ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় ইসকন মন্দিরে জঙ্গী হামলা হতে পারে

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

ঢাকায় ইসকন মন্দিরে জঙ্গী হামলা হতে পারে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে ‘লোন উল্ফ’ কায়দায় ইসকনের যে কোন মন্দিরে বড়সড়ো হামলা চালাতে পারে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মদদে চলা নব্য জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর মতো সংগঠন। গত কয়েক মাসে জোগাড় করা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই আশঙ্কা ভারতের প্রথম সারির একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। খবর আনন্দবাজারের। লোন উল্ফ অর্থাৎ সংগঠিত ভাবে নয়, কোন সংগঠনের সরাসরি নির্দেশ ছাড়াই মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যক্তিবিশেষ এই হামলা চালাতে পারে। এর আগে লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্কের মতো জায়গায় এ রকমই কয়েকটি জিহাদী হামলা হয়। হামলা পরবর্তী সময়ে আইএস তার দায় নিয়েছে বটে, কিন্তু হামলাকারীর সঙ্গে তাদের সাংগঠনিক কোন সরাসরি যোগাযোগ পাওয়া যায়নি। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক মাস ধরে আইএসের মতো সংগঠনের বিভিন্ন প্রচার শাখা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস (ইসকন)-কে ‘হিন্দুত্বের প্রতীক’ হিসাবে প্রচার শুরু করেছে। সম্প্রতি ‘উম্মাহ নিউজ’ নামে আইএসের একটি প্রচার চ্যানেলেও ইসকনকে ‘হিন্দুত্বের প্রতীক’ হিসাবে তুলে ধরে আক্রমণ করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, আইএস মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর যে সব নথি তারা পেয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট ওই সংগঠনের ওপর হামলার ছক কষা হয়েছে। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ‘সামগ্রিকভাবে ইসকন ওদের টার্গেট। এখনও পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন তথ্য যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা থেকে আমাদের ধারণা, বাংলাদেশে ইসকনের কোন মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’ অন্য এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা স্বীকার করেন, এখনও পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন তথ্য সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই কর্মকর্তার ব্যাখ্যা, ভারত এবং বাংলাদেশে জিহাদীরা ক্রমাগত কোণঠাসা হচ্ছে। অন্য দিকে, ইরাক এবং সিরিয়াতেও একের পর এক ঘাঁটি হারিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আইএসের। তিনি বলেন, ‘নব্য জেএমবিকে সামনে রেখে বাংলাদেশে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইএস। কিন্তু ঢাকা হোলি আর্টিজান কাফে এ্যাটাক ছাড়া বড় কোন হামলায় সাফল্য পায়নি নব্য জেএমবি। উল্টো গত দু’বছরে তাদের সংগঠন ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে, লাগাতার পুলিশী অভিযানে।’ কেন্দ্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জেএমবি বা নব্য জেএমবির মতো সংগঠন পশ্চিম এশিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা টাকা সাহায্য পায় জিহাদী কার্যকলাপ চালানোর জন্য। কিন্তু সেই তহবিলের জোগান নির্ভর করে সংগঠনের সাফল্যের ওপর। তাই এই মুহূর্তে বড় ধরনের একটি হামলা চালিয়ে শিরোনামে আসতে মরিয়া বাংলাদেশের এই জঙ্গি গোষ্ঠী।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সারা বিশ্বে এর শাখা ছড়িয়ে রয়েছে। প্রচুর বিদেশী ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে হামলা চালালে আন্তর্জাতিক স্তরে উঠে আসবে হামলাকারী সংগঠনের নাম।’ গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জিহাদী কার্যকলাপকে সমর্থন করে এমন একাধিক ধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে নিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রচার চালাচ্ছে যাতে হামলার পটভূমি তৈরি করা সম্ভব হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, যে পদ্ধতিতে ওই জঙ্গী সংগঠনগুলো এগোচ্ছে, তাতে ভারতে ইসকনের কোন মন্দিরে হামলা চালানো কঠিন। বরং অনেক সহজ বাংলাদেশে আঘাত হানা। ইসকনের অন্যতম মুখপত্র রাধারমণ দাস বলেন, ‘একটা আশঙ্কা আমাদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে।’ তিনি জানান, বাংলাদেশে তাদের ১৯টি মন্দির রয়েছে। রাধারমণের কথায়, ‘গত কয়েক মাস ধরে আমরাও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।’ ইসকনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় তাদের সংগঠন প্রত্যন্ত গ্রামে ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিল সরবরাহ করে। ফলে তাদের সদস্যদের প্রত্যন্ত গ্রামেও নিয়মিত যাতায়াত। সে বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না কিছু জিহাদী সংগঠন। রাধারমণ দাসের দাবি, তারা ইতোমধ্যেই নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় দূতাবাসকেও জানিয়েছেন। ভারতীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সিলেটে ইসকনের একটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তবে তার সঙ্গে সরাসরি কোনও জঙ্গীগোষ্ঠীর যোগ ছিল না। গোয়েন্দাদের দাবি, লোন উল্ফ অর্থাৎ স্থানীয় কোন ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তিকে মতাদর্শগতভাবে হামলায় মদদ দিয়ে এই ‘অপারেশন’ চালানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। সংগঠিতভাবে করলে হামলার আগেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি অংশ জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাকেও গোটা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছে।
×