কথা ছিল, ‘আমি এসব কিছুর প্রতি বিরক্ত।’ অক্টোবর বিপ্লবের নেতা হিসেবে খ্যাত লেনিন। বিংশ শতকের প্রথমদিকে তিনি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাশিয়াকে সা¤্রাজ্যবাদী শাসনের কবল থেকে মুক্ত করেন। তার মৃত্যুর আগে একটি কুকুর তার দিকে একটি মৃত পাখি নিয়ে আসছিল। তিনি তখন কুকুরটিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘গুড ডগ।’ এটিই ছিল মৃত্যুর পূর্বে তার শেষ কথা। আমেরিকার স্বাধীনতায় অবদানের জন্য বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বিশেষ পরিচিত। ৮৪ বছর বয়সে ফ্রাঙ্কলিন যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিলেন তখন তার মেয়ে তাকে কিছুটা অবস্থান পরিবর্তন করে শোয়ার জন্য বললে তিনি উত্তরে বলেন, ‘মৃতুপথযাত্রী ব্যক্তির জন্য কোনকিছু করা সহজ নয়।’ সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল খুবই পরিচিত নাম। কারণ, তিনি বিখ্যাত গ্রন্থ শার্লক হোমস এর রচয়িতা। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মূহূর্তে তার স্ত্রীকে ডেকেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তুমি অনন্য।’ ভলতেয়ার ছিলেন এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকময়তার একজন দার্শনিক। তার মৃত্যুশয্যায় যখন ধর্মগুরু তাকে শয়তান পরিত্যাগ করার কথা বলে তখন তিনি বলেন, ‘এখন শত্রু তৈরি করার সময় নয়।’ নোবেলজয়ী ইংরেজ কবি টিএস এলিয়ট তার মৃত্যুর পূর্বে শেষবারের মতো ফিসফিসিয়ে বলেছিলেন, ‘ভ্যালেরি!’ ভ্যালেরি ছিল তার স্ত্রী এবং তিনি শেষবারের মতো তার স্ত্রীকে ডেকেছিলেন। শিল্প-সাহিত্যমনা মানুষের কাছে সালভাদর দালি পরিচিত নাম। তিনি ছিলেন একজন পরাবাস্তববাদী চিত্রশিল্পী। মৃত্যুর পূর্বে তার শেষ কথা ছিল, ‘আমার ঘড়িটি কোথায়?’ আমেরিকান কবি এমিলি ডিকিনসন তার শেষ বাক্যে বলেছিলেন, ‘কুয়াশা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাকে যেতে হবে।’ পদার্থবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, ‘আমি জানি না, গোটা পৃথিবী আমাকে কী মনে করবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, আমি একজন বালক, যে সাগর তীরে খেলা করে এবং তারপর সেখান থেকে নিজেকে ঘুরিয়ে সমুদ্রতীরে কোন মসৃণ নুড়ি কিংবা সাধারণের চেয়ে কিছুটা চমৎকার শিলা খোঁজায় লিপ্ত হয়েছি। কিন্তু সত্যের এক বিশাল সমুদ্র আমার কাছে অজানা রয়ে গেছে।’ ‘ওল্ড ম্যান এ্যান্ড সি’ এর লেখক আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও গল্পকার আর্নেস্ট হোমিংওয়ে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃত্যুর পূর্বের রাতে তিনি তার স্ত্রীকে শেষবারের মতো বলেছিলেন, ‘গুডবাই, আমার বিড়ালছানা!’ এটিই ছিল তার শেষ কথা। একদিন গণিতের সূত্র নিয়ে বাড়ির উঠোনে দাগ কেটে হিসেব কষছিলেন গ্রিক প-িত আর্কিমিডিস। সে সময়ে রোমান সৈন্যরা গ্রিস আক্রমণ করেছিল। রোমানরা গ্রিস জিতে নেয়ার পর রোমান সেনাপতি মার্সেলাস চাইলেন মহাজ্ঞানী আর্কিমিডিসের সঙ্গে দেখা করতে। সৈন্য পাঠিয়ে দিলেন আর্কিমিডিসকে খুঁজে সসম্মানে তার কাছে নিয়ে আসতে। সৈন্যরা আর্কিমিডিসের কাছে এলো। কিন্তু আর্কিমিডিসের সেদিকে খেয়াল নেই। তিনি তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত। সৈন্যরা তাকে ডাকতেই তিনি বললেন, ‘আমার নকশা থেকে দূরে সরে দাঁড়াও।’ পরাজিত নাগরিকের এমন কথা শুনে সৈন্যটি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারল না। সৈন্যের তলোয়ারের এক কোপে দ্বিখ-িত হলো মহান এই গণিতবিদের শির। আমেরিকান নারী অধিকারকর্মী ও সংগঠক লুসি স্টোন ছিলেন ম্যাসাচুসেটসের প্রথম কলেজ ডিগ্রীধারী নারী। তিনি নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি বলেছিলেন, ‘মেক দ্য ওয়ার্ল্ড বেটার।’ মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সম্রাট আওরঙ্গজেব মৃত্যুর পূর্বে তার কৃতকর্মের জন্য খুব অনুতপ্ত ছিলেন। পুত্রের কাছে লেখা তার সর্বশেষ চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার জীবনে অনেক পাপ করেছি। জানি না, কত শাস্তি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’ বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর সময় তার শিষ্যরা তার পাশে ছিল। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে জীবনের শেষ কথাগুলো বলে যান। ‘জন্ম ও মৃত্যুর কারণ এক ও অভিন্ন। যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু হবেই। একমাত্র সত্যই চিরস্থায়ী। তোমরা সত্যের সাধনা করে সত্যের পথে এগিয়ে চলো।’
×