ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যার রায়ে পুলিশ সদস্যদের ছাড় দেয়া হয়েছে : ফখরুল

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

 নুসরাত হত্যার রায়ে পুলিশ সদস্যদের ছাড় দেয়া হয়েছে : ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০ দিন বিদেশে অবস্থানের পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনেসের একটি ফ্লাইটে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ঢাকায় পৌছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বহুল আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যার বিচারের রায়ে পুলিশ সদস্যদের ছাড় দেয়া হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, নুসরাত হত্যাকান্ডের বিচারের রায়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত আমলে নেয়নি। তিনি বলেন, এখানেই প্রমাণিত হচ্ছে সরকার পুলিশের ওপর নির্ভরশীল। সেজন্যই সরকার তাদের অভিযোগ থেকে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ভোলার ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক। একেবারেই আমি বলব যে, এ ধরনের ঘটনাগুলোকে আমার কেনো যেন সন্দেহ হয়, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো মহল থেকে এই ধরনের ঘটনাগুলোকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। যারা এই ধরনের লেখা লেখেন আমাদের রসুল(সা.) সম্পর্কে, ধর্ম সম্পর্কে, সাধারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেন এটা নিন্দনীয়, একই সঙ্গে পুলিশ যে গুলি করেছে সেটা আরো বেশি নিন্দনীয়। আমরা দেখলাম ভোলায় কোনো রকমের বায়োলেন্স ছিলো না, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর পুলিশ আক্রমন করেছে। এতে প্রমাণিত হয় ভিন্নমত প্রকাশে কোনো স্বাধীনতা নেই। সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এ সরকার একটার পর একটা সমস্যা তৈরি করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। তাহলে দায়িত্বশীলতা থাকতো। এখন সরকার একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি এ সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নতুন নির্বাচন করে চলমান সকল সংঙ্কটেরর সমাধান করা। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ‘৩০ ডিসেম্বর মানুষ ভোট দিতে পারেনি’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ’মেনন ভাইকে ধন্যবাদ দেই, এতোদিন পরে তিনি সত্য কথা বললেন।’ এরপর সরকারের উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার পরিচালিত শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে ফখরুল বলেন, এই অভিযান সম্পূর্ণভাবে আইওয়াশ। জোর করে ক্ষমতায় থাকা সরকারের লোকেরাই সকল অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। কারা কারা এসবের সঙ্গে জড়িত সরকার জানে। তবে এখন শুদ্ধি অভিযানের নামে যেটা হচ্ছে সেটা লোক দেখানো। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ২০ দিন দেশে না থাকায় আমি অনেক ঘটনা মিস করেছি। তবে আমি ট্র্যাকে ছিলাম, খোঁজ-খবর রেখেছি, সবকিছু অবজারভ করেছি। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার যে ঘটনা এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক, এটা ক্ষমাহীন একটা অপরাধ। এই অপরাধের পেছনে আমি সম্পূর্ণভাবে সরকারকে দায়ী করবো। ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয়ে এ ধরণের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হচ্ছে। ছাত্র লীগ বা যুব লীগ গত কয়েক বছর ধরে একেবারেই লাগামীহীন হয়ে পড়ে। ফখরুল বলেন, যে বিষয়টা নিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে-এটা কোনো মতেই কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একজন সাধারণ ছাত্র যে, তার দেশের স্বার্থ সম্পর্কে একটা মতামত দিতে পারবেন না সেটা কখনো চিন্তা করা যায় না। আমরা মনে করি ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে চুক্তিগুলো করেছেন, যেসব এমওইউ সই করেছেন সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। যেই কথাগুলো বলতে গিয়ে একজন মেধাবী ছাত্র প্রাণ হারাবে এটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। আমি তো মনে করি যে, এজন্যই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। অপর প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বিদেশে গিয়েছিলাম সিঙ্গাপুরে আমার চিকিৎসার কিছু ফলোআপ ছিলো। ওখানে দুইদিন থাকার পর আমি অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েছি। আপানারা সবাই জানেন, সেখানে আমার বড় মেয়েসামারুহ মির্জা থাকে। আমি দলের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছিলাম যে, কিছুদিন একটু ওদের সঙ্গে কাটিয়ে আসবো। অস্ট্রেলিয়াতে আবার আমার এশিয়া প্যাসিফিক ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের একটা কনফারেন্স ছিলো। আর অস্ট্রেলিয়ার যে রুলিং পার্টি- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি তারা আমাকে দাওয়াত করেছিলো তাদের ফেডারেল কনফারেন্সে। এটা শেষ করে আমি দেশ ফিরেছি। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টায় স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে দেশে ফিরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, এসএম জাহাঙ্গীর, শায়রুল কবির খান প্রমুখ। ৩ অক্টোবর মধ্যরাতে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন। সিঙ্গাপুর পৌছে সেখানকার র্যাফেলস হসপিটালে তিনি চিকিৎসা নেন। সেখানে তার ঘাড়ের ‘ইন্টারন্যাশ ক্যারোটিভ আর্টারি’তে যে ব্লক রয়েছে তার পরীক্ষা করতে এনজিও গ্রাম করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে ঘাড়ের ‘ইন্টারন্যাল ক্যারোটিভ আর্টারি’র চিকিৎসা নিতে তিনি সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। সর্বশেষ এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান তিনি। ৩ অক্টোবর সিঙ্গাপুর গিয়ে চিকিৎসা শেষে সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াতে যান বিএনপি মহাসচিব। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি মেয়ের বাসায় অবস্থান করেন। এ ছাড়া সেখানে তিনি এশিয়া প্যাসিফিক ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (এপিডিইউ) বৈঠকে যোগ দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান।
×