ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হচ্ছে-----বাণিজ্যমন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হচ্ছে-----বাণিজ্যমন্ত্রণালয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা হচ্ছে। এছাড়া বড় লটে জাহাজভর্তি করে আনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজ আসলে আগামী দু’একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। এছাড়া সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি খোলা ট্রাকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে শীঘ্রই পেঁঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাই এই পণ্যটি নিয়ে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। তবে এখনও বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। রাজধানীর পাড়া মহল্লায় জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। তবে বড় বাজারগুলোতে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই পণ্যটি। রাজধানীর কোথাও পেঁয়াজের দাম কমার কোন খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ভোক্তাদের পেঁয়াজ নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করার দাবি করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো। এদিকে, পেঁয়াজের দাম শীঘ্রই কমে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। দাম শিগগিরই কমে যাবে, নতুন আমদানির জন্য এলসি খোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের সমস্যা হচ্ছে কোনো কিছুর দাম বাড়ে তখন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। আশা করি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে। প্রসঙ্গত, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের প্রধান উৎস ভারত সরকার নিজেদের প্রয়োজনে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এই পণ্যটি রফতানি বন্ধ করে দেয়। এর আগে প্রতিটন পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিন দেশে ৬-৭ হাজার মে.টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার বড় অংশ দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ করা হয়। আর পেঁয়াজ আমদানি করা হয় শুধুমাত্র ভারত থেকে। তবে এবার ভারত রফতানি বন্ধ করলে মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ককে বিকল্প বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। এখন মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। তবে এই পেঁয়াজে বাজারের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। ফলে দফায় দফায় বাড়ছে এই পণ্যটির দাম। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন যে, কমে যাবে শিগগিরই। এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেঁয়াজের দাম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দু’একদিনের মধ্যে বড় আমদানি চালান দেশে পৌঁছালে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এতে বলা হয়, বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে, প্রতিদিন আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে। পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। দাম কম ও সহজ পরিবহনের কারণে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রফতানির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রতিমেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়। তবে পেঁয়াজের দাম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দু’একদিনের মধ্যে বড় আমদানি চালান দেশে পৌঁছালে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি (আমদানি ঋণপত্র) এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করছে। পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বাণিজ্যমন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেকবার সভা করেছে। নিয়মিতভাবে আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো এবং নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে। এরপরও কোনো ব্যবসায়ী অবৈধ পেঁয়াজ মজুত, কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা, স্বাভাবিক সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশের বেশ কয়েকটি বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিসর ও তুরষ্ক থেকে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে। দু’একদিনের মধ্যে এ সব পেঁয়াজের বড় ধরনের চালান দেশে পৌঁছালে দ্রুত দাম কমে আসবে। এছাড়া নবেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের গৃহিত পদক্ষেপগুলো হলো-আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সে মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানি করা পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রণায় টিসিবি’র মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বাপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রয় জোরদার করা হয়েছে। ৩৫টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিকেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ শহরের গুরুত্বাপূর্ণ স্থানে বিক্রয় চলছে। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্য দামে পেঁয়াজ ক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। পেঁয়াজ দ্রুত পরিবহন নির্বিঘœ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের ১০জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের চারটি টিম প্রতিদিন ঢাকা শহরের বাজারগুলো মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে।
×