ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে ফ্ল্যাটের কাগজপত্র পেলেন শিলা-শাকিল-মাবিয়া

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

     অবশেষে ফ্ল্যাটের কাগজপত্র পেলেন শিলা-শাকিল-মাবিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘ক্রীড়াপ্রেমী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ আমাদেরকে গণভবনে নিজেই ডেকে নিলেন এবং আমাদের খোঁজ-খবর নিলেন। আমাদেরকে আমাদের ফ্লাটের কাগজ হস্তান্তর করলেন। আমাদের সকল চাওয়া-পাওয়া পূরণ করলেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো। ধন্যবাদ জানাই আমাদের ক্রীড়াপ্রেমী মমতাময়ী মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। ধন্যবাদ জানাই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ভাইয়াকে। ধন্যবাদ জানাই গণপূর্তমন্ত্রী মহোদয় স্যার ও সচিব স্যারকে।’ এভাবেই নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন জাতীয় শূটার শাকিল আহমেদ। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ডেকেছিলেন তিন জাতীয় ক্রীড়াবিদ মাহফুজা খাতুন শিলা, মাবিয়া আক্তার সীমান্ত এবং শাকিল আহমেদকে। সীমান্ত উত্তর কোরিয়ায় খেলতে যাবার কারণে সীমান্তর পরিবর্তে গণভবনে গিয়েছিলেন তার বাবা হারুনুর রশিদ। তিন বছর আগে এসএ গেমসে এই তিন ক্রীড়াবিদ দেশের পক্ষে স্বর্ণপদক অর্জন করার পুরস্কার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই তিন ক্রীড়াবিদকে মিরপুর-১৫ নম্বরে অবস্থিত তৈরি হওয়া ফ্ল্যাটের কাগজপত্র হস্তান্তর করেন। যদিও এই প্রক্রিয়াটি গত তিন বছর ধরেই চলে আসছিল। সেটিরই চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন হলো বৃহস্পতিবার। ২০১৬ সাল। ভারতের গুয়াহাটি। দ্বাদশ সাউথ এশিয়ান গেমসের (এসএ গেমস) আসর। গলায় স্বর্ণের পদক ঝুলিয়ে জাতীয় সঙ্গীত শুনে পতাকার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন ভারোত্তোলোক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। আসামের রাজধানীতে সুইমিংপুলে জোড়া স্বর্ণ জিতে দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন জলকন্যা মাহফুজা খাতুন শিলা। তরুণ শূটার শাকিল আহমেদ পিস্তল ইভেন্টে স্বর্ণ জিতে দেশের মুখ করেছিলেন উজ্জ্বল। স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদদের জন্য রাজউক উত্তরায় ফ্ল্যাট তৈরি করলেও টাকার জন্য তা এতদিন বুঝে পাননি এই তিন ক্রীড়াবিদ। এ নিয়ে বিস্তর ছোটাছুটি করেও নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার চক্করে পড়েছিলেন তারা। অবশেষে বিষয়টি দেরিতে প্রধানমন্ত্রীর কর্ণগোচর হলে তিনি দ্রুত মাবিয়াদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে উত্তরার রাজউকের নয়, এই ক্রীড়াবিদকে ফ্ল্যাট দেয়া হয়েছে মিরপুর-১৫ নম্বরে। এগুলো গণপূর্তমন্ত্রণালয়ের ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটটি মোট ১৪তলা বিশিষ্ট। প্রত্যেক ক্রীড়াবিদই পাচ্ছেন ১৫০০ স্কয়ার ফিট করে। মাবিয়া থাকবেন তিন তলায়, শিলা আটতলায় এবং শাকিল থাকবেন ১১ তলায়। শিলার বর্তমান নিবাস অবশ্য মিরপুরেই। মাবিয়া আছেন খিলগাঁওয়ে, আর শাকিল গুলশানে। এই তিন ক্রীড়াবিদই এর আগে আবেদন করেছিলেন তাদের ফ্ল্যাট যেন উত্তরার পরিবর্তে অন্য কোথাও দেয়া হয়। তাদের সেই দাবি মেনেই মিরপুরে ফ্ল্যাট দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ফ্ল্যাটের কাগজপত্র পেয়ে ভীষণ খুশি গত এসএ গেমসে দুটি স্বর্ণজয়ী সাঁতারু শিলা। জনকণ্ঠকে তিনি জানান, ‘আজ আমাদের অত্যন্ত আনন্দের দিন। একটা স্বপ্নপূরণ হলো। অবশেষে আমরা পুরস্কারের ফ্ল্যাট বুঝে পেলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবকিছু দিয়েছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হবে এবং ডিসেম্বরে ফ্ল্যাটে উঠতে পারবো। মিরপুরে ফ্ল্যাট পাওয়ায় অনেক সুবিধা হবে আমাদের।’ ২০১৬ সালেই প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে এইা তিন ক্রীড়াবিদকে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করে বলেছিলেন, ‘যতদিন তাদের ফ্ল্যাট রেডি না হবে, ততদিন তারা যে বাসায় থাকেন তার ভাড়া দেবে সরকার।’ যে কারণে তারা নতুন বাসায় উঠেছিলেন। শিলা ও মাবিয়ার বাসা ভাড়া মাসে ২২ হাজার টাকা এবং শাকিলের ২৪ হাজার টাকা। ভাড়া দেয়া শুরুও হয়েছিল, কিন্তু ৬ মাস দেয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। নতুন বাসায় উঠে বিপদেও পড়ে যান তারা! এভাবে ৩০ মাস সরকার বাসা ভাড়া না দেয়ায় বাধ্য হয়েই এই ভাড়া তাদেরকেই পরিশোধ করতে হয়েছে! বিষয়টি দেরিতে হলেও কানে যায় প্রধানমন্ত্রীর। দেরিতে ফ্ল্যাট পাওয়া এবং ভাড়া বাকি পড়ায় তিনি নাখোশ হন। তিনি ক্রীড়াবিদদের অনুযোগ করেন, বিষয়টা তাকে আগে জানানো হয়নি কেন? তাহলে তো তিনি আগেই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। তখন তো এত দেরি আর হতো না। আর বাকি ৩০ মাসের বাসা ভাড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই টাকাও ক্রীড়াবিদদের শিগগীরই দিয়ে দেয়া হবে। এসএ গেমস থেকে সাফল্য নিয়ে দেশে ফেরার পর ২০১৭ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় ক্রীড়া দিবসে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ফ্ল্যাটভাড়ার চেক গ্রহণ করেছিলেন শিলা, সীমান্ত এবং শাকিল। সরকারীভাবে নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ভাড়া ফ্ল্যাটে উঠিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এর সপ্তাহখানেক পরেই প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবনে তৎকালীন গত সাড়ে সাত মাসে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সফল হওয়া ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শাকিল-শিলা-মাবিয়াদের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দিযেছিলেন।
×