ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিসিকে হারিয়ে টিকে থাকল মোহনবাগান

দাপুটে জয়ে সেমিতে এক পা চট্টগ্রাম আবাহনীর

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

দাপুটে জয়ে সেমিতে এক পা চট্টগ্রাম আবাহনীর

জাহিদুল আলম জয়, চট্টগ্রাম থেকে ॥ লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্ট ক্লাবের বেশিরভাগ ফুটবলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেই তরুণদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে অন্তত প্রথমার্ধে চমকে গিয়েছিল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে দ্বিতীয়ার্ধের দুরন্ত ফুটবলে সব শঙ্কা কেটে যায়। তাতেই শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে টুর্নামেন্টের স্বাগতিকরা। বধুবার রাতে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে দারুণ উপভোগ্য ম্যাচে ইয়ং এলিফ্যান্টকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে বন্দরনগরীর দল। দারুণ জয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে একটি করে গোল করেন নাইজিরিয়ান মিডফিল্ডার চিনেদি ম্যাথুউ, মন্টেনিগ্রোর ফরোয়ার্ড রটকোভিচ লুকা, বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া ও মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়ের। অন্যদিকে এলিফ্যান্টের হয়ে একটি করে গোল করেন ডিফেন্ডার আফিজাই থানাকান্টি ও ফরোয়ার্ড সমজে কিওহানাম। টানা দুই ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে কোচ মারুফুল হকের দল। দুই ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট ঝুলিতে জমা হয়েছে আবাহনীর। আসলে জামাল, ইয়াসিন, রহমতদের সেমিফাইনালের হিসেবটা এখন শুধুই অঙ্কে সীমাবদ্ধ। তাদের এই মঞ্চে খেলাটা নিশ্চিতই বলা যায়। অন্যদিকে টানা দুই ম্যাচ হেরে সবার আগে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে মালদ্বীপের ক্লাব টিসি স্পোর্টস ক্লাবের। গতকাল বিকেলে দিনের প্রথম ম্যাচে কলকাতার মোহনবাগান এ্যাথলেটিক ক্লাবের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে দ্বীপদেশের ক্লাবটি। টিসির বিদায়ঘণ্টা বাজলেও এই জয়ে টুর্নামেন্টে টিকে রইল ১৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহনবাগান। এমএ আজিজের সবুজ চত্বরে ম্যাচের শুরু থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় মিনিটেই অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হয় দলটি। ডি বক্সে ফরোয়ার্ড রহমাত মিয়ার ক্রস থেকে মিডফিল্ডার আরিফুল ইসলামের শট এলিফ্যান্টস গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন। নবম মিনিটে কাক্সিক্ষত গোল করে এগিয়ে যায় আবাহনী। সংঘবদ্ধ আক্রমণে বামপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন ফরোয়ার্ড রটকোভিচ লুকা। এরপর সঙ্গে লেগে থাকা একজনকে ডজ দিয়ে বল বাড়ান গোলমুখে। সেখানে ইয়ংয়ের চারজন ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন প্রথম ম্যাচে জোড়া গোলদাতা নাইজিরিয়ান মিডফিল্ডার চিনেদি ম্যাথুউ (১-০)। দশম মিনিটে দারুণ সুযোগ হাতছাড়া হয় কোচ সালভারাজের দলের। এ সময় ফরোয়ার্ড বুনপাচান বুনকংয়ের জোরালো শট আবাহনীর পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তবে সমতা ফেরাতে খুব বেশি সময় নেয়নি অতিথিরা। ১৪ মিনিটে অসাধারণ গোলে ম্যাচে ফেরে লাওসের ক্লাব। এ সময় প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ফ্রিকিক পায় তারুণ্যের শক্তি ইয়ং। বুলেট গতির চোখ ধাঁধানো ফ্রিকিকে চট্টগ্রাম আবাহনীর জাল কাঁপিয়ে দেন ডিফেন্ডার আফিজাই থানাকান্টি (১-১)। শট এতটাই তীব্র ছিল যে আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল নিজের জায়গা থেকে নড়ারই সুযোগ পাননি। আফিজাইয়ের অসাধারণ গোলটি মাঠে উপস্থিত দর্শকদের সাবেক ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার রবার্টো কার্লোসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। স্বর্ণালি ক্যারিয়ারে তারকা এই লেফটব্যাক এমন চোখ ধাঁধানো গোল করতেন হরহামেশাই। ২৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার নেয়া ফ্রিকিক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ইয়ং গোলরক্ষক সোলাসাক থিলাভঙ। ৩৩ মিনিটে রক্ষণভাগের অমার্জনীয় ভুলে আবারও গোল হজম করে আবাহনী। নিজেদের ডি বক্সে ডিফেন্ডার ইকবল জন বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন। সেই সুযোগে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্লেসিং শটে গোল করেন ইয়ংয়ের প্রথম ম্যাচের জোড়া গোলদাতা ফরোয়ার্ড সমজে কিওহানাম (২-১)। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আরও কয়েকবার স্বাগতিক ডিফেন্সে কাঁপন ধরিয়ে দেন ইয়ংয়ের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্ররা। বিরতির পর শুরু থেকেই গোল পরিশোধের জন্য একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে স্বাগতিকরা। কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করার পর অবশেষে ৫৪ মিনিটে সমতা ফেরায় বন্দরনগরীর দলটি। ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাতের ক্রসে দারুণ ফিনিশিংয়ে এ্যালিফেন্টের জাল কাঁপান মন্টেনিগ্রোর ফরোয়ার্ড রটকোভিচ লুকা (২-২)। এরপর ৭২ মিনিটে অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। এ সময় এলিফ্যান্টের সীমানার বামপ্রান্ত থেকে ডি বক্সের মধ্যে লম্বা থ্রো-ইন করেন রহমত মিয়া। বল ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন সালভারেজের শিষ্যরা। সেই সুযোগে ডি বক্সের মাথা থেকে বাঁ পায়ের অসাধারণ প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক (৩-২)। দুই মিনিট পর নাইজিরিয়ান চিনেদি ম্যাথুউ ফাঁকা পোস্টে গোল করতে ব্যর্থ হন। ৭৯ মিনিটে জয় নিশ্চিত করা গোল আদায় করে নেয় স্বাগতিকরা। এবার জামাল ভুঁইয়ার অসাধারণ বাঁকানো কর্নার কিকে হেডে গোল করেন মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়ের (৪-২)। শেষ পর্যন্ত এই ফলাফলেই শেষ হয় খেলা।
×